১৭ এপ্রিল ২০২৩, সোমবার, ১১:৪৪

শিক্ষা ব্যবস্থায় বিজাতীয় আগ্রাসন

ড. আবদুল লতিফ মাসুম

প্লেটোর রিপাবলিক একটি চিরায়ত গ্রন্থ। রাজনীতি এর প্রধান প্রতিপাদ্য হলেও এই গ্রন্থের একটি দ্বিতীয় শিরোনাম আছে- ‘A Book Concerning Education’। প্লেটো শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে রাষ্ট্রিক লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করেছেন। এখন আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ‘Nation Building’ বা জাতি গঠন বলতে যা বোঝানো হয় প্লেটোর শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল সেই একই উদ্দেশ্য অভিসারী। তিনি এমন একটি দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষাব্যবস্থার নির্দেশ করেন যা অনুসরণের মাধ্যমে রাষ্ট্র তার কাক্সিক্ষত নাগরিক গঠন করবে। এই নাগরিকদের সর্বোচ্চ পরিশীলিত অংশ রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। প্লেটো এদের নাম দিয়েছেন ‘Philosopher King’ বা দার্শনিক রাজা। মূলত কাক্সিক্ষত নাগরিক সৃষ্টির ব্যাপারে শিক্ষা ব্যবস্থাই হচ্ছে প্রধানতম প্রক্রিয়া। নিষ্ঠাবান নাগরিক গড়ে তোলা বা মানুষ গড়ার এই প্রক্রিয়াটি সমাজবিজ্ঞানে Socialization Process বা সামাজীকীকরণ প্রক্রিয়া বলে কথিত। পরিবার-পরিজন, পাড়া-প্রতিবেশী, শিক্ষক-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম বিশেষত আজকের তথ্য-প্রযুক্তি এই মানুষ গঠনে ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে শিক্ষা অর্থাৎ পঠন-পাঠন, বিষয়সূচী, শিক্ষন পদ্ধতি এই মানস পরিবর্তনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মগজ ধোলাই নামেও এর জনপ্রিয় কথন আছে। এভাবে একজন শিশু বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী, সৎ-অসৎ, দেশপ্রেমিক বা দুর্নীতিবাজ হয়ে উঠে।

