২১ এপ্রিল ২০১৭, শুক্রবার, ৮:৩৫

পর্যটন বোর্ড ও করপোরেশনে বিদেশী পর্যটকদের তথ্য নেই

অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে কমিটি

প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে কত পর্যটক ও ভিজিটর আসছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড ও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনে। জাতীয় সংসদ, দেশী বিদেশী বিভিন্ন সংস্থার চাহিদার ভিত্তিতে প্রায় সময় এসব তথ্য প্রয়োজন হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিদেশীদের হালনাগদ সঠিক তথ্য দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিশেষ করে পর্যটন খাতে যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্যও এসব তথ্য অপরিহার্য হলেও সংশ্লিষ্টরা নীরব থাকছেন।
এ অবস্থায় ইমিগ্রেশন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদেশী পর্যটক ও ভিজিটরদের তথ্য সহজেই পাওয়া এবং কর্মপন্থা নির্ধারণ ও সুপারিশ প্রণয়নে সম্প্রতি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এম গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছ্ ে
ওই সভার মতামতে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রশাসন ও পর্যটন) আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। ওই কমিটিতে আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে কর্মপন্থা নির্ধারণ এবং সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে। একই সাথে নতুন ব্যবস্থাপনায় তথ্য সংগ্রহের আগ পর্যন্ত পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে প্রতি মাসে বাংলাদেশে আসা বিদেশী ভিজিটর ও পর্যটকের সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ড সংগ্রহ করবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
কমিটির সদস্যসচিব করা হয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের পরিচালক নিখিল রঞ্জন রায়কে।
বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো: নাসির উদ্দিন বলেছেন, বর্তমানে ইমিগ্রেশন অফিসার কর্তৃক বিমানবন্দরে সংগৃহীত তথ্য থেকে আগত বিদেশী পর্যটক/ ভিজিটর আগমনের তথ্যাদি বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। পুলিশের বিশেষ শাখার ইমিগ্রেশনের ওই ডাটাবেজ থেকে পর্যটনসংশ্লিষ্ট কয়েকটি তথ্য কিভাবে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের ডাটাবেজে প্রেরণ, স্থানান্তর করা যায় অথবা আগমনের তথ্য অনলাইনে নিয়মিত প্রাপ্তির প্রক্রিয়াটি সহজ করা যায় সেসব বিষয়ে মূলত বৈঠকে আলোচনা করা হয়।
পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, বিভিন্ন সময় এ মন্ত্রণালয় অথবা সংস্থা থেকে চাওয়া তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। বিশেষ পুলিশ সুপার ইমিগ্রেশন তথ্য প্রদান সংশ্লিষ্ট ফোকাল পয়েন্ট। এ মন্ত্রণালয় থেকে যেকোনো সময় তথ্যের জন্য বিশেষ পুলিশ সুপার ইমিগ্রেশনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তা জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহ করা হবে বলে জানান।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি একটি কমন সফটওয়্যার তৈরির ব্যাপারে তার মতামত ব্যক্ত করেন এবং ইমিগ্রেশনের সময় পর্যটক/ ভিজিটর কর্তৃক প্রদত্ত তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে প্রদান করা হলে তথ্যপ্রাপ্তির সময় বাঁচবে এবং হালনাগাদ তথ্য ব্যবহার করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হবে বলে মতামত দেন। তার এই বক্তব্যের সাথে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের সিইও এবং বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান অপরূপ চৌধুরীসহ অন্যরাও সভায় একই মতামত প্রদান করেন। তবে এ ধরনের ব্যবস্থা চালুর আগ পর্যন্ত বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে তথ্যপ্রাপ্তি দ্রুত ও নিশ্চিত করা যেতে পারে বলে মতামত দেন তারা।
বৈঠকে আলোচনায় উঠে আসে, বিদেশী পর্যটকদের বিষয়ে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বসহ বিভিন্ন সংসদীয় কমিটি এবং জাতীয় সংসদকে নিয়মিত অবহিত করতে হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ তথ্য প্রদান করতে হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক যে প্রকাশনা বের হয় সেখানে পর্যটক আগমনবিষয়ক কোনো হালনাগাদ তথ্যও পাওয়া যায় না।
দেশী-বিদেশী পর্যটকদের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, পর্যটকদের ঘোরাফেরা থেকে শুরু করে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেখভালে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড ও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন আছে। কিন্তু সেটি মূলত সভা-সেমিনারেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন।
২০১৬ সালকে সরকার পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করেছে। দেড় বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও পর্যটন উন্নয়নে দু’টি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো নয় বলে ভুক্তভোগীদের অভিমত। এরমধ্যে বিদেশী পর্যটকদের হালনাগাদ তথ্য অন্যতম।
ুব্ধ পর্যটকেরা বলছেন, আগে এ দু’টি সংস্থায় ঘাপটি মেরে থাকা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করা দরকার। পর্যটন উন্নয়নে বাজেটের টাকা কোথায়, কিভাবে খরচের নামে লুটপাট হচ্ছে সেটিও সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখা দরকার বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/213799