৭ এপ্রিল ২০২৩, শুক্রবার, ৭:৪৩

প্রাসঙ্গিক ভাবনা সংকটে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা : মাদরাসা শিক্ষা

-ড. মো. নূরুল আমিন

॥ গতকালের পর ॥
বিশ্বব্যাংক তার রিপোর্টে মাদরাসার পাঠক্রম সংস্কারের পাশাপাশি ১৯৭৪ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক ড. কুদরত-ই-খুদার নেতৃত্বে গঠিত শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নেরও সুপারিশ করেছে। বলাবাহুল্য কুদরত-ই-খুদা রিপোর্টে মাদরাসা শিক্ষাকে অস্বীকার করে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত অভিন্ন সাধারণ শিক্ষার সুপারিশ করা হয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল যে, অষ্টম শ্রেণীর পর যদি কেউ মাদরাসায় যেতে চায়, যেতে পারে যার বাস্তব তাৎপর্য মাদরাসা শিক্ষার অবলুপ্তি।

এখন উপরোক্ত কারণগুলোর যৌক্তিকতা কিছুটা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। বিদেশী ভাষা শিক্ষা যে কোন দেশের শিক্ষাব্যবস্থার একটি অঙ্গ, তবে অপরিহার্য অঙ্গ নয়। পৃথিবীতে এমন বহু দেশ আছে যেসব দেশে বিদেশী ভাষা শিক্ষাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয় না। তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রধান ভাষা হিসেবে মাতৃভাষা গুরুত্ব পায়। চীন, রাশিয়া, জাপান, ফ্রান্স, সুইডেনসহ ইংরেজিবহির্ভূত ভাষাভাষী দেশগুলোতে দীর্ঘকাল পর্যন্ত ইংরেজি ভাষার চর্চাই ছিল না। যাদের ইংরেজি বা অন্যান্য ভাষা শেখার প্রয়োজন হতো আনুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে তাদের জন্য তার ব্যবস্থা ছিল এবং এখনও আছে। বাংলাদেশে এক সময় বৃটিশ আমলে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ইংরেজি মাধ্যমে লেখাপড়া হয়েছে। অফিস-আদালতের ভাষা ইংরেজি ছিল। পরবর্তীকালে মেট্রিকুলেশন, এরপর কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ভাষার প্রচলন হয়। এই অবস্থায় স্কুলসমূহে ছেলেমেয়েদের প্রথম বিদেশী ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা দেয়া হতো যাতে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা কর্মজীবনে এসে তারা ভাষার চাহিদা পূরণ করতে পারে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজির পরিবর্তে বাংলা হয়েছে এবং ১৯৮৫ সালের পর থেকে সরকারি অফিস আদালতে যোগাযোগের ভাষাও ইংরেজি থেকে বাংলাতে পরিবর্তন করা হয়েছে। এই অবস্থায় শুধু মাদরাসা কেন সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহেও ইংরেজি শিক্ষার মান সাংঘাতিকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এর প্রভাব সর্বত্র প্রতিফলিত হচ্ছে। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে UNDP সিভিল প্রশাসনের Performance-এর উপর একটি রিপোর্ট প্রদান করেছিল। রিপোর্টে বিসিএস ক্যাডারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের ইংরেজি ভাষার উপর দক্ষতা প্রসঙ্গে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল যে, তাদের অধিকাংশই দাতা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক এজেন্সিসমূহের সাথে ইংরেজি ভাষায় যোগাযোগ করতে অক্ষম। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও এজেন্সি থেকে কি ধরনের পত্র তাদের কাছে প্রেরণ করতে হবে তার খসড়াও তাদেরই তৈরি করে দিতে হয়। সরকারি কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেকেরই প্রয়োজনীয় Language proficiency না থাকায় বাংলাদেশকে দেয়া বিদেশী সরকার ও এজেন্সিসমূহের বহু বৃত্তি ফেরত যায়। এই অবস্থায় শুধুমাত্র মাদরাসায় ইংরেজি শিক্ষার মান নিয়ে বিশ্বব্যাংক কিংবা সরকারের নীতি-নির্ধারকদের উদ্বেগের কারণ বোঝা মুশকিল। একই অবস্থা গণিতের বেলায়ও প্রযোজ্য। গণিতের যে অংশটি বাস্তব জীবনে প্রয়োজন সেটি হচ্ছে গণনা তথা যোগ-বিয়োগ-পূরণ-ভাগ। আমি ব্যক্তিগত জীবনে দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ থেকে একাধিক ডিগ্রি-ডিপ্লোমা গ্রহণ করেছি। উচ্চতর প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছি। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন এজেন্সির গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু কোথাও বীজগণিত ও জ্যামিতির জটিল সূত্রসমূহ কিংবা বহু কষ্ট করে শেখা পাটি গণিতের বর্গ নির্ণয় পদ্ধতির অংকগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার সুযোগ পাইনি। এই প্রেক্ষিতে অংক বীজগণিত ও জ্যামিতিতে মাদরাসা ছাত্রদের কেউ কেউ যদি দুর্বল হয়েই থাকে তাকে আমি বড় দুর্বলতা বলে মনে করি না। মাদরাসা শিক্ষার উদ্দেশ্য ইংরেজি ভাষা কিংবা পাটি গণিত ও বিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞ তৈরি করা নয়। তার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, কুরআন-হাদীস-ফিকাহ্-উসুল ও তৎসংশ্লিষ্ট ভাষা ও বিষয়সমূহের উপর বিশেষজ্ঞ তৈরি করা। এই বিষয়গুলোতে মাদরাসা ছাত্রদের দখল কেমন এডিবি বা বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে তার কোনও উল্লেখ নেই। তাদের অধীত বিষয়ও তা ছিল না। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, সমীক্ষাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কুরআন, হাদিস, ফিকাহ, উসুলের জ্ঞান অর্জন করেও ইসলামের ইতিহাসে বহু প্রতিভাবান ব্যক্তির শৈল্যবিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, দর্শনশাস্ত্র, রসায়নশাস্ত্র ও গণিতে বিশ্ববাসীকে পথপ্রদর্শন ও মানব জাতির জন্য নতুন সভ্যতার ভিত রচনা করতে দেখা গেছে। এই অবস্থায় সংস্থাটির রিপোর্টের কানাকড়ি মূল্য আছে বলে মনে করার কারণ নেই। তবে এর অর্থ এ নয় যে, মাদরাসা সিলেবাসের উন্নতি বা আধুনিকীকরণের প্রয়োজন নেই। অবশ্যই আছে তবে তা হতে হবে খ্যাতনামা দেশী-বিদেশী আলেমদের তত্ত্বাবধানে, যুগ-জিজ্ঞাসা ও শরীয়া চাহিদার ভিত্তিতে। ইসলাম বিদ্বেষীদের ডিক্টেশন অনুযায়ী নয়।

