১৪ এপ্রিল ২০২৩, শুক্রবার, ১২:১০

আমরা কি আরেকটি নিমতলী ও চুড়িহাট্টা ট্রাজেডির অপেক্ষা করছি?

-শেখ এনামুল হক

পুরানো ঢাকার নিমতলীতে অগ্নিকান্ডের পর রাসায়নিক শিল্পপার্ক স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে ১৩ বছর অতিক্রান্ত হ¬লেও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। শিল্প মন্ত্রণালয়ের দুই মন্ত্রীর মেয়াদ শেষ হয়েছে, দিলীপ বড়ুয়া ও আমির হোসেন আমুর। এদিকে বর্তমান শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারের মেয়াদও এখন শেষের দিকে। ইতিমধ্যে এই মন্ত্রণালয়ে ৮ জন সচিবের পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু রাসায়নিক শিল্পপার্কের এখনো কোন হদিস নেই। শিল্পপার্ক তৈরির প্রাথমিক কাজ হিসেবে রাসায়নিকের গুদাম সরিয়ে নিতে অস্থায়ী গুদাম তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। সেই গুদামও এখনও পুরোপুরি তৈরি হয়নি। রাসায়নিক শিল্পপার্ক স্থাপনের আলোচনার মধ্যেই ২০১৯ সালে চকবাজারের চুরিহাট্টায় অগ্নিকান্ডে ৭১ জনের মৃত্যু হয়। এরপর আরো কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু রাসায়নিক শিল্পপার্ক স্থাপনের কাজে অগ্রগতি হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আবার শুরু হয়েছে পুরানো ঢাকার সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণে ২৪ জনের মৃত্যুর পর। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সিদ্দিক বাজারের বিস্ফোরণে ২৪ জনের মৃত্যুর পর বিষয়টি অবার আলোচনায় এসেছে। তারা মনে করেন, সিদ্দিক বাজারের দুর্ঘটনা রাসায়নিক থেকে না হলেও পুরান ঢাকায় রাসায়নিকের ঝুঁকি রয়েছে। এই ঝুঁকির জন্য দায়ী জীবন রক্ষা প্রকল্পে অগ্রাধিকার না দেয়া, সুশাসনের ঘাটতি ও জবাবদিহিতার অভাব।

২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের শেষ পর্যন্ত দিলীপ বড়–য়া শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। দিলীপ বড়–য়ার সময়ে রাসায়নিক শিল্পপার্ক করার উদ্যোগ নেয়া হলেও তিনি প্রকল্পটির প্রস্তাব (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল বা ডিপিপি) তৈরি করে যেতে পারেননি। শিল্প মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কর্মকর্তারা জানান, তখন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেরানীগঞ্জে ৫০ একর জমিতে ১৯টি বহুতল ভবন হবে। এসব ভবনে রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের জায়গা দেয়া হবে। কিন্তু এ প্রস্তাবে বেঁকে বসেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, বহুতল ভবন ঝুঁকি আরো বাড়াবে। তারা ভবনের বদলে জমি দেয়ার দাবি জানান। পরে শিল্প মন্ত্রণালয় ৫০ একর জমিতে ব্যবসায়ীদের ছোট ছোট প্লট দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৩ সালের ২১শে নবেম্বর শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দিলীপ বড়ুয়ার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে প্রকল্পের কাজে অগ্রগতি থেমে যায়।

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠন করলে শিল্পমন্ত্রী হন আমির হোসেন আমু। ২০১৯ সালের শুরু পর্যন্ত তার দায়িত্বে থাকাকালে পুরোটা লেগে যায় রাসায়নিক শিল্পপার্কের ডিপিপি তৈরি ও প্রকল্প অনুমোদনে। ২০১৮ সালের ৩০শে অক্টোবর রাসায়নিক শিল্পপার্ক সরকারের অনুমোদন লাভ করে। এতে ব্যয় ধরা হয় ২০২ কোটি টাকা। এভাবে ১৩ বছর নানা টালবাহানার পর সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর আমলে রাসায়নিক শিল্পপার্ক প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। এজন্য অর্থও বরাদ্দ করা হয়। রাসায়নিক শিল্পপার্কে ব্যবসায়ীদের নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে সাবেক শিল্পমন্ত্রী বলেন, রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের শিল্পপার্কে নিতে হবে জোর করে। যেমনটা নেয়া হয়েছে ট্যানারী মালিকদের। অবশ্য ২০১৮ সাল পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের রাসায়নিক শিল্পপার্কে না যাবার গো-ধরা প্রসঙ্গে কতিপয় বিশেষজ্ঞ বলেন, রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের শিল্পপার্কে নিতে বাধ্য করা প্রয়োজন ছিল, সেটা করা হয়নি। তাছাড়া এই শিল্পপার্ক স্থাপন একটি অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা দরকার ছিল। সেটাও হয়নি বলে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন ধীরগতিতে অগ্রসর হয়েছে। জীবন রক্ষাকারী এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি দুঃখজনক।

