৩০ এপ্রিল ২০২৩, রবিবার, ১২:০০

চিনির বাজারে অস্থিরতা কাটছে না

চিনির বাজারে অস্থিরতা কাটছেই না। গত সাত মাসে সরকার পাঁচবার চিনির দাম বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু কোনোবারই নির্ধারিত সেই দামে চিনি বিক্রি করা হয়নি। সর্বশেষ ৬ এপ্রিল সরকার খোলা চিনির কেজি খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ দাম বেঁধে দেয় ১০৪ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১০৯ টাকা।

প্যাকেটজাত চিনি বাজারে তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ২১ থেকে ২৬ টাকা বেশি দামে ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে খোলা চিনি। চিনি ব্যবহার করা হয়, এমন খাবারের দামও বাড়ছে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়তে থাকায় সংকট কমার সম্ভাবনাও দেখছেন না ব্যবসায়ীরা।

চিনি সরবরাহকারী কম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববাজারে চিনির অতি দামের কারণে অনেকে আমদানি বন্ধ রেখেছে। বিশ্ববাজারে এখন চিনি বিক্রি করা হচ্ছে প্রতি টন ৬৭০ ডলারে। দেশের বাজারে সরকার দাম নির্ধারণ করে রেখেছে ৫০০ ডলারের নিচে। তাই সরকারের নির্ধারণ করা দামের চেয়ে বেশি দামে কম্পানিগুলো বাজারে চিনি সরবরাহ করছে বলে জানায় তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই থেকে হঠাৎ চিনির বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। গত সেপ্টেম্বরে সরকার প্রথমবারের মতো খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনির দাম ৮৯ টাকা এবং খোলা চিনি ৮৪ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। অক্টোবর ও নভেম্বরে দুই দফা দাম বাড়ানোর পর জানুয়ারিতে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনির দাম ১১২ টাকা এবং খোলা চিনি ১০৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ ৬ এপ্রিল চিনির দাম কেজিতে তিন টাকা কমিয়ে খোলা চিনির কেজি ১০৪ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১০৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তার পরও বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।

গতকাল শনিবার রাজধানীর বাজারগুলোতে দেখা যায়, খুচরায় প্রতি কেজি খোলা চিনি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। কম্পানিগুলো সরবরাহ বন্ধ রাখায় বাজারে প্যাকেটজাত চিনির সংকট রয়েছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের দু-তিন দিন আগে থেকে চিনির দাম বাড়তি। এখন প্রতি কেজি চিনিতে তাঁদের খরচ পড়ছে ১২০ টাকার বেশি। দাম বাড়তি দিয়েও এখন চিনি কিনতে পারছেন না বলেও জানান তাঁরা।

চিনি আমদানিকারক ও সরবরাহকারী এক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, কিছুদিন ধরে চিনির দাম যে হারে বাড়ছে খুব শিগগিরই তা ৭০০ ডলারে উঠে যাবে। কিন্তু দেশের বাজারে সরকার নির্ধারিত দাম এখন ৫০০ ডলারের নিচে। তাই অনেকে চিনি আমদানি বন্ধ রেখেছে। এখনই আবার চিনির দাম সমন্বয় করা প্রয়োজন, না হলে বাজারে সরবরাহের সংকট দেখা দিতে পারে।

এই সংকটেও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) দেশের মানুষকে স্বস্তি দিতে বাজারে চিনির সরবরাহ বাড়াতে পারছে না। এ বছর উৎপাদন কম থাকায় সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের কাছে মজুদের পরিমাণও কম। চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চিনিকলগুলোতে প্রায় ২১ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদিত হয়েছে, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ২৪ হাজার ৫০০ টন চিনি উৎপন্ন হয়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরের উৎপাদন ছিল ৪৮ হাজার টন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপন্ন হয় ৮২ হাজার টন।

সরকারি চিনি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বিএসএফআইসির প্রধান (বিপণন) মো. মাযহার উল হক খান বলেন, ‘সরকারি চিনি প্যাকেটজাত আকারে সরাসরি ও ডিলারদের মাধ্যমে সুপারশপে সরবরাহ করা হয়, যার কারণে খোলাবাজারে পাওয়া যাচ্ছে না।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/04/30/1275545