মাদরাসা ছাত্রদের সম্পর্কে দ্বিতীয় যে অভিযোগটি করা হয়েছে তাকে আমি অমূলক বলে মনি করি। মাদরাসা ছাত্রদের একটা বিরাট অংশ দরিদ্র পরিবার থেকে আসে এবং মাদরাসা থেকে বেরিয়ে এসে তারা শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ায়, জাতীয় অর্থনীতিতে কোনো অবদান রাখতে পারে না এবং উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে বেছে নেয়, এই ধারণাটি অমূলক এবং বিদ্বেষপ্রসূত। গত ১৫০০ বছরের ইতিহাসে এই ধরনের কোনো দৃষ্টান্ত নেই এবং বাংলাদেশে কিংবা বাংলাদেশের বাইরে মাদরাসা ছাত্র ও সাধারণ ছাত্রদের তুলনামূলক আচরণ কিংবা বেকারত্ব সৃষ্টিতে উভয় গ্রুপের অবদান নিয়ে কোনো সমীক্ষা বা গবেষণা কখনো পরিচালিত হয়নি। আবার মাদরাসা ছাত্ররা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা তার বাইরে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভর্তিবাণিজ্য, দখলবাজি কিংবা নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে বা করছে এ ধরনের নজিরও বিরল। বরং সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহেই এর আধিক্য পরিলক্ষিত হয়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের বিগত ১৪ বছরের শাসন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এই দিনগুলোতে তার পৃষ্ঠপোষকতাধন্য ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাকর্মীরা অন্ততপক্ষে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮৫০০টি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে। এর বেশির ভাগ ঘটনা ছিল চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভর্তিবাণিজ্য ও অবৈধ পন্থায় অর্জিত অর্থের ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে। ইভটিজিং বা মেয়েদের যৌন হয়রানি এর অন্তর্ভুক্ত নয়। আওয়ামীপন্থী একটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীদের ৬০ জনের একটি দল সিন্ডিকেট করে পাবনায় বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সংস্থায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দখলবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধপ্রবণতায় লিপ্ত রয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের বেপরোয়া সন্ত্রাসে স্বাভাবিক কাজকর্ম চলতে পারছে না। দেড় শতাধিক সরকারি কলেজ ও চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় তাদের উৎপাতে একাধিকবার বন্ধ ঘোষিত হয়েছিল। তাদের হাতে এ যাবৎ নিজ দলের এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দলসমূহের তিন সহ¯্রাধিক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। ছাত্রলীগ, যুবলীগের যেসব নেতাকর্মী এর সাথে জড়িত তাদের কেউ দরিদ্র পরিবারের সদস্য নয়। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও ছিনতাইকে তারা উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। তারা কি কখনো মাদরাসা থেকে সবক নিয়েছে? অবশ্যই নয়। আর মাদরাসাগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন গত ১৫ বছর কেন, ৬০ বছরেও মাদরাসাসমূহে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভর্তিবাণিজ্য ও দখলবাণিজ্যের কোনো ঘটনা বা সন্ত্রাসী কোনো কর্মকান্ড অথবা আন্তঃদলীয় কোনো হত্যা কিংবা খুনখারাবীর কোনো ঘটনা কি ঘটেছে? পুলিশের খাতায় এ ধরনের কয়টি রেকর্ড আছে? আমাদের আলেম-ওলামা এবং মাদরাসার ছাত্ররা অল্পে তুষ্ট, বেশির ভাগই নির্লোভ এবং হালাল-হারামের বিধান মেনে চলেন। এজন্য চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাস- নৈরাজ্যে বিশ্বাস করেন না। তাদের এই সুকৃতি চরিত্রহীন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের দুষ্কৃতির মুখোশ উন্মোচন করে দিচ্ছে বলেই তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছে এবং উপলব্ধি করতে পারছে যে, তাদের অপরাধী চরিত্র সাধারণ মানুষ বেশিদিন সহ্য করবে না এবং নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব থেকে তাদের উৎখাত করবেই। এ অবস্থায় ইসলাম এবং ইসলামী শিক্ষা ও ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মী এবং আলেম-ওলামাদেরই তারা প্রধান টার্গেট বানিয়ে নিয়েছে। তাদের ওপর ভিত্তিহীন অপবাদ চাপিয়ে দিয়ে নির্মূল অভিযানে নেমেছে। জিহাদকে জঙ্গিবাদের সমর্থক গণ্য করে বিশ্বহিন্দু পরিষদ পবিত্র কুরআনের ১০১টি আয়াতকে চিহ্নিত করে কুরআন সংস্কার, মডারেট ইসলাম প্রতিষ্ঠা, নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের ভাষায় দ্বীন-ই-ইলাহী কায়েমের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এদেশে হক্কানী আলেমরা থাকলে তাদের পক্ষে এ কাজটি করা সহজ নয় এজন্যই আলেম তৈরির প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্যই মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার ওপর তারা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও সিলেবাস আধুনিকায়নের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তাদের এই অশুভ তৎপরতা বন্ধ করা প্রয়োজন! পাশ্চাত্য দেশসমূহে বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকা পরিচালিত বিভিন্ন জরিপে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে মুসলিম নামধারী ব্যক্তিদের উল্লেখযোগ্য কোনো সম্পৃক্তি পাওয়া যায়নি। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার হিসাব অনুযায়ী এক্ষেত্রে মুসলিম নামধারীদের সম্পৃক্তি সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ, তবে মৌলবাদীদের যদি এখানে আলাদাভাবে ধরা হয় তবে তাদের সম্পৃক্তি এক শতাংশেরও কম। অন্যদিকে ইউরোপের সমীক্ষা অনুযায়ী এই হার ০.৬ শতাংশ মাত্র। কিন্তু সন্ত্রাস, জঙ্গি তৎপরতায় তাদের এই নগণ্য সম্পৃক্তি সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। এর আগে আমি ফোর্ড ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে জয়দীপ সাইকীয়া নামক একজন ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক পরিচালিত একটি সমীক্ষার কথা উল্লেখ করেছিলাম। তিনি ২০০৩ সালে মৌলবাদ ও মাদরাসার ওপর পরিচালিত এই সমীক্ষায় আলেম-ওলামা ও মাদরাসা ছাত্রদের সাথে জঙ্গিবাদের কোনো সম্পর্ক আবিষ্কার করতে পারেননি। তবে তার রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন যে, মাদরাসা শিক্ষা ও ইসলামের যে ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে তাকে তিনি কমিউনিজম-এর স্থলে ইসলাম-এর প্রতিস্থাপন বলে মনে করেন। তার দৃষ্টিতে (এ দৃষ্টি ভারতেরও) কমিউনিজম যেমন একটি আপদ, ইসলামও একটি আপদ। এক আপদের জায়গায় আরেক আপদ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ইসলামী মৌলবাদী সংস্থাগুলো জঙ্গি তৎপর তায় অংশগ্রহণ করছে এ ধরনের কোনো প্রমাণ তিনি পাননি। এ প্রমাণ না পাওয়াও তার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তার ভাষায়Ñজঙ্গি তৎপরতায় সম্পৃক্তির প্রমাণের অনুপস্থিতিকে তাদের অনুপস্থিতির প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। এটি একটি অদ্ভুত যুক্তি।

