২৬ এপ্রিল ২০২৩, বুধবার, ১০:৪৭

অপরিকল্পিত নগরায়নে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে ঢাকা

অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে রাজধানী ঢাকা। সেই সাথে নানামুখী দূষণে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেবল আমাদের দেশেই নয়, পৃথিবীর বহু দেশে অপরিকল্পিত নগরায়ন হয়েছে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেগুলোর সমাধানও হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ কেবল ব্যতিক্রম। যেখানে সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে শুধু বাড়ছেই। উদাহরণ দিয়ে তারা বলছেন, সিঙ্গাপুরের মতো কুয়ালালামপুরেও সফলভাবে পুনর্র্নিমাণকাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। বস্তুত এমন আরও বহু দেশে সফলভাবে শহরে পুনর্র্নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। আমাদেরও উচিত সেসব দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে পুরান ঢাকার অতি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোয় পুনর্র্নির্মাণ কাজ শুরু করা। এটি করতে দেরি হলে ঢাকায় যে কোনো দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে রাখা কঠিন হতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো নগরীর জনঘনত্ব বিবেচনায় নিয়ে নগরীর নিরাপত্তার জন্য নানা রকম পদক্ষেপ নিতে হয়। বিশেষত কোনো শহরে যাতে অগ্নিকা- না ঘটে, সেজন্য সতর্কতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া দরকার। যদি কোনো কারণে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হয়ে যায়, তাহলে দ্রুত আগুন নেভানোর জন্য প্রস্তুতি রাখতে হয়। আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনায় যে কোনো দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার জন্য ব্যাপক সতর্কতামূলক প্রস্তুতি রাখতে হয়। এক্ষেত্রে কোনোরকম ঘাটতি থাকলে দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে পানির ভূমিকা অপরিহার্য। সেজন্য সব আধুনিক শহরের সর্বত্রই আগুন নেভানোর জন্য পানির বিশেষ এক ধরনের লাইন থাকে। একই সঙ্গে সেই লাইনে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা রাখা হয়। আমাদের দেশের সব শহরে এমন ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সঙ্গে আগুনের ধরন বুঝে পানির পাশাপাশি অন্যান্য উপকরণের ব্যবস্থাও রাখতে হবে। কোনো অগ্নিকা-ের পর এর কারণ অনুসন্ধানে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। যেহেতু অগ্নিকা-ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, সেহেতু অগ্নিকা-ের কারণ এবং এ বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। এজন্য ধারাবাহিক গবেষণা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা লক্ষ্য করেছি, কোনো অগ্নিকা-ের পর ঘটনাস্থলে যেতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের নানারকম অসুবিধা হয়। সেসব সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে অপ্রশস্ত সড়ক প্রশস্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। বঙ্গবাজারের ঘটনার মতো অগ্নিকা-ে যাতে আর কেউ নিঃস্ব না হয়, তা নিশ্চিত করা দরকার। অবৈধ বৈদ্যুতের লাইন, অবৈধ গ্যাস লাইনের কারণে বহু অগ্নিকা- ঘটে। কাজেই শহরের অবৈধ বৈদ্যুতের লাইন, অবৈধ গ্যাস লাইনের বিরুদ্ধে জোরলো অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। মানহীন কেবলের কারণেও অগ্নিকা- ঘটতে পারে। কাজেই ভবনে বা কোনো মার্কেটে যাতে কেউ মানহীন কেবল ব্যবহার করতে না পারে, সেদিকেও কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে। সারা দেশে এলএনজির ব্যবহার বেড়েছে। এক্ষেত্রে সিলিন্ডার বিপণন, বিশেষত পরিবহনে যেন যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমগ্র ঢাকা শহরে কোন কোন জায়গায় অতি ঘনবসতি গড়ে উঠেছে, সেসব চিহ্নিত করে ওইসব এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া দরকার। একই সঙ্গে অতি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর জনবসতি কমানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।

রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে এখন যেসব এলাকায় নতুন করে উন্নয়ন কাজ চলছে, সেসব প্রকল্পের দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। সব ধরনের নির্মাণকাজ ত্রুটিমুক্ত রাখার পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের সব স্থাপনা যাতে নিয়ম মেনে নির্মিত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থায় লোকবল কম থাকার বিষয়টি আমরা জানি। জনবল যতই কম থাকুক-জনবলের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। মানুষকে সচেতন করার পদক্ষেপও নিতে হবে। কোনো একটি স্থাপনা মানহীনভাবে নির্মাণ করা হলে বা ভবন নির্মাণে যথাযথ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া না হলে তা ব্যক্তির পাশাপাশি প্রতিবেশীদের জন্যও নানা রকম ঝুঁকি সৃষ্টি করে। সম্প্রতি কয়েকটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাগুলোর কারণ অনুসন্ধান করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

কেউ যাতে নকশাবর্হির্ভূত ভবন নির্মাণ করতে না পারে, সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। শহরে সব ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা চিহ্নিত করে সেগুলো থেকে মানুষকে সরাতে হবে। ভবন নির্মাণে যথাযথ নিয়ম মানা এবং অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা থাকাই যথেষ্ট নয়। গুলশানের বহুতল ভবনটিতে আগুন লাগার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে সতর্কসংকেত বেজে উঠেছিল কিন্তু অনেকেই তা আমলে নেয়নি। এছাড়া যারা অ্যালার্ম শুনে ভবনের বিভিন্ন তলা থেকে বের হয়েছিলেন, তাদের অনেকে জরুরি নির্গমন সিঁড়ি ব্যবহার করেননি। অগ্নিকা-ের খবর শুনে আতঙ্কে ভবন থেকে ঝঁপিয়ে পড়ে মানুষ হতাহত হন। কাজেই কোনো অগ্নিকা-ের ঘটনায় আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।

বুয়েট নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সারওয়ার জাহান বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকা-ের পর তা নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সবচেয়ে বেশি যে সমস্যায় পড়েন তা হলো পানি সংকট। কাজেই সারা দেশের জলাধারগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যথাযথ সচেতনতা ও সতর্কতার অভাবে যে কোনো অগ্নিকা-ে ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে যেতে পারে। কাজেই যে কোনো দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার পদক্ষেপ নিতে হবে। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনায় সাফল্য অর্জন করা কঠিন।

এদিকে নানামুখী দূষণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ঢাকা শহর বসবাসের জন্য দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। শুধু ঢাকা নয়, জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোয় এখন যে সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করেছে, তা হল শব্দদূষণ। নানা ধরনের শব্দে অতিষ্ঠ নগরবাসী। বাসার বাইরে পা দিলেই বিকট শব্দে মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে যানবাহনের হর্ন ও হাইড্রোলিক হর্ন নগরবাসীর জন্য আতঙ্কের কারণ। শব্দদূষণের সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী কোমলমতি শিশুরা। তাই স্কুল-কলেজের আশপাশে হর্ন না বাজানোর বিধান থাকা জরুরি। ইদানীং শহরে যে শ্রবণ প্রতিবন্ধীর সংখ্যা বাড়ছে, এজন্য ভয়াবহ শব্দদূষণকে অনায়াসে দায়ী করা যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, মানুষের শব্দ গ্রহণের স্বাভাবিক মাত্রা ৪০-৫০ ডেসিবল। পরিবেশ অধিদফতরের জরিপে দেখা যায়, দেশের বিভাগীয় শহরগুলোয় শব্দের মানমাত্রা ১৩০ ডেসিবল ছাড়িয়ে গেছে, যা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে আড়াই থেকে তিনগুণ বেশি। এ ছাড়া বিভিন্ন জরিপে আমরা লক্ষ করেছি, ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় চলে গেছে। ঢাকার এ অধঃপতনের জন্য শব্দদূষণও দায়ী। বিভিন্ন ধরনের শব্দে মানুষ শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে ইতিমধ্যে দেশের প্রায় ১২ শতাংশ মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে বলে পরিবেশ অধিদফতরের সাম্প্র্রতিক জরিপে উঠে এসেছে। সেইসঙ্গে যোগ হয়েছে উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগসহ, ফুসফুসজনিত জটিলতা, মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্মরণশক্তি হ্রাস ও মানসিক চাপসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা। এটা খুবই দুঃখজনক যে, হাইকোর্টের নির্দেশনা সত্ত্বেও যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধ হয়নি। এখনও উচ্চশব্দের এ হর্ন বাজিয়ে রাজধানীতে ছুটছে যানবাহন। এর বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান ও মামলা হলেও রোধ করা সম্ভব হয়নি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে ট্রাফিক পুলিশ ১৮ হাজার ৫২২টি হাইড্রোলিক হর্ন জব্দ করেছে আর এ সময়ে মামলা হয়েছে ১০ লাখ ২২ হাজার ৩৩৮। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হচ্ছেনা। যানবাহনের উচ্চমাত্রার হর্ন মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। অতিরিক্ত হর্ন বাজানো নিয়ে আইন তৈরি হলেও এর প্রয়োগ বাস্তবে দেখা যায় না বললেই চলে।

