৫ এপ্রিল ২০২৩, বুধবার, ১১:১৫

দোকানের সঙ্গে পুড়লো আমিনের স্বপ্নও

বাকরুদ্ধ আল আমিন। স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়েছে তার। কথা বলারও শক্তি নেই। কয়েক বছর আগে বাবাকে হারিয়েছেন। সাত সদস্যের পরিবারের হাল ধরতে অল্প বয়সে শুরু করেছিলেন ব্যবসা। আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার এবং বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তির কিছু বিক্রি করে ব্যবসা শুরু করেন। এখন লাখ লাখ টাকার পুঁজি হারিয়ে দিশাহারা তিনি। ভেতরে চাপা কান্না। সড়কে বসে পোড়া দোকানের দিকে হতাশার চোখে তাকিয়ে আছেন। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় পাইকারি মার্কেট এই বঙ্গবাজার।

ঈদকে ঘিরে আমাদের সব স্বপ্ন থাকে। কিন্তু হঠাৎ আগুনে সব কেড়ে নিয়ে গেল। বড় ইচ্ছা ছিল পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদ আনন্দ করবো। আমার সব স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল।

আল আমিনের দোকান মহানগর শপিং কমপ্লেক্স। নাম আল আমিন গার্মেন্টস। তিনি বলেন, অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করেছি। ক্ষুদ্র ব্যবসা। এখন সব শেষ। আল আমিন বলেন, আমার বাড়ি কেরানীগঞ্জ। আমার আয়ে পরিবার চলতো। বাবা অনেক আগে মারা যান। এখানে তিন-চার বছর ধরে ব্যবসা করি। অনেক আশা ছিল পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদের আনন্দ করবো, ঘুরবো। কিন্তু এখন আর সেটি হবে না। সকালে ঘুম থাকা অবস্থায় মার্কেট থেকে আগুনের খবর পাই। ছুটে এসে দেখি সব শেষ। এই ক্ষতি পোষাবার নয়। পরিবারের খরচ কীভাবে চালাবো। থ্রি-পিসের আইটেম ছিল সব। সোমবার চার লাখ টাকার নতুন জিনিস দোকানে তুলেছি। সবমিলিয়ে ১১ লাখ টাকার মালামাল দোকানে ছিল।

শুধু আল আমিনের নয়, হাজারো ব্যবসায়ীর স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়েছে। করোনার পর থেকে গত কয়েক বছর ভালো ব্যবসা করতে পারেননি তারা। তবে এইবার আশায় ছিলেন খুব ভালো হবে ব্যবসা। কিন্তু সেই আশা আর স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবাজার জান্নাত ফ্যাশনের মালিক ইউসুফ বলেন, এক মামা ফোন দিয়ে বলছে মার্কেটে আগুন লাগছে। আমার দুইটা দোকান ছিল। প্যান্ট এবং শার্টের। গত পরশু দিন ৫-৬ লাখ টাকার নতুন পোশাক উঠিয়েছি। এর আগে দোকানে ২০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। সেহ্রি খেয়ে নামাজ পড়ে বাসায় ঘুমিয়ে ছিলাম। বুঝতেই পারিনি কখন এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটবে। ঈদ উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে সবার কাছ থেকে ধারদেনা করেছিলাম। ঈদ শেষে তাদের সবার টাকা মোটামুটি পরিশোধ করার কথা ছিল। এই ঈদের জন্য আমাদের একটা বছর অপেক্ষায় থাকতে হয়। সারা বছর যেমন তেমন হোক না কেন ঈদে অনেক বিক্রি হয়। সবাই আশা করে এই সময়টা আমাদের সবচেয়ে ভালো ব্যবসা হবে। আমার ভাগ্য হয়তো ভালো না, নয়তো ভাগ্য এমন হবে কেন? পুরো পরিবার আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।

তমা গার্মেন্টের শাহ আলম বলেন, খবর শুনে দৌড়ে এসেছি। এসে দেখি আগুনে পুড়ছে দোকান। দোকানের ভেতরে আর যেতে পারি নি। পুড়ে সব শেষ। সব রেডিমেট জিনিস। লেডিস আইটেম। সারা বছরের তুলনায় ঈদকে ঘিরে আমাদের একটা স্বপ্ন থাকে; এই স্বপ্নটাই পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। এই সময়টাতে আমরা ব্যবসা করি। করোনার পর থেকে খুব খারাপ অবস্থা যাচ্ছিলো। মনে করেছিলাম এইবার হয়তো সুদিন ফিরে পাবো। কিন্তু একি হলো। গত তিনদিন আগেও ব্যাংক থেকে লোন এনে নতুন মাল উঠিয়েছি। কামরাঙ্গীরচরে পরিবার নিয়ে থাকি। ১২-১৪ লাখ টাকার মালামাল ছিল। কিছুই রক্ষা করতে পারলাম না।

ববি গার্মেন্টের মালিক তারেক বলেন, চার বছর ধরে এখানে ব্যবসা করি। শেষ চার-পাঁচদিন আগে নতুন জিনিস উঠিয়েছি। ১৩-১৪ লাখ টাকার মালামাল ছিল। আমাদের ভাগ্যই খারাপ। আমাদের এই মার্কেট থেকে এক পিস জিনিসও সরাতে পারিনি। সব পুড়ে গিয়েছে। ঈদের নতুন পোশাক উঠানো শেষ হয়েছিল। দুই-তিন দিনের মধ্যে ঈদের বেচাকেনা শুরু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেহ্রি করে সবেমাত্র একটু ঘুমিয়েছি। এর পর পর খবর পাই আগুনের। দৌড়ে এসে দেখি আগুন জ্বলছে। ভেতরে যাওয়ার কোনো সুযোগ পাইনি। কিছু নগদ টাকাও ছিল। এই মার্কেটে ৮০০-১০০০ দোকান আছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবো কিনা জানি না। এত বড় ক্ষতি কীভাবে সামলাবো। এখন সবাই লোন এবং ধারদেনা করে মালামাল উঠিয়েছে। আমি নিজেই ১২ লাখ টাকা লোন নিয়ে নতুন কাপড় উঠিয়েছি।

 

https://mzamin.com/news.php?news=49857