৫ এপ্রিল ২০২৩, বুধবার, ১১:১৪

আগুন নিয়ে নানা প্রশ্ন

ভোর ৬টা ১০ মিনিট। অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি প্রথম নজরে আসে। কয়েক ফুট দূরত্বে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরে খবর
যায়। যথারীতি সাড়া দেন ফায়ার কর্মীরা। তারা আসেন আগুন নেভাতে। আগুন বাড়তে থাকে। এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে এক মার্কেট থেকে আরেক মার্কেট। বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আগুনের লেলিহান শিখায় ভস্মীভূত হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি কাপড়ের মার্কেট বঙ্গবাজার। ঈদের আগে দেশের সবচেয়ে বড় এই কাপড় মজুত কেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হলো। কেন শুরুতে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা গেল না। কোন এত সময় লাগলো আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের এত কাছে একটি মার্কেট কেন এমন পরিস্থিতির মধ্যে ছিল যে আগুন লাগার পরও তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি? ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থার জোর তৎপরতার পরও কেন পুরো মার্কেট পুড়ে যাওয়ার আগে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি- এমন নানা প্রশ্ন ছিল মানুষের মুখে মুখে। এ ছাড়া আগুনের পেছনে অনেকে রহস্য খোঁজার চেষ্টা করছেন। কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র আছে কিনা তাও খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছেন। বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আসলেও শুরুতে তাদের গাফিলতি ছিল। এ কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পরে তৎপরতা বাড়লেও তা আর কাজে আসেনি। যদিও ফায়ার সার্ভিস এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছে ঘিঞ্জি পরিবেশ আর পানির স্বল্পতার কারণে আগুন নেভাতে দেরি হয়েছে। বিক্ষুব্ধ মানুষজন ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরে হামলাও করেছে। যখন মার্কেটে আগুন জ্বলছিল তখন কেন এই হামলার ঘটনা ঘটে তাও তদন্তের আওতায় আনা দরকার বলে মনে করছেন অনেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে আগুনের ঘটনা নতুন কোনো ইস্যু কিনা এমন প্রশ্নও তুলেছেন। তাদের এই প্রশ্নের সমালোচনাও করেছেন অনেকে।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ইতিমধ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখনো আগুনের কারণ নিয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ড রহস্যজনক। অনেকেই এটাকে পরিকল্পিত মনে করছেন। কারণ বঙ্গবাজারের ৪টি টিন শেড মার্কেটে দীর্ঘদিন ধরে বহুতল পাকা মার্কেট নির্মাণের চেষ্টা হচ্ছে। এজন্য ব্যবসায়ীদের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কথা বলে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা সরে যাননি। হাইকোর্টে রিট করে তারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অগ্নিকাণ্ডের পর ব্যবসায়ীরা বলেন, এমন এক সময়ে আগুনের সূত্রপাত যখন ওই এলাকায় ব্যবসায়ীদের কেউ ছিল না। রমজান মাসে এই সময়ে পুরো এলাকা নীরব থাকে। নিরাপত্তা রক্ষী ছাড়া আশপাশে আর কোনো মানুষ ছিল না। তাই কীভাবে আগুন লেগেছে তা জানা যাবে কিনা তাও এখন বলা যাচ্ছে না।

আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় লাগার বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে বাতাস, পানি স্বল্পতা ও উৎসুক জনতার ভিড়ের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে কিছুটা দেরি হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাঈন উদ্দিন বলেন, ২০১৯ সালে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বঙ্গমার্কেটটি ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। এ ছাড়া আমরা ব্যানার টানিয়ে ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে ১০ বার নোটিশ দিয়েছি। আমাদের যা যা করণীয় ছিল সব করেছি। তারপরও এখানে ব্যবসা চলেছে।

https://mzamin.com/news.php?news=49862