শত নিষেধ সত্ত্বেও প্রয়োজন ছাড়াই হর্ন বাজানো হচ্ছে, যা মানুষের মনে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আইনের প্রয়োগ ও ব্যক্তির সচেতনতাবোধই পারে এ সমস্যা থেকে জাতিকে রক্ষা করতে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে সরকারকে আরো কঠোর এবং শব্দদূষণ প্রতিরোধে বিভিন্ন ব্যবস্থাও নেয়া প্রয়োজন। তারা বলেন, হাইড্রোলিক হর্ন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের মধ্যেও রাজধানীসহ সারা দেশে এই হর্ন বিক্রি হচ্ছে। এটা অনতিবিলম্বে বন্ধ করা উচিত।
এ ব্যাপারে গাড়ির মালিক ও চালকদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে। যত্রতত্র হর্ন বাজানোর বদ অভ্যাস বাদ দিতে হবে। শহর বাসযোগ্য করতে চাইলে অবশ্যই শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, যা আমাদের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনের জন্য একান্ত কাম্য।
আমেরিকান স্পিচ অ্যান্ড হেয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন (আশা) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মানুষের শ্রবণযোগ্য শব্দের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪০ ডেসিবেল। কিন্তু হাইড্রোলিক হর্ন শব্দ ছড়ায় ১২০ ডেসিবেল পর্যন্ত। এর স্থিতি ৯ সেকেন্ডের বেশি হলে ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুসারে রাজধানীর মিশ্র আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা ৬০ ডেসিবেল। এর থেকে উচ্চমাত্রার শব্দে শ্রবণশক্তি হ্রাস, বধিরতা, হৃদরোগ, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, বিরক্তি সৃষ্টি ও শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘœ ঘটতে পারে। সহজেই অনুমান করা যায়, ভয়াবহ এক পরিস্থিতির মধ্যে আমরা বসবাস করছি এবং এটি এখন জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমান শব্দদূষণ চলতে থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে ঢাকার জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ বধির হয়ে যাবে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা জিপজেটের জরিপ মতে, বিশ্বের সবচেয়ে শারীরিক ও মানসিক চাপের শহরগুলোর মধ্যে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বার্ষিক বৈশ্বিক জরিপে বসবাসের অযোগ্যতায় দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা। ম্যারচার কনসাল্টিং গ্রুপ নামক গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, এশিয়ার দ্বিতীয় নিকৃষ্টতম শহর ঢাকা। এত অযোগ্যতা সত্ত্বেও প্রায় দুই কোটি মানুষের ভার বুক চিতিয়ে গ্রহণ করছে এ নিকৃষ্ট শহর।

সূত্র মতে, পরিবেশ দূষণ, বায়ুদূষণ, সড়ক দুর্ঘটনা, ট্রাফিক জ্যাম, পানিবদ্ধতা প্রতিটি শব্দের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক খুবই নিবিড়। ঢাকার যেন এগুলোকে ছাড়া চলা বড় দায়। ২০১৮ সালের বিশ্ব বায়ুর মান শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,‘বিশ্বের রাজধানী হিসেবে দ্বিতীয় দূষিত শহর ঢাকা। রাস্তার পাশের ফুটপাতটাও দূষণ থেকে মুক্ত নয়।

