২০ এপ্রিল ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ২:৪৪

ঈদ পণ্যেও ঠকছে মানুষ

ঈদ উপলক্ষে বিশেষ খাবারের আয়োজন থাকে ঘরে ঘরে। এতে বাজারে ঈদকেন্দ্রিক প্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এই চাহিদাকে পুঁজি করে বাড়তি মুনাফার লোভে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাজারে একই চিত্র দেখা গেছে। রোজার আগে থেকেই অতি প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম চড়া। রোজার শেষের দিকে এসে এখন ঈদপণ্য নিয়েও কারসাজি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বাজারে মুরগি ও গরুর মাংসের দাম আগে থেকেই চড়া। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে আরও ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে মাংসের দাম। এ ছাড়া নতুন করে বেড়েছে চিনি, পোলাওর চাল, দুধ, সেমাই ও কিসমিসের। একইসঙ্গে মসলা জাতীয় পণ্যের মূল্যও বেড়েছে।

ফলে বরাবরের মতো এবারও ঈদপণ্য কিনে ঠকছে মানুষ। এতে বেশি বিপাকে পড়েছে নি¤œ ও মধ্য আয়ের মানুষেরা। এমনিতেই বছরজুড়েই বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সংসার খরচের ফর্দ কাটছাঁট করে চলতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এ অবস্থায় ঈদকে ঘিরে পণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাদের।

রোজা সামনে রেখে সরকার চিনি আমদানিতে শুল্কছাড় দিয়েছিল। তাতেও রোজার মধ্যে বাজারে চিনির দাম কমেনি। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়তি দামেই চিনি কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। দফায় দফায় চিনির দাম বেঁধে দেয়া হলেও ঈদের আগে চিনির দাম আরেক দফা বেড়েছে। এখন ১২০ থেকে ১২৫ টাকা কেজিতে চিনি কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। যা দুই দিন আগেও ছিল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজি। রাজধানীর বাজার ঘুরে ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে মাসখানেকের মধ্যে প্রতি কেজি পোলাও চালের দাম বেড়েছে ১০-৪০ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি পোলাও এর চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৪০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগেও ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৯০-১০০ টাকায়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১৫ থেকে ২২০ টাকা। যা এক মাস আগে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকায়। কিছুদিন আগে যা ছিল ২৮০-২৯০ টাকা। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। পাশাপাশি প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকায়। যা এক মাস আগে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এ ছাড়া বাজারে ৫০০ গ্রামের ডিপ্লোমা ও ডানো প্যাকেটজাত গুঁড়োদুধ বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকায়। যা এক মাস আগে ৩৩০-৩৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক কেজির ফ্রেশ প্যাকেটজাত গুঁড়োদুধ বিক্রি হচ্ছে ৬২০ টাকায়। যা এক মাস আগে ৫৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক কেজি ওজনের মার্কস গুঁড়োদুধ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা, যা আগে ৫৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ২০০ গ্রামের প্যাকেটজাত লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। যা এক মাস আগে ছিল ৩৫ টাকা। ২০০ গ্রামের প্যাকেটজাত চিকন সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়। যা আগে বিক্রি হয়েছে ৩০-৩৫ টাকায়। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ছোট এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়। যা সরকারের বেঁধে দেয়া দরের চেয়ে লিটার প্রতি প্রায় ৩৯ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দামও হঠাৎ বেড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি লিটার ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ১৭০-১৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ইব্রাহিমপুরে বাজার করতে আসা আহসান উল্লাহ বলেন, নিত্যপণ্যের বাজার এমনিতেই অস্থির। সবকিছুর দাম চড়া। এখন ঈদ সামনে রেখে বাজারে আরও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। প্রতিবছরই ঈদের সময় বিক্রেতারা কারসাজি করে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়। রমজান মাসজুড়েও ব্যবসায়ীদের কারসাজি থেমে থাকেনি। এমন অবস্থা হলে সাধারণ মানুষের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে যাবে।

কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, রোজা শুরু হলেই অসাধু ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে পড়ে কারসাজি শুরু করে। পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এটা আগেও ছিল এবারও দেখা যাচ্ছে। এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের চাপে আছে মানুষ। এ অবস্থায় ঈদের পণ্যেও দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষকে ভোগাবে। তাই সরকারের উচিত বাজার মনিটরিং করা। সরকারের অনেক সংস্থা আছে তাদের দায়িত্ব বাজার তদারকি করে ব্যবস্থা নেয়া।

https://mzamin.com/news.php?news=52081