১০ এপ্রিল ২০২৩, সোমবার, ৩:০১

আমদানি হ্রাসে সঙ্কট

দেশে তীব্র ডলার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে বেশ আগেই। নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরও পরিস্থিতি তো স্বাভাবিক হয়-ই নি বরং আশাব্যঞ্জক কোন অগ্রগতিরও খবর নেই। ফলে সঙ্কট ক্রমেই তীব্র হতে তীব্রতর হচ্ছে। এমতাবস্থায় আমদানিতে পড়েছে ভাটির টান। মূলত, চলমান ডলারসঙ্কট ও ঋণপত্র খোলায় কড়াকড়ির কারণে ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে আমদানি কমেছে ৩৮ শতাংশ। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমদানি হয়েছিল ৮৩২ কোটি ডলারের পণ্য ও সেবা। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে যা ৫১৪ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। আমদানিতে এখন প্রতি ডলারে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১০৬ টাকা। রপ্তানি বিল নগদায়ন হচ্ছে ১০৫ টাকায় আর ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় কিনছে সর্বোচ্চ ১০৭ টাকায়। জানা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ঋণপত্র খোলা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫১ কোটি ডলারের, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঋণপত্র খোলা হয়েছিল ৫ হাজার ৯৪৫ কোটি ডলারের। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে তথা দেশে আমদানী নির্ভর পণ্যে রীতিমত সঙ্কট ঘনিভূত হয়েছে।

সূত্রমতে, ঋণপত্র খোলা কমলেও ঋণপত্র নিষ্পত্তি এখনো অতটা কমেনি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে ৫ হাজার ২০৯ কোটি ডলারের, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ২২ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছিল ৫ হাজার ২৬৬ কোটি ডলারের। জানা গেছে, চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে না পেরে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটিয়ে আনছেন বা সীমিত করছেন। অনেকেই আবার ব্যবসা পরিবর্তন করেছেন। এক বছর ধরে চলা ডলার সংকটও এখনো কাটেনি। ফলে বাজারে পণ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র বলছে, আগে যে পরিমাণ পণ্য আনতে সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার খরচ হতো, এখন তা সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার খরচেই আনা যাচ্ছে। আমদানি পণ্যের মূল্য পরীক্ষা করায় এখন কেউ বেশি দাম দিয়ে পণ্য আনতে পারছেন না। এখন রপ্তানি পণ্যের মূল্যও পরীক্ষা করা হবে। চলতি সপ্তাহে ব্যাংকার্স সভা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র গণমাধ্যমকে বলেছেন, হুন্ডির চাহিদা কমাতে বেশি বা কম দামে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করা হচ্ছে। এটা অনেকটা সফল হয়েছে। এদিকে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১২৪ কোটি ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ১০৩ টাকা দরে ডলার বিক্রি করছে।

মূলত চলমান ডলার সঙ্কটের কারণেই ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় ঋণপত্র খুলতে পারছেন না। ফলে আমদানিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বাজারে আমদানি নির্ভর পণ্যের তীব্র সঙ্কটও দেখা দিয়েছে। দামও বেড়েছে এ স্বাভাবিকভাবে। অনেক পণ্যের মূল্যই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বিশেষ করে চলমান রমজান মাসে পরিস্থিতির আরো বড় ধরনের অবনতি হয়েছে।

এমতাবস্থায় চলমান ডলার সঙ্কটের একটি যৌক্তিক সমাধান ও ঋণপত্র খোলা নির্বিঘœ করা না গেলে আগামী দিনে বাজারে আরো ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি হবে। তাই এই সমস্যা সমাধানে সরকার, অর্থমন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকেই এখনই জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ানোর জন্য নিতে হবে কার্যকর উদ্যোগ। অন্যথায় চলমান সঙ্কট আরো তীব্র হতে তীব্রতর হবে।

https://dailysangram.com/post/521729