১৬ এপ্রিল ২০২৩, রবিবার, ১১:৪০

আগের রাতে জাকাত দেয়ার হিসাব করেছি, আজ নিঃস্ব

অদূরে দাঁড়িয়ে ফ্যাল ফ্যাল তাকিয়ে রইলেন আলমগীর হোসেন। চোখ বেয়ে ঝরছে অশ্রু। কাঁপছে ঠোঁট। ভেতরটা চুরমার হয়ে যাচ্ছে। ভোরের আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে তার কোটি টাকার স্বপ্ন। রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটের আগুনে পুড়ে গেছে আলমগীরের পরিবারের তিন দোকান। দোকান তিনটিতে প্রায় তিন কোটি টাকার মালামাল ছিল। এছাড়াও নগদ ৫০ লাখ টাকা ছিল পাইকারকে দেয়ার জন্য। খুচরা টাকাও ছিল বেশকিছু। এখন কান্নাই তার একমাত্র সম্বল।

বললেন, আগের দিন রাতে জাকাত দেয়ার হিসাব করেছি, আজ আমি নিঃস্ব। শুধু আলমগীর হোসেন নন, অগ্নিকাণ্ডে এভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত নিউ মার্কেটের তৃতীয় তলার অনেক ব্যবসায়ী। ঈদের আগে ক্ষতিগ্রস্ত এসব ব্যবসায়ী কীভাবে ক্ষতি পুষিয়ে উঠবেন জানেন না। একের পর এক আগুনের সূত্রপাত নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও। বঙ্গবাজার ও নবাবপুরের পর এবার ভুক্তভোগী নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করেছে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মালামাল উদ্ধারও করেন তারা। আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধারে জড়িতদের অনেকে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন। আলমীর হোসেন জানান, নিউ মার্কেটের তৃতীয় তলায় তাদের তিনটি দোকান রয়েছে। দোকানগুলো হলো-৩১০, ৩১১ এবং ২৩৪। নাম নূরজাহান ফ্যাশন। শাড়ি ও থ্রি-পিসের ব্যবসা।

তিন ভাই মিলে চালাতেন এসব দোকান। আলমগীর বলেন, আমরা তিন ভাই মিলে দোকান তিনটি চালাতাম। আমি সবার ছোট। আমাদের তিন দোকানে প্রায় তিন কোটি টাকার মতো মালামাল ছিল। এছাড়াও নগদ ৫০ লাখ টাকা ছিল পাইকারকে দেয়ার জন্য। এ সপ্তাহ থেকে যাদের থেকে মাল আনি তাদের টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু এখন সবই শেষ। তিনি বলেন, এবার ব্যবসা এমনই মন্দা যাচ্ছে তার ওপর আগুনে সবই শেষ। দোকানে ২১ জন কর্মচারী কাজ করে। তিনজন ম্যানেজারের বেতন ২৫ হাজার টাকা করে। অন্যদের ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে বেতন দেয়া হয়। কিন্তু এখন তাদের কী দেবো আর নিজে কীভাবে বাঁচবো জানি না। এ ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের কোনো লোন নেই। সবই ফ্যামেলির টাকা। শুধু পাইকারকে দেয়ার জন্য ৫০ লাখ টাকার কিছু ঋণ ছিল। গতকাল আমরা যাকাতের হিসাব করছিলাম। আজ আমাদের কিছু নেই। আব্দুল্লাহ ফ্যাশনের মালিক বৃষ্টি নামে আরেক ব্যবসায়ী জানান, তৃতীয় তলায় তার তিনটি দোকান ছিল। একটা পুরোপুরি পুড়ে গেছে। অন্যগুলোর অনেক মালামাল পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, এবারের ঈদে ৫০ লাখ টাকার লোন নিয়ে মালামাল তুলেছিলাম। কিন্তু সব শেষ। দোকানে ৯ জন চাকরি করে তাদেরও মাসে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা বেতন দিতে হয়। এদিকে ফুটপাথের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকে মালামাল সরিয়ে নিতে পারলেও ব্যবসায় ক্ষতি পুষিয়ে উঠা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। রায়হান নামের এক জুতা ব্যবসায়ী বলেন, আমি খবর পেয়ে এসে সব মালামাল সরিয়ে নিয়েছি। তবে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

https://mzamin.com/news.php?news=51473