২০ এপ্রিল ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ২:৪৪

ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অসহনীয় ভোগান্তি

দাবদাহে ফলন নিয়ে শঙ্কা, ঝরছে আম-লিচুর গুটি

বোরো ধান নিয়ে চিন্তায় কৃষক

বৈশাখের প্রখর রোদে প্রকৃতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। মেঘহীন আকাশ, বৃষ্টির দেখা নেই। প্রকৃতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করছে। অস্বাভাবিক খরতাপে বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রচণ্ড দাবদাহে আম-লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে। ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেচনির্ভর বোরো ধান নিয়েও কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। বিদ্যুতের লোডশেডিং-ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এছাড়া নানা রকম রোগ-বালাই ছড়িয়ে পড়ছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

রংপুর : রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের আকাশ মেঘহীন। বৃষ্টির দেখা নেই। এমন পরিস্থিতিতে সেচনির্ভর বোরো ধানের উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে। প্রচণ্ড রোদে আম-লিচুর গুটিও ঝরে পড়ছে। অবশ্য আবহাওয়া অফিস জানায়, দুই-একদিনের মধ্যে রংপুরসহ আশপাশ এলাকায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এপ্রিল-মে মাসে বাংলাদেশ ও পাশের অঞ্চলে মাঝেমধ্যে বিকালের দিকে বজ বিদ্যুৎসহ যে প্রচণ্ড কালবৈশাখি হয়। কালবৈশাখি ঝড় উত্তর দিক থেকে প্রবাহিত হয়। এ ঝড়-বৃষ্টি অনেক সময় ক্ষতিকারক হলেও তপ্ত আবহাওয়া শীতল করতে ভূমিকা রাখে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বৈশাখে বৃষ্টি গুরুত্বপূর্ণ হলেও এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও বৃষ্টির দেখা নেই। বৃষ্টি না হওয়ায় প্রকৃতিকে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করছে। ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি দেখা দিয়েছে। অনেক স্থানে ডায়রিয়ার প্রকোপও দেখা দিয়েছে। গরমে বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে। রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান বলছেন, এবার প্রকৃতি বিরূপ আচরণ করছে। তবে দুই একদিনের মধ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

তারাগঞ্জ (রংপুর) : তীব্র গরমের পাশাপাশি বিদ্যুতের ঘন ঘন আসা-যাওয়ায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রচণ্ড খরতাপে মানুষ হাঁপিয়ে উঠেছে। অতিরিক্ত গরমে সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ দেখা দিয়েছে। জন্ডিস ও ভাইরাসজনিত জ্বর ছড়িয়ে পড়ছে। প্রয়োজনছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। অসহায় হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষজন। পানির অভাবে ইরি-বোরো ক্ষেত নিয়ে কৃষকরা বিপাকে পড়ছেন।
রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ তারাগঞ্জ উপজেলা সাব জোনাল অফিসের ডিজিএম আশরাফুল ইসলাম বলেন, তীব্র দাবদাহে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ঘন ঘন লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

টাঙ্গাইল : বিদ্যুতের সীমাহীন লোডশেডিংয়ে রোজাদাররা সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন। সেহরি, ইফতার ও তারাবিতে বিদ্যুৎ না থাকায় তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। লাগামহীন লোডশেডিংয়ে অনেক পোলট্রি খামারে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। খামারের মুরগি মারা যাচ্ছে। বোরো চাষও ব্যাহত হচ্ছে। শহরের তুলনায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে।
শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেহরি ও ইফতারের সময় টানা তিন থেকে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুৎ না থাকায় সেচ পাম্প বন্ধ থাকায় বোরো চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। পোলট্রি খামারিরা জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে প্রায় প্রতিটি খামারের মুরগি মারা যাচ্ছে।

টাঙ্গাইল পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (পিডিবি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ওবায়দুল ইসলাম জানান, এখানে বিদ্যুতের চাহিদা ২১০ মেগাওয়াট হলেও ১৬৫ মেগাওয়াট পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে জেলা ও উপজেলায় লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। অফিস-আদালত বন্ধ হলে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দাগনভূঞা (ফেনী) : বেপরোয়া লোডশেডিংয়ে উপজেলা সদরের হাটবাজার ও মার্কেটে ঈদ বাজারে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে হাঁপিয়ে উঠেছে জনজীবন।

প্রতিটি এলাকা গড়ে ১৭ থেকে ১৮ ঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের কবলে থাকছে। আরইবির ফেনী সমিতির দাবি-দাগনভূঞা উপজেলার তিনটি উপকেন্দ্রে ৩০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে মাত্র ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এজন্য লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/667123