১৮ এপ্রিল ২০২৩, মঙ্গলবার, ১০:৫৬

রাজধানীতে পানিসঙ্কট অভিযোগ করেও মিলছে না প্রতিকার

রেকর্ড গরমের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কিনতেও মিলছে না ওয়াসার পানি। ওয়াসার আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। অন্য দিকে পানি পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত দাম নেয়ার অভিযোগ করেছেন অনেকে। এতে এই সময়ে তীব্র সমস্যায় পড়েছেন ওই সব এলাকার বাসিন্দারা। গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীর চ্যামেলীবাগের একাংশ, আদাবর, শেখেরটেক, রায়ের বাজার, মেহেদীবাগ, মোহাম্মাদিয়া হাউজিং, মান্ডা, কুসুমবাগ এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানির সঙ্কট তীব্রভাবে দেখা দিয়েছে।

ঢাকা ওয়াসার দাবি চাহিদার তুলনায় বেশি পানি উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে তাদের। অন্যান্য সময় বা শীতকালে রাজধানীতে দৈনিক পানির চাহিদা থাকে ২১০ কোটি লিটার থেকে কখন কখনো ২৩০-২৪০ কোটি লিটারের। কিন্তু গরমকাল এলে এটা বেড়ে ২৬০ লিটারে গিয়ে দাঁড়ায়। তবে বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার প্রতিদিন প্রায় ২৯০ কোটি লিটার পানির উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন এখন গড়ে ২৬০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে ঢাকা ওয়াসা।

তবুও কেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানির এমন সঙ্কট, সমস্যা? সে বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম সহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, সার্বিকভাবে ওয়াসার পানি সরবরাহের কোনো সমস্যা নেই। তবে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় স্থানীয়ভাবে কিছু কিছু এলাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি, এর সমাধানে আমাদের কাজ চলছে। আশা করা যায় খুব দ্রুতই এমন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার পানি শোধনাগার রয়েছে পাঁচটি। তবে সংস্থাটি পানি পাচ্ছে চারটি শোধনাগার থেকে। চলতি বছরে উপরিতলের পানির উৎপাদন ৭০ শতাংশে উন্নীত করার কথা থাকলেও সেই লক্ষ্য পূরণ এখনো করতে পারেনি ঢাকা ওয়াসা। বর্তমানে উপরিতলের পানি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। আর বাকি ৬৫ শতাংশ ওয়াসার সরবরাহ করাব পানি তারা পাচ্ছে ভূগর্ভস্থ থেকে।

রাজধানী চ্যামেলীবাগের একজন বাসিন্দা জানান, তাদের ও আশপাশের বাসায় গত তিন দিন ধরে লাইনে পানি আসছে না। ফলে এসব ভবনের ভাড়াটিয়ারা অমানবিক সময় অতিবাহিত করছেন। গতকাল সারা দিন ওয়াসার সাথে যোগাযোগ করে সন্ধ্যায় দুই গাড়ি পানি পেয়েছেন। কিন্তু তাতে সমাধান হয়নি। কারণ লাইনে পানি নেই।

এ বিষয়ে ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, বৃষ্টি কম, এর মধ্যে জনসংখ্যা ও চাহিদা বাড়ায় ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নামছে। এ জন্য অনেক পানির পাম্প বিকল হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া লোডশেডিংয়ের কারণেও পানির উৎপাদন ও সরবরাহ কমেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় নতুন পানির লাইন বসানোর কাজ চলছে, এ জন্য কিছু এলাকায় পানির সঙ্কট হতে পারে। আবার অনেক এলাকায় পাম্প বসানোর জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে রেশনিং করেই চলতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াসার এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায় এখন ২৪ ঘণ্টা পানি পাওয়া যাচ্ছে। তবে প্রচণ্ড গরমে লোডশেডিং হচ্ছে, এতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় কিছু জায়গায় সমস্যা হতে পারে।

তিনি বলেন, জনসংখ্যা বাড়ার ফলে রাজধানীতে নতুন নতুন ভবন হচ্ছে। পানির চাহিদা বাড়ছে। অপর দিকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে, পানির উৎপাদনও কমছে। পাশাপাশি বৃষ্টি কম। ভূমির ওপর কংক্রিটের আচ্ছাদন বেড়ে যাওয়ায় পানির রিচার্জ কম। ওয়াসার পাম্প বসানোর নতুন জায়গা পাচ্ছি না। আর সরকারের নীতি হচ্ছে তারা পাম্পের জন্য জায়গা কিনবে না।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/742265