২৮ এপ্রিল ২০২৩, শুক্রবার, ৮:০৪

হত্যা শেষে প্রকাশ্যেই অস্ত্রের মহড়া

লক্ষ্মীপুরে জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমাম হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল সকালে বশিকপুর, নন্দীগ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে, বশিকপুর এলাকার সেলিম পাটোয়ারীর ছেলে মো. ইছমাইল হোসেন (৩১), নন্দীগ্রামের মৃত আবদুল মান্নানের ছেলে সবুজ (৩১) ও একই এলাকার তাজুল ইসলামের ছেলে আজিজুল হক বাবলু (৩০)। সবুজ ও ইছমাইল এজাহারভুক্ত আসামি। তবে আজিজুল হক বাবলুকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে জোড়া খুনের ঘটনার পর আসামিরা প্রকাশ্যেই অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। হত্যার পর অস্ত্রের মহড়ার ৭ সেকেন্ডর একটি সিসিটিভি’র ফুটেজে দেখা যায় ঘটনার দিন মঙ্গলবার রাত ৯টায় ৫৬ মিনিটের সময় আবুল কাশেম জিহাদীর ডানহাত হিসেবে পরিচিত রামগঞ্জের সন্ত্রাসী দেওয়ান ফয়সালের নেতৃত্বে ৮ জনের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী অস্ত্র মহড়া দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পোদ্দার বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। এদের মধ্যে দেওয়ান ফয়সালকে শনাক্ত করতে পারলেও বাকি ৭ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ দেওয়ান ফয়সালের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ ৭টি মামলা রয়েছে। এছাড়া আবুল কাশেম জিহাদীর বিরুদ্ধে রয়েছে চারটি হত্যাসহ দেড়ডজন মামলা। দুইজনই পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী।

এর আগে পোদ্দারহাট পশ্চিম বাজারে ব্রিজের পাশে সাবেক জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামকে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে সন্ত্রাসীরা।

এতে ঘটনাস্থলে মারা যান আবদুল্লাহ আল নোমান। গুরুতর আহত রাকিব ইমামকে উদ্ধার করে প্রথমে সদর হাসপাতাল পরে ঢাকা নেয়ার পথে মৃত্যু হয় তাদের।

এদিকে জোড়াখুনের ঘটনায় বশিকপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কাশেম জিহাদীকে প্রধান করে ৩৩জনকে আসামী করে হত্যা মামলা করা হয়। বুধবার রাত ১ টার দিকে নিহত আবদুল্লাহ আল নোমানের বড় ভাই বশিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় এই মামলা করেন।

মামলায় চন্দ্রগঞ্জ থানায় আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বশিকপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জিহাদীকে প্রধানসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১৪ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। ঘটনার দুইদিন অতিবাহিত হতে চলছে। অথচ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এঘটনার পর এখনো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নিহত আবদুল্লাহ আল নোমানের বড় ভাই বশিকপুর ইউপি’র চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের বাড়িসহ ঘটনাস্থল অতিরিক্ত মোতায়েন রয়েছে। তারপরও সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে।

অপরদিকে মামলার বাদী ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বলেন, কাশেম জিহাদীর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে দুইজনকে হত্যা করে। এরপর সন্ত্রাসী দেওয়ান ফয়সালের নেতৃত্বে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পাশে অবস্থান করছিলেন হত্যার প্রধান আসামী আবুল কাশেম জিহাদী। কেউ তাদের ভয়ে সামনে আসেনি। এঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনিসহ স্বজনরা।

চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মামলার বাদী ও ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আবুল কাশেম জিহাদীর বিরুদ্ধে চারটি হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এছাড়া কিলার দেওয়ান ফয়সালের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বশিকপুর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জিহাদীকে প্রধান করে ৩৩ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ইতিমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রধান আসামি আবুল কাশেম জিহাদীসহ অন্য আসামিদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। খুবই শিগগিরই জিহাদীসহ অন্য আসামিরা ধরা পড়বে বলে আশা করেন তিনি। এ ছাড়া সিসিটিভি’র ফুটেজের বিষয়টিও নিশ্চিত করেন তিনি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মোটরসাইকেলযোগে পোদ্দার বাজার থেকে নাগের হাটে যাচ্ছিলেন যুবলীগ নেতা নোমান ও তার সহযোগী অপর ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমাম। পশ্চিম বাজার এলাকার ব্রিজের পাশে পৌঁছালে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তাদের গতিরোধ করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আবদুল্লাহ আল নোমান ঘটনাস্থলে মারা যায়। অপর গুরুতর আহত রাকিব ইমামকে উদ্ধার করে প্রথমে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঢাকা নেয়ার পথে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনিও মারা যান।

https://mzamin.com/news.php?news=52898