বর্তমান শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ুন ২০১৯ সালের শুরুতে দায়িত্ব নেন। ওই বছর ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকায় চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এরপর শিল্প মন্ত্রণালয় রাসায়নিক শিল্পপার্ক নিয়ে নড়েচড়ে বসে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে তখন শিল্পপার্ক করার জায়গা কেরানীগঞ্জ থেকে সরিয়ে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে নেয়া হয়। জমি ৫০ একর থেকে বাড়িয়ে ৩১০ একর করা হয়। এর ফলে প্রকল্প ব্যয়ও বেড়ে যায়-২০২ কোটি টাকা থেকে ১ হাজার ১৬ কোটি টাকা। এই প্রকল্প দ্রুত অনুমোদন লাভ করে। ২০১৯ সালে ৩০শে এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এটির অনুমোদন দেয়। এরপর চার বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও রাসায়নিক শিল্পপার্কের শুধু প্রথম পর্যায়ের মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে। সেটাও হয়েছে মাত্র ৪৪ শতাংশ। আর প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে সেখানে ১ হাজার ৮৪৩টি শিল্পপ্লট করা হবে। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাসায়নিক শিল্পপার্ক করার প্রকল্পটিকে আমি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। তবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করেন। তার দাবি জায়গা নির্ধারণের পর সেটি নিয়ে আপত্তি, নতুন জায়গা খোঁজা, জমি অধিগ্রহণজনিত সমস্যা, করোনা ও নির্মাণ উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রকল্পটিতে দেরি হয়েছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বিসিক না পারলেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ঠিকই পেরেছে। তারা ২০১৩ সালে কাজ শুরু করে ইতিমধ্যে ৬টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দ শুরু করেছে। পাঁচটিতে শিল্প-কারখানা করা হচ্ছে। তিনটিতে কিছু কারখানা উৎপাদনও শুরু করেছে।

অস্থায়ী গুদামও শেষ হয়নি
২০১৯ সালে চুড়িহাট্টার অগ্নিকান্ডের পর রাসায়নিক শিল্পপার্ক তৈরির পাশাপাশি দুটি অস্থায়ী গুদাম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। একটি টঙ্গীতে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) ৬ একর জমিতে। অন্যটি ঢাকার শ্যামপুরে বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরীর জমিতে। দুটি অস্থায়ী গুদাম তৈরির ব্যয় ধরা হয় ১৬৮ কোটি টাকা।
সম্প্রতি উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরীতে গিয়ে দেখা যায়, উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরীতে গুদামের কাজ প্রায় শেষ। তবে সেটি উদ্বোধন হয়নি। এদিকে টঙ্গীর গুদামের কাজ ৪০ শতাংশ বাকী। টঙ্গী প্রকল্পের পরিচালক খন্দকার জহিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, কাজ শেষ হতে সময় লাগবে প্রায় এক বছর।

দুটি অস্থায়ী গুদামে ১০৭টি রাসায়নিক গুদামের স্থান হবে। অবশ্য ব্যবসায়ীরা মনে করেন, এটুকু জায়গায় কিছু হবে না। কারণ পুরানো ঢাকায় ২০ হাজারের মত রাসায়নিকের দোকান আছে। রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ কেমিক্যাল মার্চেন্টস সোসিয়েশনের সদস্য আছেন এক হাজার ৬শ’ জন। এই সংগঠনের উপদেষ্টা এনায়েত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন যে, মূলত: আমাদের প্রয়োজন রাসায়নিক শিল্পপার্ক। সেই প্রকল্পের কাজে খুব মন্থরগতি। আবার আকেটি বড় দুর্ঘটনা হলে নতুন করে তোড়জোড় শুরু হবে।

