২০ এপ্রিল ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ২:৪০

আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা ঈদের ছুটিতে

পুলিশ বলছে : রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট, তল্লাশি-পেট্রোলিং থাকবে, মার্কেটে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

নাছির উদ্দিন শোয়েব: পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ফাঁকা হতে শুরু করেছে রাজধানী ঢাকা। দীর্ঘ ছুটিতে রাজধানী ছেড়ে গ্রামে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ছুটে যাচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। পরিবার-পরিজন নিয়ে গ্রামের বাড়ি গিয়ে সবার সঙ্গে ঈদ উৎসবে মেতে ওঠার আনন্দই আলাদা। হাজারো ঝক্কি-ঝামেলা সত্ত্বেও নাড়ির টানে বাড়িমুখো হন সবাই। খালি বাসা-বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে ঈদের ছুটি কাটাতে ছুটে যান গ্রামের বাড়িতে। তাই ঈদের সময় অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায় নগরী। ফাঁকা রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত সাধারণ মানুষ। এই ফাঁকা নগরীতে হঠাৎ বেড়ে যায় গ্রিল কাটা পার্টির সদস্যদের অপতৎপরতা।

বিশেষ করে এবার ঈদের আগে ঢাকায় কয়েকটি বড় মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনায় ব্যবসায়ীরা একরকম পথে বসে গেছেন। একের পর এক মার্কেটে রহস্যজনক আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন রাজধানীবাসীও। এ ঘটনা নাশকতা কিনা তা নিয়ে তদন্ত চলছে। এ অবস্থায় বাসা-বাড়ি খালি রেখে ঈদ করতে গ্রামে যেয়েও স্বস্তি পাবেন না নগরীর বাসিন্দারা। পুলিশ সদস্যরা রাস্তায় টহলে থাকলেও তালা ঝুলানো বাসায়, চুরি, ডাকাতি বেড়ে যায়। গ্রিল কেটে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে অবাধে পালিয়ে যায় অপরাধী চক্রের সদস্যরা। তাই ঈদের সময় গ্রিল কাটা পার্টিকে ঘিরে যত ভয় মানুষের। এছাড়াও এসময় ফাঁকা রাস্তায় বেড়ে যায় ছিনতায়ের ঘটনা। শহর ফাঁকা হলে বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে রাস্তায় চুরি, ছিনতাই বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।

সেই আশঙ্কা থেকে পাড়া-মহল্লার সিকিউরিটি গার্ডদের তৎপর থাকতে থানা পুলিশের মাধ্যমে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ডিএমপি থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিটি থানা এলাকায় অলিগলি ও মূল সড়কে পুলিশ গাড়ি দিয়ে ও হেঁটে পেট্রোলিং করবে। বিভিন্ন পয়েন্টে থাকবে চেকপোস্ট, সন্দেহভাজনদের করা হবে তল্লাশি। ঈদের জামাতকে কেন্দ্র করে নেয়া হচ্ছে নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাজধানীর ঈদগাহগুলোতে জামাত শুরুর আগেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে ডিএমপি ও র‌্যাব। দেশের সবগুলো ব্যাটালিয়ন নিজ নিজ এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। যদিও এরই মধ্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, ঈদের সময় মূল্যবান সামগ্রী ফাঁকা বাড়িতে রেখে যাবেন না। টাকা-পয়সা ও গহনা আত্মীয়-স্বজনের কাছে রেখে যান অথবা সঙ্গে করে নিজে নিয়ে যান। গতকাল দুপুরে ঈদ উপলক্ষে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাকা ফাঁকা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এ বিষয়ে আইজিপি বলেন, ঈদের সময় ফাঁকা ঢাকায় রাত কিংবা দিন সব সময় পুলিশের কড়া নিরাপত্তা থাকবে। শুধু ঢাকাতেই নয় বড় বড় শহরগুলোসহ গ্রামেও ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, অনেকেই গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সময় ঢাকার বাসায় স্বর্ণালংকার, টাকা-পয়সা রেখে যান। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। মূল্যবান জিনিসপত্র রেখে একেবারে বাসা ফাঁকা রেখে যাওয়া উচিত নয়। যদি যেতে চান সেক্ষেত্রে টাকা-পয়সা ও গহনা নিকট আত্মীয়-স্বজনের কাছে রেখে যান অথবা সঙ্গে করে নিজে নিয়ে যান।

পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আমাদের গোয়েন্দারা মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছে। সেখানে এ ধরনের আশঙ্কার কিছু তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি আরও জোরালোভাবে খতিয়ে দেখতে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সজাগ রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে যদি কোনো গোষ্ঠী দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চেষ্টা চালায় তা হলে পুলিশ তা কঠোর হাতে দমন করবে। পাশাপাশি আগাম প্রস্তুতি হিসেবেও পুলিশের কিছু পদক্ষেপ নেওয়া রয়েছে। এছাড়া টিকিট কালোবাজারি, পরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি, যাত্রী হয়রানি, চাঁদাবাজি, অজ্ঞান পার্টির তৎপরতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘœ ঘটতে পারে। এসব বিষয় নিয়ন্ত্রণে সরকারকে জোর তৎপরতা চালাতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে।

অন্যদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, রাজধানীর প্রায় প্রতিটি মার্কেটে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপি হেডকোয়ার্টারে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি ঈদের আগে একের পর এক আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি বড় দুটি আগুন লাগার ঘটনা প্রায় একই সময়ে ঘটেছে। এ আগুন লাগার ঘটনা নাশকতা হতে পারে। এ জন্য রাজধানীর প্রায় প্রতিটি মার্কেটে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ঈদকে কেন্দ্র করে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি নিউ সুপার মার্কেটে আগুনের পর শপিং মল ও মার্কেটকেন্দ্রিক গোয়েন্দা নজরদারি এরই মধ্যে বাড়ানো হয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশে ঈদকে উৎসবমুখর রাখতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হলেও নাশকতার কোনো হুমকি নেই বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্তরা। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিশেষায়িত বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঈদের ছুটিতে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে থানা পুলিশের চেকপোস্ট, তল্লাশি, গাড়িতে ও হেঁটে পেট্রোলিং থাকবে। গুজব, মিথ্যা তথ্যের অপপ্রচার ঠেকাতে পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সাইবার পেট্রোলিং অব্যাহত থাকবে। রাজধানীকে নিরাপদ রাখতে থানা পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবও মাঠে থাকবে। ঈদকেন্দ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে র‌্যাবের পক্ষ থেকে দেশের প্রতিটি ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব সদরদপ্তর। ঈদ নিরাপত্তা নিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেছেন, প্রতি বছরই ঈদ বা বড় উৎসবকে ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। অভিজ্ঞতার আলোকে কোনো একটি বিষয়কে অ্যাড্রেস করার প্রয়োজন মনে হলে বা গোয়েন্দা তথ্য থাকলে সে বিষয়টা যোগ হয়। তিনি বলেন, এবার ঈদকে ঘিরে হুমকির কোনো তথ্য নেই, তবে নিউ মার্কেটে আগুনের পর আমরা মনোযোগ দিয়েছি। আমরা প্রতিটা মার্কেটে দোকান মালিক সমিতি ও বড় বড় মার্কেটের সংশ্লিষ্টদের সিকিউরিটি নিয়ে ব্রিফ করেছি। আমাদের গোয়েন্দারা তৎপর রয়েছে। কেউ নাশকতার চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করার প্রস্তুতি রয়েছে।

https://dailysangram.com/post/522611