৩০ এপ্রিল ২০২৩, রবিবার, ১১:৫৭

৪৯৩৩টি কারখানায় বেতন-বোনাস হয়নি

ঈদ পার হয়ে গেলেও দেশের ৪৯৩৩টি বড় ও মাঝারি কারখানার শ্রমিকরা মার্চ মাসের বেতন ও ঈদের বোনাস পাননি। এই সব কল-কারখানার মধ্যে রয়েছে- পোশাক, ইস্পাত, ভারী লোহা ভাঙা শিল্প, সিমেন্ট, তামাক ও সাবান ফাক্টরি। ঈদের আগে শ্রমিকরা ওইসব কারখানায় আগেই দাবি করেছিলেন যে, তাদের যাতে বেতন ও বোনাস দেয়া হয়। কিন্তু, মালিকপক্ষ নানা অজুহাতে তাদের বেতন ও বোনাস দেয়নি। এতে করে অনেক শ্রমিকের ঈদ কেটেছে নিদারুণ কষ্টে। কর্মরত কারখানার অনেক শ্রমিক ছুটিতে যেতে পারেননি গ্রামের বাড়িতে।

যেসব প্রতিষ্ঠান এখনো বেতন ও বোনাস দিতে পারেনি সেইসব প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক অসন্তোষের শঙ্কা প্রকাশ করেছে শিল্প পুলিশ। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তাদের পাওনা টাকা আদায়ের জন্য কর্মবিরতিতে যেতে পারেন বা সড়ক অবরোধ করতে পারে বলে শিল্প পুলিশ জানিয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান এখনো বেতন দিতে পারেনি তাদের অধিকাংশই কারখানা হচ্ছে গাজীপুরের আশুলিয়া ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায়।

এ ছাড়াও চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনায়ও কিছু কারখানা আছে। বেতন ও বোনাসকে কেন্দ্র করে যাতে শিল্পখাতে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল কোনো রকমের নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে সতর্ক রয়েছে শিল্প পুলিশ। পাশাপাশি রয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি।

বেতন ও বোনাস না দেয়ার কারণ ও কোন কোন কলকারখানায় নিয়মিত বেতন দেয়নি সেই বিষয়েও খবর নিচ্ছে পুলিশ।
এ বিষয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (শিল্প পুলিশ) মো. মাহবুবুর রহমান মানবজমিনকে জানান, ওইসব প্রতিষ্ঠান কেন বেতন ও বোনাস দেয়নি তার খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও বেতন ও বোনাসকে কেন্দ্র করে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘœ না ঘটে সেইদিকেও শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে নজরদারি রাখা হচ্ছে।

শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকাসহ সারা দেশে মোট ৯ হাজার ৬১৬টি কলকারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ৪৯৩৩টি কারখানায় এখনো বেতন ও বোনাস দেয়নি। বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত ১৬৩১টি কারখানার মধ্যে ১৪৯০টির মার্চ মাসের বেতন দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ১৪১টি কারখানায় এখনো বেতন ও বোনাস দেয়া হয়নি।

সূত্র জানায়, বিকেএমইএ’র ৯৫টি, বিটিএমএ’র ২৪টি, বেপজার ১টিসহ ৮৮৮টি কল-কারখানায় মার্চ মাসের বেতন ও ঈদের বোনাস দেয়া হয়নি। ইস্পাত ও সিমেন্ট শিল্পের ৬৬টি কল-কারখানার মধ্যে ৪৪টির ঈদের বেতন ও বোনাস পায়নি। এ ছাড়া অন্যান্য খাতের ৬ হাজার ৩৯৯টি কারখানার মধ্যে বেতন ও বোনাস হয়নি ৩ হাজার ৬৯টির। মোট ৯ হাজার ৬১৬টি কল-কারখানার মধ্যে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস হয়েছে ৪৬৮৩টির। বাকি ৪ হাজার ৯৩৩টি প্রতিষ্ঠানের বেতন ও বোনাস হয়নি।
সূত্র জানায়, যেসব প্রতিষ্ঠানে বেতন ও বোনাস হয়নি সেগুলো ঈদের পরে খুলে দেয়া হয়েছে। শ্রমিকেরাও কাজে যোগ দিয়েছেন। তারা ইতিমধ্যে তাদের বকেয়া বেতন ও ঈদের বেতন দেয়ার জন্য মালিক কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করেছেন। একাধিক ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও তাদের পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়াও যেসব শ্রমিকর তাদের চাকরি ছাড়তে চান তাদের যাতে অগ্রিম বেতন দিয়ে বিদায় করা হয় বলে বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, ঢাকার বিশেষ করে আশুলিয়া ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ যাতে দেখা না দেয় এজন্য শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। ঈদের পর শ্রমিকেরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করতে পারে এমন একটি বার্তা শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

https://mzamin.com/news.php?news=53217