২২ এপ্রিল ২০১৭, শনিবার, ১১:২৪

বিশ্ব ঐতিহ্য টাঙ্গুয়ার হাওরে জীববৈচিত্র্য হুমকিতে

বিশ্ব ঐতিহ্য খ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। আশপাশের হাওরে মাছের সঙ্গে জোঁক, শাপ, শামুকসহ নানা প্রজাতির জলজ প্রাণী মরে যাচ্ছে। হাওরটির প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় এক যুগ ধরে নানা উদ্যোগ দেখা গেলেও বর্তমান দুর্যোগময় মুহূর্তে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকেও কোনো সুপারিশ নেই। ফলে টাঙ্গুয়ার জীববৈচিত্র্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য গবেষকরা।

১৯৯৯ সালে ৯৭.২৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের হাওরটিকে সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে সরকার। এর ফলে ২০০০ সালে ইরানের রামসার সম্মেলনে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় টাঙ্গুয়া। এর পরিবেশ ও প্রকৃতি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ২০০৩ সালে সরকার বিশেষ ব্যবস্থাপনা শুরু করে। পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংগঠন আইইউসিএনও এর সঙ্গে যুক্ত হয়।

পরিবেশবিদরা জানান, সমাজভিত্তিক টেকসই ব্যবস্থাপনার আওতায় এনেও টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। বরং ব্যবস্থাপনার নামে লুটপাট ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে। তবে সম্প্রতি ডুবে যাওয়া ধান পচে অ্যামোনিয়া গ্যাস বৃদ্ধি এবং অক্সিজেন কমে যাওয়ায় জেলার সব হাওরের মাছ মরে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে অন্যান্য প্রাণীর ওপরেও। এ হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় রামসার কনভেনশনে বিশ্ব রামসার কমিটি ও বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা নীরব।
হাওরবাসী ও পরিবেশবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, টাঙ্গুয়া হাওরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এক যুগ আগে থেকে সরকার প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করলেও তার কার্যকর ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এখন হাওরটি দুর্যোগকবলিত হওয়ায় তা রক্ষায় কোনো পরিকল্পনাও দেখা যাচ্ছে না।
সুখাইর রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমানুর রাজা চৌধুরী বলেন, ‘হাওরের নানা ধরনের প্রাণী মরে ভেসে উঠছে। দুর্গন্ধে টেকা যাচ্ছে না। এ অবস্থা আগামীতে আরো বড় সংকট তৈরি করবে। ’
আমরা হাওরবাসীর সমন্বয়ক ও পরিবেশবিদ রুহুল আমিন বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওর রক্ষায় সরকার রামসার কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে। এখন এর জীববৈচিত্র্য চরম হুমকির মুখে থাকলেও প্রতিকারের কোনো উদ্যোগ নেই। ’
হাওরের উদ্ভিদবৈচিত্র্য গবেষক কল্লোল তালুকদার বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার ইকোসিস্টেম ভেঙে পড়লে সব হাওরেই এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। ’

হাওরের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ক গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ‘এই দুর্যোগ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংগঠন আইইউসিএন, রামসার কমিটি ও সরকারিভাবে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়ার কথা। জাতিসংঘের পরিবেশ-প্রতিবেশসংশ্লিষ্টদেরও এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে বিবৃতি দেওয়া উচিত। কারণ এই হাওর এখন কেবল বাংলাদেশ বা সুনামগঞ্জের নয়, বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে দায়িত্বশীল কেউ বক্তব্য না দেওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। ’
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও টাঙ্গুয়ার হাওর ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্য হাওরে মাছ মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেলেও টাঙ্গুয়ায় এমন কিছু ঘটার খবর এখনো পাইনি। আমরা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। ’
উল্লেখ্য, টাঙ্গুয়ার হাওরে ৫২টি বিল ও ১২০টি কান্দা-জাঙ্গাল রয়েছে। ১৪১ প্রজাতির মাছ, ২০০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২১৯ প্রজাতির পাখি, ৯৮ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি, ১২১ প্রজাতির দেশি পাখি, ২২ প্রজাতির পরিযায়ী হাঁস, ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ১১ প্রজাতির উভচর প্রাণী বৈচিত্র্যময় করেছে টাঙ্গুয়াকে।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/04/22/489416