৩ মে ২০২৩, বুধবার, ৯:৫৫

চাপে পড়ে যাচ্ছে রিজার্ভ

-এক বছরে কমেছে ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার

বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমে যাওয়ার প্রবণতা ফেরানো যাচ্ছে না। প্রতি মাসেই কমে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গতকাল ৩০ এপ্রিল শেষে রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে তা ছিল ৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে রিজার্ভ কমেছে এক হাজার ৩০০ কোটি ডলার, যা শতকরা প্রায় ৩০ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। এতে রিজার্ভ আরো কমে ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে যাবে। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী তা নেমে যাবে ২২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। যদিও আইএমএফের ঋণের কিস্তি ছাড় পাওয়ার শর্ত হিসেবে রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলারের ওপরে থাকতে হবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার চাপ আরো বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পেতে হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রাখতে হবে। কিন্তু আকুর দায় পরিশোধ করার পর তা ২২ বিলিয়নের ঘরে চলে যাবে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠকে আইএমএফের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী রিজার্ভ গণনা পদ্ধতি জুন মাসের পর থেকে করা হবে বলে বলা হয়েছে। আর আইএমএফ থেকে বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী রিজার্ভ গণনা করতে হবে। যেটুকু ইতোমধ্যে ব্যবহার হয়েছে তা রিজার্ভের গণনায় আনা যাবে না। প্রসঙ্গত, রফতানি উন্নয়ন তহবিল, বিমানের ঋণ, পায়রা বন্দরসহ বেশ কিছু খাতে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়া হয়েছে। আইএমএফ বলছে এ অর্থ রিজার্ভ থেকে বাদ দিতে হবে। আকুর দায় পরিশোধের পর গ্রস রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে যাবে। আর আইএমএফের হিসাব আমলে নিলে গ্রস থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে তা ২২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমদানি ব্যয় কমানোর জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এতে অর্থবছরের প্রথম আট মাসে আমদানি প্রবৃদ্ধি কমে নেমেছে ঋণাত্মক প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশ, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ৫০ শতাংশ। এ হিসাবে এক বছরে আমদানি কমেছে ৬০ শতাংশ। কিন্তু এর পরেও রিজার্ভ কমে যাওয়ার ধারাবাহিকতা ঠেকানো যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত বছরের এপ্রিলে রেমিট্যান্স ২ বিলিয়ন ডলারের ওপরে এসেছিল। কিন্তু এ বছর ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত তা দেড় বিলিয়নও অতিক্রম করতে পারেনি। সাধারণত ঈদের মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে থাকে। কিন্তু এ বছর তা না বেড়ে বরং কমে গেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিদেশে অবস্থানরত শ্রমিকের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে। কিন্তু সেভাবে আয় বাড়েনি। এতে কমে গেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। তবে হুন্ডি তৎপরতা বেড়ে গেছে কি না সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে খতিয়ে দেখতে হবে। আমদানি ব্যয় কমলেও রেমিট্যান্স প্রবাহ না বাড়ায় এর সুফল মিলছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এ দিকে ডলার সঙ্কটের কারণে বেসরকারি ব্যাংকগুলো এলসি খোলার হার কমে দিয়ে তারা সমন্বয় করছে। কিন্তু সরকারি কেনাকাটার জন্য সরকারি ব্যাংকগুলোর যে পরিমাণ এলসি খুলছে ওই পরিমাণ রেমিট্যান্স আহরণ করতে পারছে না। বাধ্য হেয় তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হাত পাতছে। গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারি ব্যাংকগুলো ডলার কিনেছে ১১ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। আর এ ডলার বিক্রি করা হয়েছে রিজার্ভ থেকে। সব মিলেই রিজার্ভ কমে যাওয়ার প্রবণতা থামছে না।
এ দিকে ডলারের দামও বেড়ে যাচ্ছে। গতকাল আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম ছিল ১০৭ টাকা; যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৮৬ টাকা। এক বছরে ডলারের মূল্য বেড়ে গেছে প্রায় সাড়ে ২৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নিচে নেমে গেছে; যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪৪ বিলিয়ন ডলার। এক বছরে রিজার্ভ কমে গেছে ১৩ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৩০ শতাংশ। কিন্তু এ রিজার্ভ চলতি সপ্তাহেই আরো কমে যাবে বলে জানা গেছে। কারণ চলতি সপ্তাহে আকুর দায় প্রায় ১২০ কোটি ডলার বা ১.২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। এতে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারেরও নিচে নেমে যাবে। আর আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী তা ২২ বিলিয়ন ডলারের ঘরের নিচে নেমে যাবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে যাবে। কারণ আইএমএফ বলছে রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলারের উপরে থাকতে হবে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, আমদানি ব্যয় কমে এলেও আগের খোলা এলসির বকেয়া বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে এটি অব্যাহত থাকলে সামনে রিজার্ভের ওপর চাপ আরো বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/744696