রাষ্ট্র এই শিক্ষা ব্যবস্থার ধারক ও বাহক। রাষ্ট্র এই ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক ও নির্দেশক। গভর্ন্যান্স বা শাসন প্রক্রিয়া দ্বারা সরকার এই শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা করে। প্রতিটি সরকারেরই একটি আদর্শিক বা নীতিগত অবস্থান থাকে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন সমাজতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হতো। পাশ্চাত্য পৃথিবী গণতন্ত্র দ্বারা শাসিত। বর্তমান বিশে^র চীন, ভিয়েতনাম, কিউবা বা উত্তর কোরিয়ার মতো দেশ স্ব স্ব রাষ্ট্রিক আদর্শ দ্বারা পরিচালিত। ভুল হোক শুদ্ধ হোক সেটাই তাদের অনুসৃত নীতি। তাদের বড় রকম একটি শক্তি হলো তারা স্বাধীন ও সার্বভৌম। ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান হওয়ার পর প্রতিটি রাষ্ট্রই নিজ নিজ স্বকীয়তা ও স্বাধীনতা নিয়ে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু সোভিয়েত মার্কিন দ্বিপাক্ষিক প্রতিযোগিতার পর এখন প্রতিযোগিতা বহুপাক্ষিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকগণ আঞ্চলিত প্রভূত্বের প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করছেন। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এর একটি নিকৃষ্ট উদাহরণ। এভাবে ভারত, চীন, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক ও ব্রাজিল নতুন শক্তি হয়ে আঞ্চলিক প্রভুত্ব কায়েম করতে চায়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাটি ছিল পরোক্ষ ও দূরবর্তী। এখন আঞ্চলিক বলয়ে প্রভুত্ব বা আগ্রাসনের বিষয়টি প্রত্যক্ষ ও প্রবল। আগেকার বিশ্বের প্রতিযোগিতাটি ছিল গতানুগতিক- সামরিক, রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক। নতুন বৈশ্বিক প্রযুক্তি প্রতিযোগিতার ফলে এই প্রভাব প্রতিপত্তির বিষয়টি নতুন তাৎপর্য অর্জন করেছে। এটি এখন কালচারাল আগ্রাসন বলে কথিত হচ্ছে। আর কালচার শব্দটি হচ্ছে সর্বাত্মক। এটি শুধুমাত্র ডিপ্লোমেসি বা কূটনীতিতেই সীমাবদ্ধ নয়। ব্যবসা-বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং শিক্ষা সহায়তার মতো সর্বব্যাপ্ত। একটি সরকার যদি স্বকীয় ধারায় স্বাধীন থাকে তার নিজ আদর্শে থাকে বলিয়ান, তাহলে সে তার ন্যাশনাল পাওয়ার বা জাতীয় শক্তি প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়। আঞ্চলিক পরাশক্তি বা প্রতিবেশীর পরাক্রমকে পর্যুদস্ত করতে সক্ষম হয়। আর জনগণ যদি না থাকে তাদের সাথে, জাতীয় শক্তি সমন্বিত না হয়, তাহলে জাতীয় শক্তি প্রয়োগের সক্ষমতা অর্জিত হয় না। সেক্ষেত্রে কালচার বা শিক্ষা ব্যবস্থা কোনটিই অপ্রতিরোধ্য থাকে না। দেশটি পরিণত হয় স্যাটেলাইট স্টেট বা পরনির্ভরশীল দেশে। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় পররাষ্ট্রনীতি অথবা শিক্ষানীতি সবকিছুই এই বাস্তবতায় বিচার্য।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে আবির্ভূত হলেও শীগ্রই দেশটি বিজাতীয় আগ্রাসনে নিপতিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রযতœ নির্ভর হয়ে উঠে। বাংলাদেশের সংবিধান প্রতিবেশীর আদলে রচিত হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি একটি সমীকরন নির্ভর হয়ে উঠে। সে অবস্থায় শিক্ষা ব্যবস্থায়ও প্রতিবেশী মডেল হয়ে উঠে। কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনে ধর্মনিরপক্ষেতা চাপিয়ে দেওয়া হয়। বিজ্ঞান মনষ্কতার মতো অনেক ভালো ভালো কথা থাকলেও জনগণের আস্থা-বিশ্বাস ও আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি এই কমিশনে। বিগত ৫০ বছরে দশটি শিক্ষা কমিশন গঠন শিক্ষা ক্ষেত্রে অস্থিতিশীলতার প্রমাণ দেয়। ১৯৭৭ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একটি জীবন ঘনিষ্ঠ ও মাটি-মানুষের কাছাকাছি শিক্ষানীতি গ্রহন করেন। জাতীয় মূল্যবোধ ভিত্তিক ও বাস্তবতার আলোকে গৃহীত এই শিক্ষানীতি ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বহাল থাকে। এই সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ফিরে আসে। জাতীয় আদর্শ, সংবিধানের মূলনীতি, পররাষ্ট্রনীতি ইত্যাদির পরিবর্তনের সাথে সাথে শিক্ষা নীতিতেও পরিবর্তন ঘটে। সামশুল হক কমিশন কুদরত-ই-খুদার কমিশনকে অনুসরণ করে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়কালে আওয়ামী লীগ সতর্কতার সাথে শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনয়ন করে। