১৬ এপ্রিল ২০২৩, রবিবার, ১১:৩১

ভয়াবহ আগুনে ভস্মীভূত নিউ সুপার মার্কেট

রাজধানীর বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লেগেছে। গতকাল শনিবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন নেভাতে গিয়ে ধোয়ায় অসুস্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৪ সদস্যসহ অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের ২৩টি ইউনিটের সাড়ে তিন ঘন্টার চেষ্টায় সকাল ৯টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এরই মধ্যে প্রায় ১৫০০ দোকান ভস্মীভূত হয়ে যায়। আগুনে কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেখানে যোগ দেন সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অগ্নিনির্বাপণী সাহায্যকারী দল। ঘটনাস্থলে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার মোতায়েন করা হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করেন স্বেচ্ছাসেবীরাও।
কি কারণে অগ্নিকান্ড বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত হতে পারে তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। ঈদের আগ মুহূর্তে এসব অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। এদিকে বারবার এসব ঘটনার পেছনে কোনো নাশকতা রয়েছে কি না তা গোয়েন্দা সংস্থাকে খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভি ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আগুনের সূত্রপাত ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ: নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলার বেশ কিছু ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী বলেন, রাত দুইটার পর দোকান বন্ধ করে তারা বাসায় যান। ভোরবেলা আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখেন আগুন জ্বলছে। নিউ সুপার মার্কেট (দক্ষিণ) বণিক সমিতির সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, তারা সকাল পৌনে ছয়টার দিকে মার্কেটের নিরাপত্তারক্ষীদের কাছ থেকে আগুন লাগার খবর পান। ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, নিরাপত্তারক্ষীরা আমাদের জানিয়েছে, ভোর চারটার দিকে (সাহরির সময়) সিটি করপোরেশনের একদল লোক নিউ সুপার মার্কেটের পূর্ব পাশের সিঁড়ি বিনা নোটিশে ভাঙতে আসেন। নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের অনেকবার নিষেধ করেন, সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। অন্তত আগে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে নিতে বলেন, কিন্তু সিটি করপোরেশনের লোকজন কারও কথা না শুনে সিঁড়ি ভাঙা শুরু করেন। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই হঠাৎ মার্কেটের নিচতলা ও তিনতলায় বিকট শব্দ হয় এবং ধোঁয়া বের হতে থাকে। ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট (দক্ষিণ) বণিক সমিতির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব কাজী আবুল খায়েরও একই কথা জানান। তিনি মনে করেন, নিয়ম না মেনে, বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ না করে সিঁড়ি ভাঙার কারণে আগুন লাগতে পারে। নিউ সুপার মার্কেটের আগুন মার্কেটের তৃতীয় তলায়ও ছড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয় তলায় প্রচণ্ড ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়।

আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন ব্যবসায়ীরা। মার্কেটের সামনে আহাজারি করতে থাকেন তারা। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ নিজেদের দোকান থেকে অক্ষত মালামাল বের করে আনার চেষ্টা করেন। তবে অনেকেই মালামাল বের করে আনতে পারেননি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্যবসায়ীরা বলেন, গত রমজান মাসে ওই সিঁড়ি ঝুঁকিপূর্ণ বলে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছিল সিটি করপোরেশন। কিন্তু গত এক বছরেও তারা এ বিষয়ে কিছু করেনি। এদিকে ব্যবসায়ীদের দাবির কয়েক ঘণ্টা পরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এক বিবৃতিতে বলেছে, আগুনের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের কাজের সম্পর্ক নেই। কারণ হিসেবে তারা বলেছে, নিউ মার্কেট সংলগ্ন একটি পথচারী পারাপার সেতুর সঙ্গে নিউ সুপার মার্কেটের সংযোগ দাপ্তরিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আগুন লাগার আধা ঘণ্টারও আগে তাদের কাজ শেষ হয়। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আরও বলেছে, সেতু বিচ্ছিন্নকরণের স্থান থেকে ৪০০ ফুটেরও বেশি দূরত্বে আগুন লেগেছে এবং সেতু বিচ্ছিন্নকরণের কাজে গ্যাস কাটার ব্যবহার করা হয়নি।

