৫ এপ্রিল ২০২৩, বুধবার, ১১:১৭

ইফতারি-সাহরি তৈরিতেও ভোগান্তি

গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহে যথেষ্ট ঘাটতি থাকায় রমজান মাসে রাজধানীসহ দেশের বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দারা ইফতার তৈরিসহ রান্নার কাজে ভোগান্তিতে পড়েছে। সারা দিন রোজা রেখে বিকেলে পরিবারের সদস্যদের জন্য ইফতার তৈরি করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছে তারা। এই পরিস্থিতিতে অনেক গ্রাহক বাধ্য হয়ে ইলেকট্রিক চুলা বা এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করছে। এতে গ্যাস না থাকলেও একদিকে গ্রাহককে যেমন পুরো মাসের বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে, অন্যদিকে ইলেকট্রিক চুলা কিংবা এলপিজি ব্যবহারে করতে হচ্ছে বাড়তি খরচ।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, রমজানে আবাসিকে গ্যাস সরবরাহ কিছুটা সীমিত করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প-কারখানায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরবরাহ করায় আবাসিকের বেশ কিছু এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ দেখা দিয়েছে।

বাড়িতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া এবার রোজায় এক দিনও গ্যাসের চুলায় ইফতার বানাতে পারেননি রাজধানীর ভাটারার সোলমাইদ এলাকার বাসিন্দা ফারজানা আক্তার। বাধ্য হয়ে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করে রান্নার কাজ সারতে হচ্ছে তাঁকে। এতে তাঁর জ্বালানি খরচ বেড়ে গেছে দ্বিগুণ। ফারজানা আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবার রোজায় এই এলাকায় প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। বাধ্য হয়ে আমাকে এলপিজি ব্যবহার করতে হচ্ছে। আর লাইনে গ্যাস না থাকলেও বিল ঠিকই দিতে হচ্ছে।’

গ্যাসের স্বল্প চাপের কারণে একই ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছেন মিরপুর-১-এর পাইকপাড়া এলাকার বাসিন্দা নার্গিস খাতুন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘ইফতার তৈরির সময় চুলায় একদমই গ্যাসের চাপ থাকে না। ফলে যে রান্না আগে এক ঘণ্টায় সারা যেত,
সেটা এখন তিন ঘণ্টায়ও সারা যায় না। বাধ্য হয়ে এবার রোজায় আমাদের বাইরের ইফতার কিনে খেতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ইলেকট্রিক চুলা বা এলপিজি কেনার পরিকল্পনা করছি।’

ফারজানা ও নার্গিসের মতো গ্যাসের স্বল্প চাপের কারণে রাজধানীর মিরপুর, ভাটারা, যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, বাড্ডা, বনশ্রী, শ্যাওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর, লালবাগসহ পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের একই ধরনের সমস্যা হচ্ছে। এসব এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুপুর থেকে রাত ৭-৮টা পর্যন্ত গ্যাসের চাপ কম থাকায় বাসাবাড়িতে ইফতার তৈরিসহ রান্না করা যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে তারা বাইরে থেকে ইফতার কিনছে। অনেকে বিকল্প হিসেবে এলপি গ্যাস ও ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করছে।

গ্রাহকদের অভিযোগ, মূল্যস্ফীতির কারণে তারা এমনিতেই চাপের মধ্যে আছে। এর মধ্যে চুলায় গ্যাস না থাকায় বাড়তি খরচ করে এলপিজি বা ইলেকট্রিক চুলায় রান্না করতে হচ্ছে।

যাত্রাবাড়ীর উত্তর দনিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় রোড এলাকার বাসিন্দারা চলতি রমজান মাসে গ্যাসের অভাবে ইফতার ও সেহরি তৈরি করতে পারছে না। ওই এলাকায় এক বছর ধরে এই সমস্যা অব্যাহত আছে। ওই এলাকার বাসিন্দা মো. আলমগীর হোসেন ও গৃহিণী মাছুমা আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিকেলে নিভু নিভু করে চুলা জ্বলে। কোনোভাবেই ইফতার তৈরি বা অন্য কোনো কিছু রান্না করা যায় না। বাধ্য হয়ে ইলেকট্রিক চুলা কিনতে হয়েছে। ফলে একদিকে গ্যাস বিল, অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে। এতে রান্নায় খরচ দ্বিগুণ হয়েছে।’

পুরান ঢাকার লালবাগের নবাবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা রেখা রানী ঘোষ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে চুলায় গ্যাস থাকলেও তিন দিন ধরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকছে না। দিনে কখনো গ্যাস এলেও স্বল্প চাপের কারণে কিছু রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। গ্যাস না থাকায় আমাদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। তবে সন্ধ্যার পর গ্যাসের চাপ বাড়তে থাকে, যা সকাল পর্যন্ত থাকে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর নির্ভর করে সংকট নিরসনের আশা করা হয়েছিল। স্পট মার্কেটেও বর্তমানে এলএনজির দাম কম। তবে ডলার সংকটে পেট্রোবাংলা পর্যাপ্ত এলএনজি আমদানি করতে পারছে না। ফলে দ্রুতই এই গ্যাস সংকট কাটার সম্ভাবনা কম।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেন, ‘আমাদের বিতরণ এলাকাগুলোয় বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক দুই হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে আমরা পাচ্ছি এক হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। দৈনিক ঘাটতি থাকছে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে কিছু এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ দেখা দিয়েছে।’

দেশে দৈনিক ঘাটতি ১১২৭ মিলিয়ন ঘনফুট
বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। গতকাল মঙ্গলবার পেট্রোবাংলা সরবরাহ করেছে দুই হাজার ৮৭৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে দৈনিক ঘাটতি থাকছে এক হাজার ১২৭ মিলিয়ন ঘনফুট। ঘাটতির কারণে বর্তমানে গ্যাসের সংকট চলছে।

বিদ্যুৎ-শিল্পকে অগ্রাধিকার, আবাসিকে সরবরাহ সীমিত
পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা থেকে জানা যায়, রমজান মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প-কারখানাগুলোকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। সার কারখানা, সিএনজি স্টেশন ও আবাসিকে গ্যাসের সরবরাহ সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

 

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/04/05/1268126