২০১০ সালে নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং দপ্তর একমত হয় যে, পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক ব্যবসা গুটিয়ে নিতে না পারলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। কিন্তু পুরান ঢাকায় এখনো রাসায়নিকের ব্যবস্থা চলছে অব্যাহত গতিতে। সম্প্রতি ওয়ারীর হাটখোলা এলাকার নজরুল ইসলাম সড়কে রাসেল সেন্টার নামের একটি ১০তলা আবাসিক ভবনের চতুর্থ তলা পর্যন্ত রাসায়নিকের দোকান ও গুদাম রয়েছে। বাকী ছয় তলায় মানুষের বাস। ভ্রাম্যমাণ আদালত গত আগস্ট মাসে ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক পাওয়ার ভবনের কয়েকটি গুদাম সীলগালা করে দেয়। এখন সেখানে গুদাম খুলে আবার ব্যবসা চলছে। ব্যবসায়ীরা ঝুঁকির ব্যাপারে কথা বলতে রাজী হননি।

১৯১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটানে ট্রায়াঙ্গল শার্টওয়েস্ট নামের একটি পোশাক কারখানায় অগ্নিকা-ে ১৪৬ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এরপর সেদেশের অগ্নিনিরাপত্তা সংক্রান্ত আইন-কানুনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয় এবং কারখানা নিরাপদ করার সর্বাত্মক উদ্যোগ নেয়। ২০১৩ সালে রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর বিদেশী ক্রেতাদের চাপে ও উদ্যোগে রফতানিমুখী পোশাক কারাখানায় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তÍু পুরান ঢাকায় নিমতলী অগ্নিকা-ের ৪ বছর অতিক্রান্ত হলেও রাসায়নিকের ব্যবস্থা সরানো হয়নি।

এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সুশাসনে থাকা দেশগুলোতে দুর্ঘটনার রোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকে। এরপর কোন দুর্ঘটনা ঘটলে সেটা থেকে তারা শিক্ষা নেয়। আজ থেকে ১৩ বছর আগে যখন জানা গেল পুরান ঢাকায় ব্যাপক দাহ্য রাসায়নিকের ব্যবসা হয়। তখন তিন মাসের মধ্যে সেগুলো সরিয়ে নেয়া দরকার ছিল। কিন্তু ১৩ বছরে সেটা হয়নি। এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কি হতে পারে।
এদিকে চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের চার বছর অতিবাহিত হলেও ওই এলাকা থেকে রাসায়নিক ও প্লাস্টিক গুদাম সরিয়ে না নেয়ায় এখনো আতংকে নিহতের স্বজনরা। এই এলাকায় ৮০ শতাংশ গলিতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি না ঢোকার যে সমস্যা তার কোন সমাধান আজো হয়নি।

চুড়িহাট্টার ওয়াহিদ ম্যানসনের সামনে সম্প্রতি নিহতের স্বজনরা সকাল থেকে কালোব্যাজ ধারণ করে সমবেত হন। এ সময় তারা আক্ষেপ করে বলেন, ভয়াবহ অগ্নিকা-ের জন্য দায়ী রাসায়নিক ও প্লাস্টিক কারখানা একচুলও সরেনি। লিকুইড রাসায়নিক ব্যবসা কিছুটা কমলেও প্লাস্টিক কারখানা ও গুদাম রয়েছে আগের মতই। তাছাড়া এ মামলার আট আসামীর সবাই জামিনে আছেন। জেল থেকে বেরিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের হুমিক ধামকি দিয়েছেন।

অগ্নিকাণ্ডে নিহত মো: ফয়সাল সরওয়ারের স্ত্রী-ফাতেমা বেগম সাংবাদিকদের বলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দুই সস্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি, খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছি। সিটি কর্পোরেশন আমাকে মাস্টার রোলে একটি চাকরি দিলেও তাতে সংসার চলেনা। এসময় স্বামী হত্যার বিচার চান তিনি।

অগ্নিকাণ্ডে নিহত ওয়াসি উদ্দিন মাহির চাচাতো ভাই এবং চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আসিক উদ্দিন সৈনিক জানান, যেই ওয়াহিদ ম্যানসন থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ওই ভবনেই এখনো প্লাস্টিকের গুদাম রয়েছে। ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত দুটি পরিবারকে সিটি কর্পোরেশন থেকে পলাশী ২ নম্বর মার্কেটে দুটি দোকান বরাদ্দ দিয়েও সেটি বাতিল করা হয়েছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি এই ঘটনায় দ্রুত বিচার দাবি করেন। চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সংস্থার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন তারা।

