৩০ এপ্রিল ২০২৩, রবিবার, ১১:৫৯

এখনই কোরবানির ঝাঁজ পেঁয়াজ-আদা-রসুনে

পেঁয়াজে কেজিতে ১৫, রসুনে ৫০ ও আদায় ২০ টাকা বেড়েছে

গেল রোজার ঈদে পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম অনেকটা স্বাভাবিকই ছিল। তবে ঈদ যেতে না যেতেই বাড়তে শুরু করেছে এই মসলাগুলোর দাম।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে এখন ভারত ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ নেই। মিয়ানমার, ভারত ও চীনের রসুনও নেই। চীনের আদাও আসছে না। আর ঋণপত্র খোলায় সংকট এখনো পুরোপুরি কাটেনি। সরকার এখনই উদ্যোগ না নিলে কোরবানির ঈদে এসব পণ্যের দাম সহনীয় রাখা কঠিন হবে।

গতকাল শনিবার খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ছোট আকারের দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয় ৪২ থেকে ৪৫ টাকায়। বড় আকারের পেঁয়াজ কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়। রোজার শেষ দিকে এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি। সে হিসাবে দাম বেড়েছে কেজিতে সাত থেকে ১৫ টাকা। বাজারে এখন কোনো ভারতীয় পেঁয়াজ নেই, নেই মিয়ানমারের পেঁয়াজও।

খাতুনগঞ্জের আড়তে গতকাল দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হয় ১৫০ টাকায়, ঈদের আগে এই রসুন বিক্রি হয়েছিল কেজি ১০০ টাকায়। সে হিসাবে কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে রসুনের দামও। বাজারে মিয়ানমারের রসুন যেমন নেই, তেমনি নেই ভারত কিংবা চীন থেকে আসা রসুনও।

পাইকারি বাজারে গতকাল মিয়ানমার থেকে আসা আদা বিক্রি হয় কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়; ঈদের আগে এই আদা বিক্রি হয়েছিল ১২০ টাকার মধ্যে। আর বাজারে দেশি আদা এখন নেই; তবে ভারত থেকে আসা আদা ঈদের আগে বিক্রি হয়েছিল ১২০ টাকায়। চীন থেকে আদা এখন আসছে না।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ঋণপত্র খোলায় যে সংকট ছিল, তা এখনো কাটেনি। ফলে কোরবানির ঈদে আদা, রসুনের সংকট হতে পারে। আর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকে এই পণ্য আমদানির সুযোগ পাচ্ছেন না। এতে বাজারে সংকটের আশঙ্কা আছে।

জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জভিত্তিক কাঁচা পণ্য আমদানিকারক আবসার উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঋণপত্র সংকট থাকায় রোজায়ও পণ্য আনতে পারিনি। কোরবানির ঈদ ঘিরেও আমদানির সুযোগ পাচ্ছি না। এ ছাড়া এক ব্যবসায়ী খাতুনগঞ্জের এক বেসরকারি ব্যাংকে গেলে গত মঙ্গলবার আদা আমদানিতে ডলারের মূল্য ধরা হয়েছে ১০৫ টাকা। একই ব্যাংকে একই ব্যবসায়ীর কাছে বৃহস্পতিবার ডলারের মূল্য ধরা হয়েছে ১১৫ টাকা। এ রকম যদি হয় তাহলে আমদানি করে পণ্যের দাম কিভাবে ঠিক থাকবে?’ এ কারণে আদা, রসুন আমদানিতে কোনো ঝুঁকি নিচ্ছেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের সঙ্গে যারা ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত, বড় শিল্প গ্রুপগুলোই কেবল আমদানির সুযোগ আগেও পেয়েছে, এখনো পাচ্ছে। আমরা আগ্রহ হারাচ্ছি।’

কয়েক বছর ধরেই ভারত থেকে আসা পেঁয়াজের নির্ভরতা কাটতে শুরু করেছে দেশে। এখন দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ধারাবাহিকভাবেই বাড়িয়েছেন কৃষকরা; কারণ বিগত মৌসুমগুলোতে অন্য বছরের চেয়ে ভালো দাম পেতে শুরু করেছেন তাঁরা। ফলে এই মুহূর্তে ভারত থেকে আবারও আমদানির অনুমতি দিলে কৃষকদের আগ্রহের ধারাবাহিকতায় ভাটা পড়তে পারে। যদিও পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা সাময়িকভাবে হলেও অনুমতি প্রদানের পক্ষে।

খাতুনগঞ্জের কাঁচা পণ্যের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইদ্রিস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমদানি অনুমতিপত্র বা আইপি বন্ধ থাকার কারণে এখন ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে না। ফলে দেশি পেঁয়াজ দিয়েই পুরো চাহিদা মিটছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এবং ভবিষ্যতে আরো চাহিদা বাড়বে—এমন শঙ্কায় মাঠ পর্যায়ের আড়তেই পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। ফলে সাময়িকভাবে হলেও ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া যায় কি না ভেবে দেখা উচিত।’

এদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ না এলেও মিয়ানমার থেকে স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আসার সুযোগ আছে। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মূলত দুই দেশের মধ্যে ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য আমদানি হয়। কিন্তু সেই ড্রাফটের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের আধিপত্য দেখা যাচ্ছে। এই কারণে ড্রাফটের খরচ বেশি পড়ছে এবং এই বাড়তি খরচ যোগ হচ্ছে পণ্যের দামে। এতে পণ্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে। ফলে টেকনাফ দিয়ে কম দামে পণ্য আনার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আমদানিকারক কালের কণ্ঠকে বলেন, রোজায় ভারত থেকে দ্রুত ছোলা এনে বাজার যেভাবে সামাল দেওয়া হয়েছে, এমন কিছু কোরবানির ঈদেও করতে হবে। হয় সেটা মিয়ানমার থেকে অথবা ভারত থেকে পণ্য এনে। যা উদ্যোগ নেওয়ার এখন থেকেই নিতে হবে। কারণ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে কোরবানির ঈদ হতে পারে ২৯ জুন। ফলে হাতে সময় কম।

জানতে চাইলে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে পণ্যের আমদানিকারক জারিফ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মনজুর মোরশেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মিয়ানমারেও পণ্যের বুকিং দর বেশি। ফলে সেই দামে পণ্য এনে পড়তা হবে কি না যাচাই শুরু করব রবিবার থেকে। পোষালে সেখান থেকেই আমদানি করব। কারণ আদা, রসুন অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে গেলে ঋণপত্র সংকট এখনো আছে। ফলে অনেকেই দ্রুত এবং কম দামে পণ্য আনতে মিয়ানমারের দিকে ঝুঁকবেন।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/04/30/1275544