২৯ এপ্রিল ২০২৩, শনিবার, ১০:১১

৫৮% দোকানির শরীরে ব্যথা

ঢাকা মহানগরে ৫৮ শতাংশ দোকানি বিভিন্ন শারীরিক ব্যথায় ভুগে থাকেন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার মুদি দোকান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, সুপারশপ, শপিং মল, জুয়েলারি এবং রাস্তার পাশের অস্থায়ী দোকানিদের ওপর চালানো এক সমীক্ষায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

অস্ট্রেলিয়ার লা ট্রব বিশ্ববিদ্যালয়ের কোমর ব্যথা বিষয়ক গবেষক মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক এই সমীক্ষা পরিচালনা করেন।

২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা মহানগরে এ সমীক্ষা চলে। এতে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী এক হাজার ৫৫৩ জন দোকান মালিক ও কর্মচারী অংশ নেন। এর মধ্যে পুরুষ এক হাজার ২৬১ জন আর নারী ২৯২ জন। এ সমীক্ষাবিষয়ক নিবন্ধ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্সের প্লস ওয়ান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়।

সমীক্ষায় শারীরিক ব্যথাকে ছয় ভাগে ভাগ করা হয়। এতে দেখা গেছে, ৫৫.৫ শতাংশ দোকানি ভুগছেন কোমর ব্যথায়, ৪৮ শতাংশ ঘাড়ের ব্যথায়, ৪৩.৫ শতাংশ পিঠের ব্যথায়, ৩৮.৯ শতাংশ পায়ের ব্যথায়, ৩১.৬ শতাংশ কাঁধের ব্যথায় এবং ২২.৮ শতাংশ দোকানি বাহুর ব্যথায় ভুগছেন। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী কারো কারো আবার একাধিক ব্যথা রয়েছে।

মোহাম্মদ আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, শারীরিক ব্যথার অন্যতম কারণ হলো দীর্ঘ সময় ধরে একই স্থানে অবস্থান করা বা একই কাজ করা। যেমন—বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকা। দিনের ৯ থেকে প্রায় ১৪ ঘণ্টা তাঁরা এই কাজ করে থাকেন।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, যাঁরা মাদকসেবী বা ধূমপানে আসক্ত, তাঁদের শারীরিক ব্যথা, যেমন—কোমর, ঘাড়, হাঁটু, কাঁধ ব্যথা সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৫.৩ শতাংশের মাসিক আয় ১৫ হাজার টাকার নিচে। ৪৮.৮ শতাংশের মাসিক আয় ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ভাড়া বাসায় থাকেন ৬০.২ শতাংশ দোকানি। ৬৭.৭ শতাংশের একক পরিবারে। ৩২.২ শতাংশের যৌথ পরিবার। মেস বা কয়েকজন মিলে একত্রে থাকেন ১০.১ শতাংশ দোকানি। ঢাকায় নিজস্ব বাড়ি রয়েছে ২৬.৬ শতাংশের। অন্য দোকানিরা থাকেন অন্যান্য অবস্থানে। শহরে থাকেন ৬২.৭ শতাংশ, উপশহরে থাকেন ২৩.৮ শতাংশ এবং গ্রামে থাকেন ১৩.৪ শতাংশ দোকানি। ৫৮.৪ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তার কম। এইচএসসি পাস করেছেন ২৯.৩ শতাংশ দোকানি। অন্য দোকানিরা স্নাতক বা তার ওপরের ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারী দোকানিদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ কোনো শারীরিক ব্যায়াম করেন না। ৫২.২ শতাংশের ওজন বেশি, ৩৯ শতাংশ দোকানি স্থূলকায়, ২২.৬ শতাংশের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। ১৮.৪ শতাংশের ডায়াবেটিস, ৭.২ শতাংশের হাঁপানি এবং ০.৫ শতাংশের কিডনির রোগ আছে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, এক বছরের মধ্যে কাজের অভিজ্ঞতা আছে ৮.১ শতাংশের, দুই থেকে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা আছে ৩৫ শতাংশের, ছয় থেকে ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা ৩৬.৭ শতাংশের, ১৫ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা ২০ শতাংশ দোকানির।

এসব শারীরিক ব্যথা থেকে রক্ষা পাওয়ার বিষয়ে মোহাম্মদ আলী বলেন, নিয়মিত হাঁটা ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিট, অর্থাৎ সপ্তাহে পাঁচ দিন ৩০ মিনিট করে হাঁটলে শারীরিক জড়তা কমে আসে এবং ব্যথা ও নানা ধরনের অসংক্রামক রোগ থেকে দূরে থাকা যায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. তছলিম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, শুধু দোকানি নয়, দোকানি ছাড়াও বিভিন্ন পেশার মানুষ দীর্ঘ সময় ঠায় বসে কাজ করে। তাদের ক্ষেত্রেও কোমর, ঘাড়, হাঁটু বা কাঁধসহ বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা হয়। এই ব্যথা মূলত এক ধরনের সতর্কবার্তা।
তিনি বলেন, ব্যথা নিয়ে যেসব রোগী চিকিৎসার জন্য আসে, তারা অনেকে হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যায় ভুগছে। এর একটি কারণ হলো শরীরের নড়চড়া না থাকা। অর্থাৎ শরীরে রক্তের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হওয়া।

অধ্যাপক মো. তছলিম উদ্দিন বলেন, ‘ব্যথা থেকে সুস্থ থাকার পথ হলো একটানে দুই ঘণ্টার বেশি বসা যাবে না। কিছুক্ষণ পর পর একটু হাঁটা, একটু বসা, কাজ না থাকলে দোকান পরিষ্কার করা—অর্থাৎ শরীরের অ্যাক্টিভিটিজ থাকতে হবে। তাহলেই আপনি সুস্থ থাকবেন।’

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নিয়মিত সাত-আট ঘণ্টা করে কাজ করেন ৪৩.৮ শতাংশ দোকানি। ৯ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করেন বা ওভারটাইম করেন ৫৭.১ শতাংশ দোকানি। এর চেয়ে বেশি কাজ করেন ১১.২ শতাংশ দোকানি।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/04/29/1275239