৩০ এপ্রিল ২০২৩, রবিবার, ১১:৫৫

পর্যটন খাতে মন্দার প্রভাব

ঈদ ঘিরে পর্যটন খাতে মন্দার প্রভাব পড়েছে। প্রত্যাশিত পর্যটকের অভাবে হোঁচট লাগায় এ শিল্প নতুন সঙ্কটের আভাস দিচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থনৈতিক খাতে সুদিন না ফিরলে এ খাতও চাঙ্গা হবে না। তাদের মতে ব্যবসার এই উপযুক্ত সময়ে অর্থিক অস্থিরতায় পর্যটক কমছে। ফলে করোনা সঙ্কট কাটিয়ে উঠলেও বিরাজমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে নতুন করে সঙ্কটে পড়বে সম্ভাবনার এ খাত।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা চলাকালীন তারা ভয়াবহ সঙ্কটে পড়েছিলেন; কিন্তু নানান উদ্বেগের কারণে তখন টিকে থাকতে পেরেছেন। তবে তার ক্ষতি এখনো গুনতে হচ্ছে। কিন্তু এরই মধ্যে ডলারের দামের সাথে পণ্যের বাজারে অস্থিরতায় ধাক্কা খায় এ খাত। তারপরও তারা কোনোমতে টিকে থাকার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ঈদ ঘিরে নতুন প্রত্যাশা করলেও তা আর পূরণ হয়নি। মন্দার কারণে ভরা মৌসুমেও তা হোঁচট খেয়েছে।

বিরাজমান পরিস্থিতিতে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন (টোয়াব) বলছে, ডলারের দাম বৃদ্ধির পর থেকে এমনিতেই পর্যটক আশঙ্কাজনক হারে কমে গিয়েছে। এর মধ্যে এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। তাদের মতে, করোনা আতঙ্কের পর ধীরে ধীরে এ খাতে সঙ্কট কেটে আসছিল; কিন্তু হঠাৎ করে বিশ্বমন্দার প্রভাব বাংলাদেশকেও ছেড়ে যায়নি। যার কারণে আর্থিক সঙ্কট থাকায় আশানুরূপ পর্যটকের উপস্থিতি মেলেনি।

তাদের মতে, চলমান পরিস্থিতির শেষ পরিণতি কী, তার শেষ কোথায়- এসব আশঙ্কা থেকে মানুষের মধ্যে অস্থিরতা রয়েছে। ফলে ঈদ মৌসুমেও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটক কম এসেছেন। এতে করে লোকসানে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে করোনার পর নতুন করে সঙ্কটে পড়বে পর্যটনশিল্প।

সংশ্লিষ্ট একজন ব্যবসায়ী জানান, প্রতি বছর ঈদ গেলে তাদের প্যাকেজ পরিপূর্ণ থাকে; কিন্তু বর্তমানে হাতেগোনা পর্যটক ভ্রমণে বের হচ্ছেন। তার মতে, অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে মানুষ বাড়তি খরচ করতে চাইছেন না। সবমিলিয়ে ভ্রমণকারীরা অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। ফলে এমন সঙ্কট তৈরি হয়েছে।

হোটেল মালিক সমিতির একজন নেতা জানান, সাধারণত সারা বছরের মধ্যে ঈদে সিলেট, কক্সবাজারসহ দেশের সব পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকে পরিপূর্ণ থাকে। করোনার পর কিন্তু এই প্রথম স্থানীয় পর্যটক ছাড়া বাইরের পর্যটক খুবই কম ছিলেন।
সিলেট হোটেল মালিক সমিতির একজন নেতা বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, প্রতি বছর ঈদ ঘিরে যেখানে হোটেলে রুম দেয়া কষ্টকর হতো সেখানে এবার হাতেগোনা পর্যটক ছিলেন। তিনি বলেন, এই সঙ্কট কখন কাটবে তা ধারণা করা মুশকিল।

যদিও বিশ্ব পর্যটন সংস্থা বলছে, দেশে ২০২৪ সালে মোট কর্মসংস্থানের ১ দশমিক ৯ শতাংশ হবে পর্যটনশিল্পের অবদান। আর ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৫১ দেশের পর্যটকরা বাংলাদেশে ভ্রমণ করবেন। যা মোট জিডিপিতে ১০ শতাংশ অবদান রাখবে। তবে তার জন্য পরিকল্পনা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে পর্যটনশিল্পের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার রোল মডেল।

কিন্তু টোয়াব বলছে, দেশে পর্যটন খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ১১০ কোটি। এর মধ্যে পর্যটকের প্রায় ৭৫ শতাংশ ভ্রমণ করেন এশিয়ার দেশগুলোয়। তাতে করে বাংলাদেশে এর আগমনের সংখ্যা ২০০ কোটি ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা; কিন্তু অপরিকল্পিত কার্যক্রমের কারণে তার সম্পূর্ণ সফলতা আসছে না।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/744436