স্কুলের কচি শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে হাসপাতালের বয়োবৃদ্ধ লোকটি পর্যন্ত রাস্তায় মাস্ক ছাড়া চলতে পারে না। যে নিঃশ্বাসে মানুষ প্রাণবন্ত হয়, উদ্দীপ্ত হয়, সে নিঃশ্বাস যখন হাসপাতালে টিকিট কেনার কারণ হয়, তখন তাকে তো দূষিত বায়ুই বলা হবে।
যানজট ঢাকা শহরের নিত্যসঙ্গী। যানজট এমন একটি সমস্যা, যার কুফল লিখতে কলমের কালি শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু দুই ঘণ্টা চিন্তা করে এক লাইনও সুফল লেখা যাবে না। বহুজাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান নামবিও’র প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ট্রাফিক ইন্ডেক্স ২০১৯-এর জরিপ মতে, ঢাকা হচ্ছে সময় অপচয়, ট্রাফিক অদক্ষতা ও যানজটের শহর। এ পরিসংখ্যান জাতি হিসেবে খুবই লজ্জার। যানজটের সঙ্গে শুধু ব্যক্তি সমস্যাই জড়িত নয় বরং রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক সমস্যাও সম্পৃক্ত।

প্রতিদিন ঝাড়ু দেয়ার কথা থাকলেও পরিষ্কার করা হয় না রাজধানীর অধিকাংশ সড়ক। নিয়মিত সরানো হয় না সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানের ময়লাও। তাই রাস্তার মোড়ে মোড়ে জমছে ময়লার স্তূপ। সিটি কর্পোরেশনের মাঠকর্মীরা বলছেন, জনবল ও সরঞ্জাম সংকটে এই দশা। আর পরিবেশবিদরা বলছেন, সংকট সমাধানে তৎপরতা নেই নগর প্রশাসনের। রোজই পরিষ্কার করা হলেও ভাগাড় সদৃশ রাজধানীর জুরাইন-গেন্ডারিয়া সড়ক। জুরাইন ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক আর বংশালের মাঠ যেন মশার আঁতুড়ঘর। একজন এলাকাবাসী বলেন, পুরো মাসেও আমি এই রাস্তা পরিষ্কার করতে দেখি না। আরেকজন বলেন, বললে নানা রকম অজুহাত দেখায়। এই অসুস্থ, এই এটা নাই, ওটা নাই।

এমন বেহাল দশা দেখা গেছে যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও, লালবাগ, কাঁঠাল বাগান, বনশ্রী ও ধানম-িসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন এলাকায়। উত্তর সিটি কিছুটা পরিচ্ছন্ন হলেও মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ কয়েকটি এলাকায় নিয়মিত বর্জ্য পরিষ্কার করতে দেখা যায়নি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মীদের। একজন স্থানীয় বলেন, সরকার টাকা তো ঠিকই নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সপ্তাহে আসে না তিনদিনও। নগর প্রশাসনের তৎপরতার অভাবে দূষণজনিত নানা রোগ ছড়াচ্ছে বলে দাবি পরিবেশবিদদের। বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, সারা ঢাকা শহরে এখন মহামারী অবস্থা। নগর প্রশাসন একটু নজর দিলেই দূষণজনিত নানা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় খুব বেশি অগ্রগতি ঘটাতে পারেনি। ফলে বিশ্বে প্রতি বছর প্রাণ হারাচ্ছে হাজারও মানুষ। বাস্তুচ্যুত হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান সম্পদ। এ দুর্যোগ প্রকৃতিগত হলেও মানুষ কখনও এর দায়ভার এড়িয়ে যেতে পারে না। বর্তমানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের বিরূপ আচরণ।

মানুষ প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে মূল্যবান গাছ কাটছে পরিণাম না ভেবেই। বন উজাড় করে তৈরি করছে ফসলি জমির মাঠ বা গড়ে তুলছে বসতি। পাহাড় কেটে তৈরি করছে বসতবাড়ি। শিল্প-কারখানার কারণে বাড়ছে কার্বন ডাই অক্সাইড। এখানে সেখানে তৈরি করা হচ্ছে ইটভাটা, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আর এসব কারণে দিন দিন প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে এবং সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ- বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, বজ্রপাত ইত্যাদি। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, বজ্রপাত ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা বেড়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার ভালো উপায় হতে পারে গাছ লাগানো। উপকূলীয় অঞ্চলে বেশি বেশি গাছ লাগানো হলে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। এভাবে ক্ষতির ব্যাপকতা কিছুটা হলেও কমিয়ে আনা সম্ভব। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতা অনেক সময় কল্পনার বাইরে চলে যায়, যা মুহূর্তে কেড়ে নেয় হাজারও মানুষের প্রাণ। নিঃস্ব হয়ে লাখ লাখ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়। এ ধরনের দুর্যোগ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়েই চলেছে, যা আগামী দিনের জন্য একটি অশনিসংকেত।

https://dailysangram.com/post/522935