৯ এপ্রিল ২০২৩, রবিবার, ২:২১

এক বছরের ব্যবধানে সুদব্যয় বাড়ছে ২৭.৩৭ ভাগ

বাজেটে সুদ ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। প্রথমবারের সুদ ব্যয় লাখ কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করে যাচ্ছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এই খাতে ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে এক লাখ ২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। অন্য দিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সুদ ব্যয় ধরা রয়েছে ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। দেখা যাচ্ছে, এক বছরের ব্যবধানে বাজেটে সুদ ব্যয়ে ২২ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যাচ্ছে। শতকরা হিসাবে যা ২৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সুদ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে মন্তব্য করতে যেয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, গত তিন অর্থবছরে সুদ ব্যয়ের বাড়ার পেছনে মূল কারণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়া। এ খাত থেকে সরকারের বেশি করে ঋণ নেয়ার কারণে সুদের খরচও অনেক বেড়ে যায়। কারণ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার অনেক বেশি। তিনি বলেন, এবার সুদ ব্যয় বাজেটে রক্ষিত লক্ষ্যমাত্রায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। কারণ সুদের হার কমিয়ে দেয়ার কারণে সঞ্চয়পত্রে বিক্রি চলতি অর্থবছরে বেশ কমে গেছে। তবে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে বেশি করে ঋণ নেয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। আর এতে সুদ ব্যয়ও শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জানা গেছে, শুধু সঞ্চয়পত্রের সুদ ব্যয়ই নয়, আগামী বাজেটে বিদেশী ঋণের সুদ ব্যয় খাতে খরচ বেড়ে যাবে। কারণ সরকার বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছে। আগামী অর্থবছরে এই সব ঋণের সুদ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে যাবে। ফলে বাজেটে রক্ষিত সুদখাতে বর্ধিত টাকা রাখার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।

এ দিকে বাজেট ডকুমেন্ট ঘেটে দেখা গেছে, প্রতি বছরই বাজেটে সুদ ব্যয় বেড়ে চলেছে। যেমন, ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় ধরা হয় ৬৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। মূল বাজেটে যা ছিল ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। সুদ ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সুদ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় ধরা আছে ৫ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা।

২০১৯-২০ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় হয়েছে ৫২ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের সুদ ব্যয় ৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৪৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা এবং বিদেশী সুদ ব্যয় ৩ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ৩৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের সুদ ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।

একইভাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই ব্যয় যথাক্রমে ৩৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা এবং এক হাজার ৭১১ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৪৪ কোটি টাকা ও এক হাজার ৬২৫ কোটি টাকা এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ছিল ২৯ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের সুদ ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/740312