তদন্তের অনুরোধ ফায়ার সার্ভিসের: অগ্নিকান্ডের এসব ঘটনার পেছনে কোনো নাশকতা রয়েছে কি না তা গোয়েন্দা সংস্থাকে খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, আমরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি। একের পর এক ঘটনা ঘটছে। গোয়েন্দা সংস্থাকে আহ্বান করবো কোনো নাশকতা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখার জন্য। ঈদের আগে পুরান ঢাকার বঙ্গবাজার ও নবাবপুরে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের পর নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনায় নাশকতার সন্দেহ করছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মইন উদ্দিন। তাই অগ্নিকা-ের এই ঘটনাগুলো তদন্ত করে দেখতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। নিউ সুপার মার্কেটে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে নিজের সন্দেহের কথা জানান ফায়ার সার্ভিসের ডিজি। ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের অগ্নিকা- দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের মাধ্যমে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশকে আবেদন করব যে, এরকম কোনো কিছু আছে কি না খতিয়ে দেখার জন্য। খতিয়ে দেখাটা অতীব প্রয়োজন। একের পর এক কেন আগুন লাগছে। এটা খতিয়ে দেখার জন্য আমরা তাদের রিকয়েস্ট করব। ১১ দিন আগে গত ৪ এপ্রিল ঢাকার বঙ্গবাজার মার্কেট ভয়াবহ অগ্নিকা-ে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরপর গত বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডে আগুন লেগে পুড়ে যায় ২০টির মতো গুদাম। নবাবপুড়ে অগ্নিকা-ের পর ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক তাজুল ইসলামও বলেছিলেন, সম্প্রতি ঘনঘন অগ্নিকা- ঘটছে। এর পেছনে কোনো নাশকতা আছে কি না, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখা উচিত। নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকা-স্থলে আসার পর ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুককে নাশকতা নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। তিনি বলেন, এখানে কোনো নাশকতা হয়েছে, এখন পর্যন্ত সেরকম কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে ঢাকার বিপণি বিতানগুলোর সামনে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বঙ্গবাজারের অগ্নিকা- তদন্তে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কমিটি অবশ্য নাশকতার কোনো আলামত না পাওয়ার কথা জানিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিগারেট কিংবা মশার কয়েল থেকে ওই আগুনের সূত্রপাত। নিউ সুপার মার্কেটের আগুনের সূত্রপাতের কারণ এখনও জানা যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের ডিজি ব্রিগেডিয়ার মইন বলেন, আমরা কারণটা এখনও জানি না। তদন্ত না করে বলা যাবে না। তিনি বলেন, এখন শুষ্ক মৌসুম চলছে, বাতাসের আর্দ্রতা অনেক কম। মার্কেট এবং দোকান সৌন্দর্য করার জন্য অনেক বড় বড় পাওয়ারের লাইট ব্যবহার করে থাকি। এসব কারণে অগ্নিকা- হতে পারে।

আহতরা হাসপাতালে: অগ্নিকান্ডে আহত ৩৫ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ১৩ জন ফায়ার সার্ভিসের সদস্য। আর ১৬ জন দোকানমালিক ও কর্মচারী। আহত অন্যদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবী কর্মী তিনজন, বিমানবাহিনীর সদস্য একজন, আনসার সদস্য একজন ও একজন সাংবাদিক রয়েছেন। তাদের অধিকাংশই আগুনের ধোঁয়ায় আহত হয়েছেন। এছাড়া মার্কেটে টিন লেগে কয়েকজন জখম হয়েছেন।

আহত ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা হলেন রাসেল (২২), শান্ত (২৪), তৌফিক (২৩), রাজন (২৫), মিলন (২৬), সজীব (২৫), আরিফুল (২৬), কামরুজ্জামান (২৫), শরিফুল (২৪), রাজিব (২২), ডিপজল (২৪), আলমগীর (৩৬), সোহেল রানা (৩৫)। ঢামেকে চিকিৎসাধীন দোকান মালিক ও কর্মীরা হলেন রিফাত (২৩), বায়জিদ (২৫), হাসান (২০), রিমন (২৮), কামাল হোসেন (৩৩), ফিরোজ আলম (৩০), জীবন (৩০), জিসান (১৮), ইয়াসিন (২৪), জীবন (২৫), স্বপন (২৩), ফারহান (২৪), সারফিন (১৮), ইমাম হোসেন আলী (২৬), রাশেদ (৩০), সাব্বির (১৮)। আহত অন্যরা হলেন-এটিএন নিউজের সাংবাদিক মনিরুজ্জামান (৩৩), বিমানবাহিনীর সদস্য সার্জেন্ট আরাফাত (৩২), আনসার সদস্য সবুজ (২০), স্বেচ্ছাসেবী সাব্বির (৩০), জাকির হোসেন (২৭), চাঁন মিয়া (১৮)।

বন্ধ থাকবে নিউমার্কেট: পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ার আগ পর্যন্ত নিউমার্কেট খোলা হবে না বলে জানিয়েছেন নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন। তিনি বলেন, নিউমার্কেটের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি। সব দোকান মালিকদেরকে নিয়ে এই জায়গায় অবস্থান করছি। যতক্ষণ পর্যন্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না হবে অর্থাৎ সম্পূর্ণভাবে আগুন না নিভবে ততক্ষণ পর্যন্ত মার্কেট খোলা হবে না। এটি সবার সাথে বসেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আশপাশের এলাকার বেশ কয়েকটি মার্কেটের কয়েক হাজার দোকানপাটে বেচাকেনা বন্ধ রয়েছে। দেখা গেছে, সায়েন্স ল্যাব মোড় থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে পুলিশ। এ কারণে পুরো এলাকায় অধিকাংশ মার্কেটের দোকানপাটই বন্ধ রয়েছে।

