১১ এপ্রিল ২০২৩, মঙ্গলবার, ১২:৪০

দেশের অর্ধেক পথশিশু ঢাকায় ৩৩% মৌলিক সুবিধা পায় না

 দেশের মোট পথশিশুর প্রায় অর্ধেক (৪৮.৫%) ঢাকা বিভাগে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি এলাকায় ২২.৭ এবং ঢাকা উত্তর সিটি এলাকায় ১৮.৩ শতাংশের বসবাস। সবচেয়ে কম পথশিশু সিলেট বিভাগে (৪.০%)। মোট পথশিশুর ৮২ শতাংশ ছেলে, ১৮ শতাংশ মেয়ে। আর অর্ধেকের বেশি পথশিশুর বয়স ১০ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। পথশিশুদের ১২ শতাংশই মাদকাসক্ত।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত ‘সার্ভে অন স্ট্রিট চিলড্রেন ২০২২’ এর ফলাফলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে সারা দেশ ও বিভাগগুলোতে মোট পথশিশুর সংখ্যা জরিপে আসেনি। এর ব্যাখ্যায় বিবিএস বলছে, যেহেতু এই জরিপের কোনো ভিত্তিবছর নেই, পাশাপাশি যেকোনো শুমারির তথ্য জন আকারে দেওয়া গেলেও জরিপের তথ্য শতাংশের হিসেবে দেয় তারা। মূলত বিবিএস ইউনিসেফের সহযোগিতায় চলতি বছরের ৪ থেকে ২৩ এপ্রিল ১০টি বিভাগীয় শহরে সাত হাজার ২০০ জনের ওপর জরিপ করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন উপস্থিত ছিলেন।

জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ উইংয়ের পরিচালক মো. মাসুদ আলম। তিনি বলেন, ‘যথাযথ জরিপ পদ্ধতি অনুসরণ করে সারা দেশে প্রথম পর্যায়ে ০ থেকে ১৭ বছর বয়সী পথশিশুদের ওপর কুইক কাউন্ট পরিচালনার মাধ্যমে স্যাম্পলিং ফ্রেম (নমুনা কাঠামো) প্রণয়ন করা হয় এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী পথশিশুদের ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপের লিঙ্গভিত্তিক বিভাজনে মেয়েদের তুলনায় ছেলে পথশিশুর সংখ্যা অনেক বেশি, একজন মেয়ের বিপরীতে চারজন ছেলেশিশু। পথশিশুদের গড় বয়স ১২.৩ বছর।

জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, বিভাগ পর্যায়ে খুলনায় পথশিশু ৮.১, রাজশাহীতে ৭.৩, রংপুরে ৫.৫, বরিশালে ৫.০, ময়মনসিংহে ৪.১ এবং সিলেটে ৪.০ শতাংশ পথশিশু আছে। বিবিএস বলছে, দারিদ্র্য ও ক্ষুধার কারণে ৩৭.৮ শতাংশ শিশু পথে নেমেছে। এ ছাড়া ১৫.৪ শতাংশ হয় মা-বাবা শহরে থাকায় এবং ১২.১ শতাংশ কাজের সন্ধানে বাড়ি থেকে শহরে এসে পথশিশু হয়। তারা বলছে, পথশিশুর পাঁচজনের দুজনই একা একা শহরে এসেছে। ১০ জন পথশিশুর তিনজন কখনোই স্কুলে ভর্তি হয়নি। জরিপে অংশগ্রহণ করা পথশিশুর ১৮.৭ শতাংশ পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে। এ ছাড়া চার ভাগের এক ভাগ পথশিশু ধূমপান করে। ১২ শতাংশ মাদকাসক্ত এবং ৬৪ শতাংশ পথশিশু তাদের পরিবারে ফিরে যেতে চায় না।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, ‘প্রতিবেদনে উঠে আসা বিষয়গুলো বেদনাদায়ক। এই বিষয়গুলো শুধু আমাদের কাজ করার জায়গাগুলো দেখিয়েই দেয় না; রাস্তায় বসবাস ও কাজ করা শিশুদের জন্য আমাদের সহানুভূতি এবং সহায়তার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের একত্রে কাজ করতে হবে। তার জন্য ইউনিসেফ বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। যেকোনো সময় সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আমরা। এ সময় শিশুদের নিরাপত্তার জন্য তিনি সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগের আহ্বান জানান।’

পরিসংখ্যান বলছে, এই শিশুদের প্রতি তিনজনের মধ্যে প্রায় একজন (৩৩ শতাংশের বেশি) জীবনের সবচেয়ে মৌলিক সুযোগ-সুবিধা পায় না। প্রায় অর্ধেক শিশু মাটিতে ঘুমায়, পাটের ব্যাগ, শক্ত কাগজ, প্লাস্টিকের টুকরা বা একটি পাতলা কম্বল নিয়ে। প্রায় ৭ শতাংশ শিশু সম্পূর্ণ একা ঘুমায়। ১৭ শতাংশ শিশু কয়েকজন একসঙ্গে মিলে ঘুমানোর মাধ্যমে সুরক্ষা ও স্বস্তি খোঁজে। জীবিকা নির্বাহের জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বর্জ্য সংগ্রহ ২০.৯ শতাংশ। ভিক্ষাবৃত্তি করে ১৮.৪ শতাংশ। গাড়ি ও নির্মাণ খাতে কাজ করে ১৬ শতাংশ। এ ছাড়া চায়ের দোকান, কারখানা ও ওয়ার্কশপে কাজ করে ১৪.৮ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘পথশিশুদের বিষয়ে হালনাগাদ সরকারি পরিসংখ্যান ছিল না। জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে বিবিএস সে শূন্যতার জায়গাটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তুলে এনেছে। আমি আশা করি, খুব দ্রুত একটি পূর্ণাঙ্গ জরিপ প্রকাশ করা হবে, যা পথশিশুদের জীবনমান উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়ক হবে।’

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘উন্নয়নের পেছনে যে কিছু কান্না থাকে—তারই প্রতিফলন উঠে এসেছে এই পথশিশু সার্ভেতে। তাদের অধিকার নিয়ে গভীর আলোচনা দাবি রাখে। পূর্ণ জরিপ হলে ভালো হতো। যেখানে আমরা জনশুমারি করতে পেরেছি, সেখানে ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ হলেও এই জরিপ করা সম্ভব। পথশিশুরা সম্পদের বড় অপচয়। এদের জন্য বিশেষ প্রকল্প নেওয়া উচিত।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/04/11/1270226