দাবিগুলো হল ঃ অগ্নিকাণ্ডের মামলার র্চাজশীটভুক্ত আসামীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা, বাড়ির মালিক ও গুদাম মালিককে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে একজন করে সরকারি চাকরি, বৃদ্ধদের জন্য বয়স্কভাতা, বিধবাদের জন্য বিধবাভাতা এবং সন্তানদের জন্য বিনা বেতনে অধ্যয়ন ও ফ্রি চিকিৎসা ব্যবস্থা করা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সব পরিবারে চাকরি আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও দোকান বরাদ্দের বাকী বরাদ্দ সম্পাদন করা। বর্তমান চাকরি প্রাপ্তদের চাকরি স্থায়ীকরণ ও কোয়ার্টার বরাদ্দ দেয়া, পুরাতন ঢাকা ও তথা আবাসিক এলাকায় থেকে সবরকম ক্ষতিকারক দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ ও ক্যামিক্যালের গুদাম, কারখানা নিরাপদ স্থানে সরানো, মোবাইল কোর্ট গঠন করে বাড়ি বাড়ি তল্লাসী করে গুদাম ও কারখানা উচ্ছেদসহ বাড়ির মালিককে জরিমানার আওতায় আনা, লাইসেন্সবিহীন অবৈধ নকল প্রসাধনী তৈরির কারখানা ও সবরকম ক্ষতিকারক দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ, ক্যামিক্যালের গুদাম ও কারাখানা অবিলম্বে সীলগালা করা ও পুরাতন ঢাকায় আবাসিক ঘনবসতি এলাকায় চৌরাস্তার মোড়ে একটি করে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করা। বিশেষ করে আবেদনকৃত ফায়ার হাইড্রেন্টটি অবশ্যই দিতে হবে। এছাড়া নিহতদের স্মরণে সোমবার রাত ১০ টা ৩২ মিনিটে নীরবতা পালন ও মঙ্গলবার সকালে পবিত্র কুরআন খতম ও দোয়ার আয়োজন করে চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সংস্থা। জানা গেছে, চুড়িহাট্টা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন মারা যাওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তিন বছর অতিবাহিত হলেও এখনো বিচার শুরু হয়নি। মামলাটি তদন্ত করে প্রায় তিন বছর পরে গত বছরের ১৬ই ফেব্রুয়ারি ওয়াহেদ ম্যানসনের মালিক দুই ভাইসহ ৮ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট দাখিল করেছে তদন্ত কর্মকতা চকবাজার মডেল থানার ওসি আব্দুল কাইয়ুম। চার্জশীটভুক্ত আসামীরা হলেন ভবন মালিক দুই সহোদর হাসান ওরফে হাসান সুলতান, সোহেল ওরফে শহীদ ওরফে হোসেন, রাসায়নিক গুদামের মালিক ইমতিয়াজ আহমদ, পরিচালক মোজ্জাম্মেল হক, ম্যানেজার মোজাফফর উদ্দিন, মোহাম্মদ জাওয়াদ আতির, মো: নাবিল ও মোহাম্মদ কাশিপ। এরা সবাই এখন জামিনে।

এদিকে পুরান ঢাকার ৮০ শতাংশ সড়ক সরু হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি রাস্তার ঢোকেনা। এজন্য প্রতিটি সড়কে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: মাইন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা শনাক্ত করে এসব গুদাম উচ্ছেদের জন্য সিটি কর্পোরেশনকে সুপারিশ করেছি। এই সুপারিশ বাস্তবায়নের কোন আলামত আমরা দেখতে পাচ্ছিনা।

এখন প্রশ্ন উঠছে, নিমতলী অথবা চুড়িহাট্টায় দাহ্য পদার্থে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে বিপুল প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পর সরকার সুশীল সমাজ এবং উন্নয়ন সহযোগীরা নড়েচড়ে বসে। দাহ্য পদার্থের এসব দোকান পাট সরাতে আরেকটি নিমতলী অথবা চুড়িহাট্টা ট্রাজেডির জন্য আমরা প্রতীক্ষা করছি না তো ?

https://dailysangram.com/post/522134