১২ এপ্রিল ২০২৩, বুধবার, ৪:১৮

বাংলাদেশে কালাকানুন করে কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে

বিশ্বের এ যাবতকালের সবচেয়ে কঠোর কালাকানুন (ড্র্যাকোনিয়ান) করে বাংলাদেশে মানুষের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। স্বাধীন গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশ ১০ ধাপ পিছিয়ে যাওয়াটা একটা বড় রকমের প্রশ্ন। গণমাধ্যমে যেভাবে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হচ্ছে সেটার প্রভাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। জাস্ট নিউজ।

জাতীয় সংসদে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র চর্চা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া আক্রমণাত্মক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ ইস্যুতে এভাবেই নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য, তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের স্টেট ডিপার্টমেন্ট নিয়ে তীর্যক মন্তব্য, র‌্যাব নিয়ে ডয়েচে ভেলেতে সাক্ষাৎকার দেয়ায় নাফিজ মোহাম্মদ আলমকে গ্রেফতার এবং প্রথম আলো অফিসে অনুপ্রবেশ এবং হুমকি দেয়া প্রসঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।

বাংলাদেশে চলমান এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি এবং যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ প্রসঙ্গে স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রধান উপমুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল বলেন, ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে বাংলাদেশ ১০ ধাপ পিছিয়েছে। এর বড় একটা কারণ হলো বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট। গণমাধ্যম এবং তার ওপর যে নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রয়েছে তার প্রভাব নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।

ব্রিফিংয়ে জানতে চাওয়া হয়, ‘ওয়াশিংটন শহরের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ভবনে বসে যখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ঠিক সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলে আক্রমণাত্মক ভাষায় বক্তৃতা দিয়েছেন (পার্লামেন্টে) এবং সরকার পাল্টাতে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে বলে দোষারোপ করেছেন। তার ছেলে এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় স্টেট ডিপার্টমেন্টকে একদল ‘ভণ্ডের আখড়া’ বলে মন্তব্য করেছেন। এটা নিয়ে আপনার মন্তব্য কী। আরেকটা সম্পূরক প্রশ্নে বলা হয় ডয়েচে ভেলে এবং নেত্র নিউজ র্যাব নিয়ে যে ডকুমেন্টারি তৈরি করেছে, সেটা মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর খতিয়ে দেখছেন এবং বাংলাদেশ সরকারকেও একইভাবে তা তদন্ত করার কথা বলেছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার সেটাকে ভিন্ন এক কায়দায় খতিয়ে দেখা শুরু করেছে। তারা ইতিমধ্যে র্যাবের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়া একজনকে গ্রেফতার করেছে। এটাই তাদের ভিন্নরকমের খতিয়ে দেখা! এ বিষয়ে পররাষ্ট্র দফতর কি বলবে? আরেকটি বিষয়, বাংলাদেশের প্রথম সারির পত্রিকা প্রথম আলো অফিসে হঠাৎ করেই কিছু লোক নিরাপত্তা ভেঙে ঢুকে পড়ে এবং সম্পাদক কোথায় আছে জানতে চায়। তারা হামলা করতেই সেখানে গিয়েছিল, এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র দফতর কী বলবে?”

জবাবে ভেদান্ত প্যাটেল বলেন, “প্রথমেই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে বলছি। সর্বশেষ বিশ্বের স্বাধীন গণমাধ্যম সূচকে ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬২। গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশের আরো ১০ ধাপ অবনতি হয়েছে। এর বড় একটা কারণ হলো বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট। এর আগেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে প্রশ্ন এসেছে। বিস্তৃত পরিসরে বলতে গেলে সাংবাদিকদের জন্য পৃথিবীতে যতগুলো কালাকানুন রয়েছে এটি তার অন্যতম। এ নিয়ে আমরা খুব স্পষ্ট করে আমাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছি। মুক্তগণমাধ্যম এবং জনগণের তথ্য সুবিধা পাওয়াটা যেকোনো জাতি এবং গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যম এবং তার ওপর যে নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রয়েছে তার প্রভাব নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’

তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় প্রশ্ন নিয়ে আমি নতুন কিছু যোগ করছি না। তবে আবারো যেটার পুনরাবৃত্তি করব সেটা হলো- মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আমরা অবশ্যই আশা করব বাংলাদেশ সরকার ডয়েচে ভেলে এবং নেত্র নিউজের রিপোর্ট এবং ডকুমেন্টারি তদন্ত করবে।’

এর আগে অপর এক সাংবাদিক জানতে চান, ‘ডয়েচে ভেলের অনুসন্ধানী রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশ সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নির্যাতন এবং হত্যার সাথে জড়িত। অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে সেটা নিয়ে আপনারা কিভাবে অগ্রসর হবেন?’

জবাবে ভেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার নতুন করে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে কি না সেটা নিয়ে আমি এখন কথা বলতে পারব না। তবে জোর গলায় যেটা বলব, গত বৃহস্পতিবারেও তা বলেছি। সেটা হলো-এই (ডয়েচে ভেলের) আর্টিকেল এবং ভিডিও আমরা সতর্কতার সাথে খতিয়ে দেখব। আশা করব বাংলাদেশ সরকারও একই কাজ করবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।”

ওয়াশিংটনে ব্লিংকেনের সাথে মোমেনের বৈঠক : বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র এবং পুরো বিশ্ব। নির্বাচন যেন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয় এটা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে এই নির্বাচন এশিয়া এবং বিশ্বের জন্য একটা শক্তিশালী উদাহরণ হয়।

সোমবার ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সাথে বৈঠকের শুরুতে বক্তব্য দেয়ার সময় বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন।

ব্লিংকেন বলেন, ‘অর্থনৈতিক এবং জনগণের সাথে জনগণের সম্পর্কসহ বিগত ৫০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দারুণ অগ্রগতি হয়েছে। জলবায়ু থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসহ আরো যেসব বিষয়ে দুই দেশ কাজ করছে, সেগুলোকে আমরা গুরুত্ব দেই।’

বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দৃঢ় করার গুরুত্বের পাশাপাশি উঠে আসে রোহিঙ্গা ইস্যু। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবার জন্য বাংলাদেশ এবং দেশের জনগণকে সাধুবাদ জানিয়ে ব্লিংকেন বলেন, ‘বাংলাদেশ ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে উদারতার সাথে যেভাবে আশ্রয় দিয়েছে সেটাকে আমরা আন্তরিক সাধুবাদ জানাই।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে ব্লিংকেন বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক মজবুত এবং দৃঢ় করতে, অর্থনৈতিক এবং মানবাধিকার উন্নয়ন নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই, আমরা এবং পুরো বিশ্ব বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। নির্বাচন যেন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয় এটা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে এই নির্বাচন এশিয়া এবং বিশ্বের জন্য একটা শক্তিশালী উদাহরণ হয়।’

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য শেষ করতেই বাংলাদেশের তরফে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। দুই দেশের সম্পর্কের ভিত মজবুত উল্লেখ করে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বহুমাত্রিক এবং গতিশীল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে। বিগত ৫০ বছরে এই দুই দেশ খুব ভালো করেছে এবং আমরা আগামী ৫০ বছরের কথা ভাবছি।’
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সেই চিঠির কিছু অংশ বৈঠকের শুরুতে পাঠ করে শুনান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাকে একটি চিঠি সাথে দিয়েছে বলে জানান তিনি।


https://www.dailynayadiganta.com/first-page/741035