৬ এপ্রিল ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১২:৫০

পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী নিয়ে চূড়ান্ত ড্যামির কাজ শুরু

২০২৪ সালের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে নতুন বই

মাধ্যমিকের দুটি শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকের বিতর্কিত বিষয়গুলো বাতিল করে ৩০টি সংশোধনী দিয়েছে সংশোধনী কমিটি। এখন এসব সুপারিশের আলোকে পাঠ্যবইয়ের চূড়ান্ত ড্যামির কাজ শুরু করেছে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। মূল ড্যামিতে বইয়ের ভুলগুলোর সংশোধনী নিয়ে সফট কপিতে রূপান্তর করা হবে। পরে নতুন করে সংশোধনীসহ পুনরায় পরিবর্তিত আকারে পাঠ্যবই ছাপা হবে। তবে চলতি বছরেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বইয়ের সংশোধনীসহ তুলে দেয়া সম্ভব হবে কি না তা এখনো চূড়ান্ত না হলেও আগামী ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা সংশোধনীসহ নতুন বই হাতে পাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ দিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণীর নতুন পাঠ্যবই থেকে মানব বিবর্তন বাতিল, বিভিন্ন অধ্যায়ে বানান ভুল, ছবি নির্বাচন ও উপস্থাপনে ত্রুটি, ইংরেজি বইয়ে বাংলা অনুবাদ, সর্বনাম ব্যবহারে ভুল, পাঠ্যবই প্রণয়নে প্রস্তুতির ঘাটতি ও তড়িঘড়িকরণ, পৃষ্ঠা সংখ্যা অতিরিক্ত করে বইয়ের ভার বাড়ানোসহ বেশ কিছু ভুল চিহ্নিত করেছে পাঠ্যপুস্তক বিশেষজ্ঞ কমিটি। গত ২৭ মার্চ এ কমিটির প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটির দেয়া সুপারিশগুলো নিয়ে গত ২৭ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানেই মূলত পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বলা হয়েছে যেসব সংশোধনী এসেছে সেগুলোর আলোকে সফট কপিতে সংশোধন করা হবে। এটাই হলো মূল ড্যামির কাজ। এই ড্যামির কাজ শেষ হলে সংশোধনীসহ পাঠ্যবই পুনরায় ছাপানো হবে। তবে এখন দেখার বিষয় হলো, চলতি বছরের মধ্যে শিক্ষার্থীরা ভুল হওয়া বইগুলো সংশোধিত আকারে পাবে কি না? তবে এনসিটিবি এটা নিশ্চিত করেছে যে, আগামী ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে সবাই সংশোধিত আকারে সব বই হাতে পাবে।

অন্য দিকে কমিটির দেয়া প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিকের ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণীর নতুন পাঠ্যপুস্তক তড়িঘড়ি করে প্রণয়ন করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। লেখক, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ও প্রেসের সমন্বয়হীতার কারণে নানা ধরনের ভুল চিহ্নিত হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এ তিন স্তরে সঠিকভাবে সমন্বয় করা হয় সে জন্য সুপারিশ করেছে মূল্যায়ন কমিটি। ষষ্ঠ শ্রেণীর বই থেকে মানব বিবর্তনবাদ অধ্যায় বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে। বিভিন্ন অধ্যায়ে বানান ভুল, ছবি নির্বাচন ও উপস্থাপনায় ত্রুটি রয়েছে। কয়েকটি অধ্যায়ে অসঙ্গতি বাদ দিতে বলা হয়েছে।

সূত্রমতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল হালিমকে আহ্বায়ক করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) উপ-পরিচালক মো: আজিজ উদ্দিনকে সদস্য সচিব করে আট সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. ওয়াহেদুজ্জামান চাঁন, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) লুৎফর রহমান, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের একজন উপসচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন পরিচালক এবং মতিঝিল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুন নাহার শাহীন।

কমিটির একজন সদস্য নয়া দিগন্তকে জানান, আমরা চেষ্টা করেছি অতিতের শিক্ষাক্রমের চাইতে কিছুটা পজিটিভ পরিবর্তন আনতে। শিক্ষার্থীরা পড়ার সঙ্গে সেগুলো মূল্যায়ন করা শিখবে। উপস্থাপন করা শিখতে পারবে। তবে কিছু অধ্যায় আগের মতো রাখা হয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীর অ্যাকটিভিটিস রাখা হয়নি সেগুলো নিহ্নিত করে সংশোধন করতে সুপারিশ করা হয়েছে। ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণীর বিজ্ঞান বইয়ে ভালো উপস্থাপন করা হলেও অনুশীলন বইটিকে মূল রেখে অন্য টিকে রেফারেন্স হিসেবে রাখতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে গতকাল বুধবার এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, কমিটির মাধ্যমে আমরা যেসব সুপারিশ পেয়েছি সেগুলো নিয়ে ইতোমধ্যে আমরা এক সপ্তাহের একটি কর্মশালাও করেছি। আমরা সুপারিশগুলো যথাযথভাবে মূল্যায়ন করে নতুনভাবে সেগুলো পাঠ্যপুস্তকে সন্নিবেশিত করতে কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ভুলগুলো নিয়ে চূড়ান্ত ড্যামির কাজ শুরু করেছি। এই কাজটি একটু জটিল এবং সময়সাপেক্ষও বটে। ভুলগুলো এখন পাঠ্যবইয়ের সফট কপিতে সংশোধন করে সেটিকে ড্যামি আকারে নিয়ে পরে পুনরায় মুদ্রণের কাজ করা হবে। এটা করতে সময় লাগবে। তাই চলতি বছর আমরা সীমিত পরিসরে চেষ্টা করবো শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিতে, অন্যথায় আগামী শিক্ষাবর্ষের সব শিক্ষার্থী সংশোধনীসহ সব বই হাতে পাবে বলে আমরা আশা করছি।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/739599