২৫ এপ্রিল ২০২৩, মঙ্গলবার, ৪:২০

পাঁচ বছরে ৭৩ শতাংশ রোগী বেড়েছে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ২০০০ সালে মশাবাহিত রোগ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় ৫৪ হাজার ২২৩ জন। এই রোগে ওই বছর মৃত্যু হয়েছিল ৪৭৮ জনের। এরপর ২০১৮ সালে ম্যালেরিয়া রোগী কমে হয় ১০ হাজার ৫২৩। ওই বছর মৃত্যু হয়েছিল সাতজনের। আর ২০২২ সালে এই রোগে আক্রান্ত রোগী বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ১৯৫। ওই বছর মারা যায় ১১ জন। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে ম্যালেরিয়া রোগী বেড়েছে ৭৩ শতাংশ এবং মৃত্যু বেড়েছে ৫৭ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ম্যালেরিয়া মশাবাহিত সংক্রামক রোগ। অ্যানোফিলিস নামের এক ধরনের মশার কামড়ের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। এ ছাড়া ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি যদি অন্য কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে রক্ত দান করে, তাহলে তার শরীরেও এই জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল, যেখানে গরম ও আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি, সেসব অঞ্চলে এর প্রাদুর্ভাব বেশি। বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি।

রোগী বেড়েছে ৭৩ শতাংশ, মৃত্যু ৫৭ শতাংশ : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় ১০ হাজার ৫২৩ জন, মৃত্যু হয়েছিল সাতজনের। ২০১৯ সালে এই রোগে আক্রান্ত হয় ১৭ হাজার ২২৫ জন, মারা যায় ৯ জন। ২০২০ সালে আক্রান্ত হয় পাঁচ হাজার ৭৫১ জন, মারা যায় ৯ জন। ২০২১ সালে আক্রান্ত হয় সাত হাজার ২৯৪ জন, মারা যায় ১১ জন। আর সর্বশেষ ২০২২ সালে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় ১৮ হাজার ১৯৫ জন, মারা যায় ১১ জন। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে ম্যালেরিয়া রোগী বেড়েছে ৭৩ শতাংশ এবং মৃত্যু বেড়েছে ৫৭ শতাংশ।

বান্দরবানে ৮০ শতাংশ ম্যালেরিয়ার রোগী : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ ও গবেষক অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ দুটি হতে পারে। প্রথমত, গত তিন বছর আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার নজর ছিল কভিডের দিকে। এ কারণে অন্যান্য রোগবালাই কিছুটা বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, কভিডের সময় বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। সাধারণভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বেশি হলে রোগীর সংখ্যাও বাড়বে।’

তিনি বলেন, দেশের ম্যালেরিয়াপ্রবণ ১৩ জেলার ৭২টি উপজেলার মধ্যে শুধু বান্দরবান জেলায় ৮০ শতাংশ ম্যালেরিয়া রোগী পাওয়া যায়। আবার এই জেলার মধ্যে লামা, আলীকদম ও থানছি—এই তিন উপজেলায় ম্যালেরিয়া রোগী সবচেয়ে বেশি। দুর্গম এলাকা হওয়ায় সেখানে স্বাস্থ্যসেবা খুবই অপ্রতুল। চিকিৎসাসেবা সঠিকভাবে সেখানে পৌঁছানো যায় না। এ ছাড়া জুম চাষি এবং যারা বনে কাঠ কাটতে যায় তাদের ম্যালেরিয়া হয় সবচেয়ে বেশি।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত শহরে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত কোনো রোগী পাইনি। তবে শহরাঞ্চলে এটি যে হতে পারে না, সেটা বলা যাবে না। পৃথিবীতে অনেক দেশেই আরবান ম্যালেরিয়ার রেকর্ড আছে। এ নিয়ে আমাদের গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।’
আর এমন পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর ২৫ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘ম্যালেরিয়া নির্মূলে প্রয়োজন বিনিয়োগ, উদ্ভাবন ও বাস্তবায়ন।’

সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া মৃত্যুর অন্যতম কারণ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আতিকুর রহমান বলেন, ‘বমি হওয়া, কাঁপুনি দিয়ে তীব্র জ্বর, মাথা ব্যথা বা হাত-পায়ে তীব্র ব্যথা ও দুর্বলতা—এগুলো ম্যালেরিয়া রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে মশার কামড়ের ১০ থেকে ১৫ দিন পর এই রোগের উপসর্গ দেখা দেয়।’

তিনি বলেন, ম্যালেরিয়ার পাঁচটি প্রজাতির মধ্যে ফ্যালসিপেরাম সবচেয়ে মারাত্মক। এর দ্বারা সংক্রমণ হলে সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সংক্রমণ মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে বা তার খিঁচুনি হতে পারে। এ ছাড়া রক্তশূন্যতা, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যাওয়া, তীব্র শ্বাসকষ্ট, শরীরের ভেতর রক্ত জমাট বাঁধা, হার্ট ও কিডনি অকার্যকর হয়ে যাওয়াসহ নানা জটিলতা হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় থাকা অবস্থায় বা ঘুরে আসার পর কারো জ্বর হলে বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে, রক্তের অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। রোগের উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এই রোগ প্রতিরোধের জন্য কার্যকর টিকা এখনো বিশ্বব্যাপী বহুল প্রচলিত নয়। কাজেই অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণই এই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায়।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/04/25/1273985