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে এই ২০২৩ সাল পর্যন্ত তারা পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের আদর্শ তথা ইসলামী মূল্যবোধকে বিতাড়ন করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। তাদের ঘোষিত শিক্ষানীতিতে ‘অসাম্প্রদায়িক ও বিজ্ঞানমনস্ক’ শিক্ষানীতির কথা বলা থাকলেও প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত বিজাতীয় আদর্শ সন্নিবেশের প্রমাণ মেলে। জাতীয়তাবাদী শক্তি ক্ষমতায় থাকাকালে পাঠ্যসূচীতে জাতীয় আদর্শের প্রতিফলন ঘটে। গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ইসলামী মূল্যবোধ ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র ইতিহাস বিকৃতি ঘটায়নি, পাঠ্য-পুস্তকেও দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে গুরুত্ব না দিয়ে বিজাতীয় বিষয়াদি প্রাধান্য দেয়। প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ে ইসলামী মূল্যবোধ, মুসলিম ঐতিহ্য ও ভাবধারা পরিত্যক্ত হয়। এক পর্যায়ে আলেম-ওলামাদের প্রতিবাদের মুখে সামান্য পরিবর্তন সাধিত হলেও মৌলিক কোন পরিবর্তন হয়নি। শুভংকরের ফাঁকি দিয়ে তারা জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চায়। যেমন- তারা বারবার বলছে, বোর্ড পরীক্ষায় ইসলামী শিক্ষা পরিত্যক্ত হয়নি। অথচ বিষয়টি বাধ্যতামূলক থেকে ঐচ্ছিকে পরিণত করা হয়েছে। সরকার প্রতিবাদ সত্ত্বেও প্রতিবছর নতুন বই প্রনয়ন করতে গিয়ে নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করছে। প্রমাণ হিসেবে এ বছর প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর বর্ণনা দেওয়া যায়। আমরা সবাই জানি ভবিষ্যত নাগরিক তথা শিশু-কিশোর মানুষ গঠনের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে ষষ্ঠ শ্রেণী ও সপ্তম শ্রেনীর পাঠ্য যা এবার প্রকাশিত হয়েছে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ষষ্ঠ শ্রেনীর জন্য নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তক- ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান। বইটি খুললেই দ্বিতীয় প্রচ্ছদে কয়েকটি ছবির সাক্ষাৎ মিলবে। এখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ কয়েকজন বিদেশির ছবি সংযোজন করা হয়েছে। মিসেস গান্ধীর ছবিটি বড় করে দেখানো হয়েছে। এরপরে যাদের ছবি রয়েছে তারা হলেন- জেনারেল স্যাম মানেকশ, এডওয়ার্ড কেনেডি, পন্ডিত রবিশংকর, উইলি ব্রান্ড, আলেক্স কোসিজিন, মার্শাল টিটো, আন্দ্রে মালরোঁ, জে.এফ.আর জ্যাকব, সিডনি শনবার্গ, এলেন গিন্সবার্গ, সায়মন ড্রিং ও উইলিয়াম এ এস অর্ডারল্যান্ড। বলা হয়েছে, এরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী কয়েকজন বিদেশী। এই বিদেশী বন্ধুদের প্রতি বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ কৃতঞ্জতা জানিয়েছে অনেকবার। পাঠ্যবইয়ে এরকম সংযোজনের অর্থ কি এই যে! প্রতিবেশী প্রভুকে খুশি করা? এই গ্রন্থটি রচনা ও সম্পাদনায় নামী-অনামী এক ডজন লেখকের নাম আছে। তাদের মধ্যে প্রায় সকলেই হচ্ছে সরকারি বুদ্ধিজীবী। এরকম একটি সামান্য বই লিখতে ডজনখানেক বুদ্ধিজীবীর সমাবেশ অবশ্যই সুবিধাবাদের উদাহরন দেয়। এবার আশা যাক বিষয়বস্তুতে। বইটি শুরু হয়েছে আত্মপরিচয়- নতুন বছরের প্রথম ক্লাস: বন্ধুদের সাথে পরিচয়ের খেলা। পরিচয় দিতে গিয়ে যেসব নাম স্থান পেয়েছে, তার কোনটাই সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের প্রতিনিধিত্ব করে না। চার পৃষ্ঠায় একজন ব্যক্তির অনেক পরিচয়ের কথা বলা হলেও ধর্মীয় পরিচয় উল্লেখিত হয়নি। পঞ্চ পৃষ্ঠা থেকে বন্দনা শুরু হয়েছে। এই বন্দনা বাংলা, ইংরেজি, ভূগোল, ইতিহাস এমনকি অন্য গ্রন্থেও। পৃষ্ঠা ৬৪ তে একজন মুক্তিযোদ্ধার বর্ণনা দিতে গিয়ে অন্য কোন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম উল্লেখিত হয়নি। আবারও প্রশংসা প্রশস্তি। স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের নাম কোথাও কোনভাবে উচ্চারিত হয়নি। দেশের ইতিহাস প্রাচীন থেকে আধুনিক পর্যন্ত উল্লেখ করতে গিয়ে মুসলিম বিজেতাদের নেতিবাচকভাবে ভূখন্ড ও সম্পদ দখলকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এদের নামের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে খলজী, হোসেন শাহ সুলতান ও নবাব মুশিদকুলী খানের নাম। আরও কিছু নেতিবাচক মন্তব্য রয়েছে ৯৭-৯৮ পৃষ্ঠায়। বাংলার প্রথম মুসলিম বিজেতা ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার। তাঁর সম্পর্কে পাঠ্য বইয়ের মন্তব্য ‘কয়েকটি বিহার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস এবং রাজা লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে নদীয়া ও গৌড় দখলকারী বখতিয়ার প্রতিষ্ঠা করেন খলজি বংশ’। ‘..... খলজি রাজাদের ভাষা, ধর্ম এবং সংস্কৃতি ছিল বাংলা অঞ্চলের সাধারন মানুষের ভাষা, ধর্ম এবং সংস্কৃতি থেকে একেবারেই ভিন্ন। খলজি যোদ্ধা এবং রাজারা ছিলেন ইসলাম ধর্ম অনুসারী। কিন্তু বাংলা অঞ্চলের মানুষ ছিলেন ব্রাহ্মণ্য ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, শৈব ধর্ম, বৈষ্ণ ধর্ম এবং জনপ্রিয় লোকধর্ম এর অনুসারী’। ধর্মের সাধারন ব্যবহারও তাদের কাছে অগ্রহনযোগ্য। ৯৯ পৃষ্ঠায় রয়েছে ‘ইংরেজরা ১৯৪৭ সালে যখন ভারত ভাগ করে ফেরত চলে যায় তখন এখানকার অভিজাত রাজনীতিবিদগণ বাংলার হাজার বছরের অনুসরণ না করে কেবল ধর্মের ভিত্তিতে নতুন রাজনৈতিক পরিচয় নির্মাণের উদ্যোগ নেন। বিস্ময়ের ব্যাপার তাদের এই মন্তব্য বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আতœজীবনীর বিপরীত সাক্ষ্য বহন করে। বইয়ের অপর অংশে অসংখ্য ছবি ও কার্টুনের ব্যবহার রয়েছে। এতে বাংলাদেশের গরিষ্ঠ মানুষের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সামাজিকতা বিষয়ক কোন ছবি নেই।

