১৯ এপ্রিল ২০২৩, বুধবার, ২:১১

গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং

সরকারের পক্ষ থেকে ক্রমাগত বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়িয়ে পরিস্থিতিতে উন্নতি ঘটানোর দাবি জানানো এবং এ বিষয়ে প্রচারণা চালানোা হলেও বাস্তবে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে সে দাবি ও প্রচারণার পক্ষে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। মানুষের আলোচনায় এবং গণমাধ্যমের খবরে বরং বিপরীত তথ্যই বেরিয়ে আসছে।

যেমন গতকাল একটি জাতীয় দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, আগামী মে মাসে সর্বোচ্চ চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে-এমন অনুমানের ভিত্তিতে উৎপাদন কার্যক্রম চালানো হচ্ছিল। কিন্তু গরম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় চলতি মাস এপ্রিলেই চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে ১৮ এপ্রিল রাতে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৬০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে। অর্থাৎ মে মাস আসারও আগেই বিদ্যুতের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে পার্থক্য বাড়তে শুরু করেছে। ওদিকে অন্য এক কারণের উল্লেখ করতে গিয়ে প্রকাশিত খবরে জানানো হয়েছে, নিজস্ব কয়লায় চালিত বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট বেশ কিছুনি ধরে বন্ধ হয়ে আছে। এসব কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে পার্থক্য শুধু থেকেই যাচ্ছে না, পার্থক্য বাড়ছেও। সে কারণে তথ্যাভিজ্ঞদের ধারণা, গরম যত বাড়বে পরিস্থিতিরও ত বেশি অবনতি ঘটতে থাকবে।

এ অবস্থারই শিকার হয়েছে দেশের পল্লী অঞ্চলের সাধারণ মানুষ তথা বিদ্যুতের গ্রাহকেরা। ময়মনসিংহ, নোয়াখালী ও সিলেটসহ বেশির ভাগ এলাকার গ্রামাঞ্চলে বিতরণ সংস্থাগুলোকে যে প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে সেই পিডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রামপাল এবং অন্য কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে কারিগরি ত্রুটির কারণে উৎপাদন এবং সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে বলে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। কিছুদিন আগে রাতের বেলায় একটা থেকে তিনটা পর্যন্ত লোডশেডিং করা হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র মেরামত করার কারণে পিডিবিকে নতুন পর্যায়ে লোডশেডিংয়ের পন্থা অবলম্বন করতে হচ্ছে। সে কারণেই চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। চাহিদার তিনভাগের এক ভাগ বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না বলে লোডশেডিংয়েরও কোনো নিয়ম বা রুটিন মানা যচ্ছে না।

এ ব্যাপারে সমস্যায় পড়েছে আরইবি তথা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। আরইবিকে লোড ভাগাভাগি করে বিদ্যুৎ সরবরাহ হরতে হচ্ছে। উদাহরণ দিতে গিয়ে আরইবির বিতরণ ও পরিচালন কার্যক্রমের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত রোববার চাহিদা যেখানে ছিল ৯ হাজার ৫৫০ মেগাওয়াট সেখানে আরইবিকে সরবরাহ করা হয়েছিল ৭ হাজার ৭৬৬ মেগাওয়াট। ফলে ১ হাজার ৭৮৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে। সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং করা হয়েছে খুলনা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে। ঢাকা বিভাগে লোডশেডিং করা হয়েছে সামান্য পরিমাণে। উল্লেখ্য, গত বছরের একই সময়ে আরইবি মাত্র ১৩৩ মেগাওয়াট লোডশেডিং করেছিল। অর্থাৎ বিদ্যুতের উৎপাদন অনেক কমে গেছে এবং এখনো কমছে।

আমরা মনে করি, এমন অবস্থা চলতে পারে না। কারণ, বিদ্যুতের সঙ্গে কৃষি ও শিল্পের উৎপাদন থেকে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া পর্যন্ত অনেক বিষয় জড়িত রয়েছে। এজন্যই প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের পক্ষ থেকে সময়ে সময়ে যে ১০/১৫ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর গল্প শোনানো হয়ে থাকে সে বিদ্যুৎ তাহলে গেলো বা যাচ্ছে কোথায়?

পর্যবেক্ষকরা কিন্তু মনে করেন, বাস্তবে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের নামে দলীয় লোকজনকে ব্যবসা পাইয়ে দেয়ার এবং পকেট ভারি করার ব্যবস্থাই শুধু করা হয়েছে। এজন্যই বছরে ২৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দেয়ার পরও সংকটের সমাধান হচ্ছে না। কারণ, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্র স্থাপনই করা হয়েছিল বাতিল ও পরিত্যক্ত যন্ত্রপাতি দিয়ে। এর ফলে কোনো কেন্দ্রেই চাহিদা বা চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। কেন্দ্রগুলো বরং যখন-তখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলেও ব্যাহত হয়েছে শিল্পের উৎপাদন। তাছাড়া জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পরিবহনের ব্যয়। ওদিকে চাষাবাদের খরচও অনেক বেড়ে গেছে। একই কারণে বেড়ে চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের মূল্য।

সমগ্র এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যে দেশপ্রেমিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সরকারের উচিত জনগণের কষ্ট ও ভোগান্তিকে প্রাধান্য দেয়া এবং রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সম্পাদিত অসম চুক্তি বাতিল করা।

গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোকে সংস্কার করে সেগুলোর মাধ্যমে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপও নিতে হবে। নাহলে মানুষের কষ্ট ও ভোগান্তিই শুধু বাড়বে না, শিল্পায়নের সঙ্গে সামগ্রিক সমৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হতে থাকবে। এজন্যই লোডশেডিংসহ বিদ্যুতের সংকট কাটিয়ে ওঠার পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই।

https://dailysangram.com/post/522479