এখন গণতন্ত্রের কথায় আসা যাক, মাদরাসা শিক্ষিতরা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি এই ধারণাটি যুক্তির কষ্টিপাথরে টিকে না। কার্লমার্কস, লেনিন, হিটলার, তারা গণতন্ত্রের শত্রু ছিলেন। তারা কোন মাদরাসার ছাত্র ছিলেন? আমাদের দেশে যারা একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিলেন এবং মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে একনায়কত্ব কায়েম করেছেন।

তারা কি মাদরাসার ছাত্র ছিলেন? উত্তর অবশ্যই না। তা হলে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ও ইসলামী দল ও আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার কেন? আমার বিশ্বাস আমাদের দেশের আলেম-ওলামাদের অনৈক্য ও ইসলামপন্থী দলগুলোর বিভক্তিই ইসলাম বৈরী শক্তিকে সাহায্য যোগাচ্ছে। কিছু উদাহরণ দিচ্ছি দৈনিক যায়যায়দিন বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলোর উপরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী জামায়াত ছাড়া এই দেশে অন্যান্য ১৮টি ইসলামপন্থী দল আছে। এই দলগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক ও অভ্যন্তরীণ ঐক্য অত্যন্ত নড়বড়ে এবং তাদের অনেকেরই সংহতি নিয়ে অনেক কথাও রয়েছে। পত্রিকাটির তথ্যানুযায়ী ১৯৮১ সালের ২৯ নবেম্বর মরহুম মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুরকে আমীর করে খেলাফত আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর দু’জন নায়েবে আমীর ছিলেন মুফতি ফজলুল হক আমিনী ও মাওলানা বুরহান উদ্দিন। শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক ও চরমোনাই’র পীর মাওলানা ফজলুল করিম এর সাথে ছিলেন। দলটি এক থাকতে পারেনি, পরবর্তীকালে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে যায়। এক ভাগের আমীর হনÑমাওলানা আহমদ উল্লাহ আশরাফ এবং সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা জাফরউল্লাহ খান। অন্যভাগের আমীর ও সেক্রেটারি জেনারেল হন যথাক্রমে মাওলানা মমিনুল্লাহ ও মাওলানা হামিদুল্লাহ। এর আগে চরমোনাই পীর মরহুম মাওলানা ফজলুল করিম এবং আরো পাঁচজন আলেম খেলাফত আন্দোলন থেকে বেরিয়ে গিয়ে একটি শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করে। ১৯৮৭ সালের ৩ মার্চ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন।

 

https://dailysangram.com/post/521463