২৫ এপ্রিল ২০২৩, মঙ্গলবার, ৪:১৭

তীর সংরক্ষণে একই স্থানে ২ প্রকল্প!

উন্নয়ন প্রকল্পের নামে যথেচ্ছাচার চলছে। একই নদীর একই স্থানে তীর সংরক্ষণের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে দু’টি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রীকে দিয়ে অনুমোদন করানোর জন্য প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে একটির ৪৩.৩৯ কোটি টাকা এবং অন্যটির ৪৬.৪৭ কোটি টাকা। তবে এই প্রস্তাবনায় আপত্তি জানিয়েছে খোদ পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ। অন্য দিকে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে নতুন যানবাহন ক্রয় বন্ধ রাখতে অর্থ বিভাগের পরিপত্রও মানা হচ্ছে না বলে পরিকল্পনা কমিশন বলছে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সুনামগঞ্জ জেলাটি ভৌগোলিকভাবে হাওর, নদী-নালা, খাল, বিল ইত্যাদি দিয়ে পরিপূর্ণ। প্রবল খরস্রোতা এবং পাহাড়ি ঢলে পরিপূর্ণ কুশিয়ারা নদীর ডানতীরে জগন্নাথপুর উপজেলা অবস্থিত। এই উপজেলার দক্ষিণ সীমানা বরাবর কুশিয়ারা নদী প্রবাহিত হয়েছে, যা পরবর্তীতে সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা ও হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলাধীন ভৈরব বাজারে গিয়ে ধনু (সুরমা) নদীর সাথে মিলিত হয়ে মেঘনা নদীতে পতিত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীটি প্রবল খরস্রোতা রূপ ধারণ করে এবং আঁকাবাঁকা এই নদীটির বিভিন্ন স্থান ভাঙনকবলিত হয়। জগন্নাথপুর উপজেলাস্থ পাইলগাঁও ও আশারকান্দী ইউনিয়ন দু’টি কুশিয়ারার ডানতীরে অবস্থিত এবং দুটি ইউনিয়নই কুশিয়ারা নদীর ভাঙনকবলিত।

বর্ষা মৌসুমে কুশিয়ারা নদীর প্রবল স্রোতে নদী তলদেশের মাটি ক্ষয় হয়ে যায়, যার দরুন নদীতীরের স্লোপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলশ্রুতিতে ভাঙন দেখা দেয়। জগন্নাথপুর উপজেলাধীন পাইলগাঁও ইউনিয়নের ভাঙ্গাবাড়ি ও আশারকান্দী ইউনিয়নের ফেসীবাজার নামক স্থান দু’টি কুশিয়ারা নদীর ভাঙনপ্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এসব এলাকায় দীর্ঘকাল ধরে কুশিয়ারা নদীর ভাঙনে হাট-বাজার, পাকা রাস্তা, ঘর-বাড়ি, সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। ফেনীবাজার ও ভাঙ্গাবাড়ী এলাকায় কুশিয়ারা নদীর ডানতীরে স্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়িত হলে শহরের নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, হাট-বাজার, মসজিদ-মন্দির, স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং জনবসতিপূর্ণ লোকালয়গুলো ভাঙন হতে রক্ষা পাবে। পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে শহরবাসীর জীবনমান বৃদ্ধিসহ সামাজিক নিরাপত্তা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।

এ প্রেক্ষিতে প্রকল্পটি গ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ তিনটি প্রতিষ্ঠান ২০২২ সালের জুনে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পাদন কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলাধীন কুশিয়ারা নদীর ডানতীরে অবস্থিত বাগময়না এলাকায় নদীতীর সংরক্ষণ নামে ৪৫ কোটি ৩৮ লাখ ৯২ হাজার টাকায় প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়। আবার আরেকটি প্রকল্প জগন্নাথপুর উপজেলাধীন কুশিয়ারা নদীর ডানতীরে অবস্থিত ফেসীবাজার ও ভাঙ্গাবাড়ী এলাকায় নদীতীর সংরক্ষণ নামে ৪৮ কোটি ৪৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবনার তথ্য থেকে খরচ বিশ্লেষণে দেখা যায়, একটিতে ৮৫০ মিটার তীর সংরক্ষণে খরচ ধরা হয়েছে ৪৩ কোটি ৩৮ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এখানে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় পড়ছে ৫১ কোটি টাকার বেশি। আরেকটিতে ৯৮৫ মিটার তীর সংরক্ষণে খরচ ধরা হয়েছে ৪৬ কোটি ৪৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এখানে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে ৪৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা। দুটোতে তিন কোটি টাকা প্রতি কিলোমিটারে ব্যবধান। প্রকল্পে ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দু’টি মোটরসাইকেল ক্রয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থ বিভাগের গত ৩ জুলাই তারিখের এক পরিপত্রে বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে নতুন যানবাহন ক্রয় বন্ধ থাকবে মর্মে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আবার একটি প্রকল্পে দু’টি ঘাটলা নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধন বাবদ ৯০ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। অন্য প্রকল্পের আওতায় একটি ঘাটলা নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধন বাবদ ৯০ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ৬৪৫টি বনায়নবাবদ ১০ লাখ (প্রতিটি ৬০৮ টাকা) টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্মপ্রধান প্রকল্পটি দু’টির ব্যাপারে বলছেন, একই উপজেলার একই নদীতে একই সময়ে ৪৮.০৫ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রস্তাবিত এবং আবার ৪৫.৩৩ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ‘সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলাধীন কুশিয়ারা নদীর ডানতীরে অবস্থিত বাগময়না এলাকায় নদীতীর সংরক্ষণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি পৃথকভাবে প্রস্তাব করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ ছাড়া, সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকা পরিপত্রের অনুচ্ছেদ ১.১.১১ এর ডিজাস্টার অ্যান্ড ক্লাইমেট রিস্ক ইনফরমেশন প্লাটফরম (ডিআরআইপি) ব্যবহার করে ডিজাস্টার ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট করার জন্য বলা হয়েছে।


https://www.dailynayadiganta.com/last-page/743297