২০১৬ সালেই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করা হয়: নিউ সুপার মার্কেটের (দ.) ভবনের তৃতীয় তলায় অগ্নিকা-ের পর জানা গেছে ভবনটি ছিল অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ। ২০১৬ সালেই ফায়ার সার্ভিস ভবনটিকে অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করে। গতকাল (সকাল সোয়া ১০টার দিকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন এ কথা জানান। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগা ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সেটিকে নিরাপদ করতে বেশকিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া নির্দেশনার কিছু বাস্তবায়ন হলেও এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ করা হয়েছে বলে মনে হয় না। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, অগ্নিকা-ের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তে বাকি বিষয়গুলো উঠে আসবে। তিন তলা ভবনটির তৃতীয় তলা থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের ধারণা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।

একপাশে ধোঁয়া অন্যপাশে বেচাকেনা: নিউ সুপার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকেও ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। তবে এর উল্টোপাশে চাঁদনি চক মার্কেটে এর মধ্যেই দোকান খুলে বেচাকেনা শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। সরেজমিন দেখা গেছে, আগুন লাগা নিউ সুপার মার্কেটের সঙ্গে চাঁদনি চক মার্কেটকে সংযুক্ত করেছে একটি ওভারব্রিজ। ওভারব্রিজের একপাশে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট। অন্যপাশে চাঁদনি চক মার্কেট। নিউ সুপার মার্কেটে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেলেও চাঁদনি চক মার্কেটে অনেক তরুণী ও নারীদের কেনাকাটা করতে দেখা গেছে। লালবাগ থেকে এসেছেন তরুণী ফারিশা রহমান। সঙ্গে এসেছেন তার মা মৌমিতা খাতুন। তারা ধোঁয়ার মধ্যেই কেনাকাটা করছেন। আগুন লাগার পরও মার্কেটে আসা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফারিশা রহমান বলেন, হাতে তো একদমই সময় নেই। ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছি। নিউমার্কেট আগুন লেগেছে কি না, জানি না। হাতিরপুল থেকে কেনাকাটা করতে এসেছেন সুমাইয়া আক্তার। তিনি সঙ্গে নিয়ে এসেছেন বড় মেয়ে মৌমিতা আক্তারকে। আগুনের ধোঁয়ার মধ্যেই জুতা ব্যাগ কিনেছেন তারা। এছাড়া কিছু গহনাও কিনছেন। সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘আগুন তো লাগছে ভোরে। এরপর টিভিতে খবর শুনলাম যে আগুন নিভে গেছে। তাই ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছি। চাঁদনি চক মার্কেটে দুপুর ২টার দিকে অনেক ব্যবসায়ী দোকান খুলেছেন। তাদের মধ্যে একজন রিয়াজ আহমেদ। ধোঁয়ার মধ্যেই দোকান খোলা প্রসঙ্গে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ভাই আমরা শেষ। কী করবো? বাঁচতে তো হবে। দোকানভাড়া দিতে হবে, সংসার টেকাতে হবে। বাধ্য হয়েই দোকান খুলেছি। আমাদের বড় ক্ষতি হয়ে গেলো। ঈদের আগে মার্কেটে আর ক্রেতা ফিরবে কি না সন্দেহ।

বেতন বোনাস কার কাছে চাইবো: আগুনে পোড়া ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের নিচতলার নিবিড় ফ্যাশনের কর্মচারী মো. মাসুদ বলেন, ‘আগুনে আমার দোকান পুড়ে গেছে। আমার স্বপ্ন শেষ। শুধু মাসুদ নন, তার মতো অনেকের দোকান আগুনে পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। হাবিব ফ্যাশনের কর্মচারী বলেন, আমাদের সব পুড়ে গেছে। সকাল সাড়ে ৮টায় এসে কিছুই বের করতে পারিনি। কিছু পুড়ছে, কিছু ময়লা পানিতে ভিজছে। সব তো শেষ-ই হয়ে গেলো। ব্যবসায়ী মাহবুব শেখ বলেন, আমার সব শেষ। গতকালও কোটি টাকার বেশি মাল ছিল, আজ শূন্য। কার কাছে কী চাইবো? কাকে কী বলবো জানি না, কিছুই বুঝতে পারছি না বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন এ ব্যবসায়ী। মো. সুমন নামের একজন বলেন, তিনতলায় আমার বন্ধুর দোকান ছিল। তাকে সহযোগিতা করতে এসেছি। অনেক কাপড় বের করেছি। কিছু পুড়ে গেছে। মার্কেটের নিচতলায় আমাদের গেঞ্জি ও প্যান্টের দোকান। আমিসহ ছয়জন কর্মচারী কাজ করি। আগুনের খবরে এসে সব মাল বের করে মালিকের কামরাঙ্গীর চরের বাসায় নিচ্ছি। কিন্তু সামনে ঈদ। এমন একটা সময় আগুন লাগলো, আমরা বেতন-বোনাস কিছুই পাইনি। বোনাস চাইতেও পারব না।

https://dailysangram.com/post/522254