সপ্তম শ্রেণীর জন্য যে বইটি লেখা হয়েছে সেটির নাম- ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ। বইয়ের প্রচ্ছদে মন্দিরের ছবি রয়েছে। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের তেমন কোন পরিচয় কোন অধ্যায়েই নেই। অথচ তারা সিন্ধু নদের সভ্যতা থেকে সুলতানী আমল পর্যন্ত বর্ণনা করেছে। যে কেউ গ্রন্থটি দেখলে ভারতের ইতিহাস ভিন্ন অন্য কিছু বুঝবেন না। এই গ্রন্থটিতেও ষষ্ঠ শ্রেণীর মতো বিদেশীদের ছবি দেওয়া হয়েছে। শেষ প্রচ্ছদে শরণার্থী-৭১ এর ছবি দেওয়া হয়েছে। অথচ এই গ্রন্থে ১৯৭১ এর বর্ণনা নেই। ইতিহাস ঐ পর্যন্ত গড়ায়নি। তাহলে আবারও সংগত প্রশ্ন যে প্রতিবেশীদের খুশি করার জন্যই কি ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে?

একটি স্বাধীন দেশের রাজনীতি, সমাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি স্বাধীনই হওয়ার কথা। সরকারের দায়িত্ব জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ। জাতীয় স্বার্থের বাস্তবায়ন নির্ভর করে জাতীয় শক্তির উপরে। জাতীয় শক্তি তখনই সংরক্ষণ, প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন সম্ভব, যখন রাষ্ট্রের নাগরিকবৃন্দ সরকারের প্রতি সতত আনুগত্য প্রকাশ করে। এই আনুগত্যের নিদর্শন সম্মতির মাধ্যমে শাসক নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়। শাসকদের শক্তির উৎস যদি নিজ ভূখন্ডে না হয়ে অন্যত্র হয় তাহলে কখনই জাতীয় শক্তি প্রয়োগ করতে পারে না। ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বার্থসুবিধা ও পররাষ্ট্রনীতি যেমন পরনির্ভর সে ধারায়ই শিক্ষা ব্যবস্থা অনিবার্যভাবে আগ্রাসনের শিকারে পরিণহ হয়। শিক্ষা ব্যবস্থায় যে পরনির্ভরশীলতা, অন্য প্রশস্তি ও নীতি-বিচ্যুতি লক্ষ্য করা গেল তা পুনরুদ্ধারে গোটা জাতির দীর্ঘ মেয়াদি সমন্বিত পরিকল্পনা ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচিত। ‘Petron-Client’ বা পোষ্য-পোষক সম্পর্ক দ্বারা আর যাই হোক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ সম্ভব নয়। কেবলমাত্র জাতীয় ঐক্যই স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের পূর্বশর্ত।

https://dailysangram.com/post/522289