৪ এপ্রিল ২০২৩, মঙ্গলবার, ১:০৬

যে কারণে নতুন কারিকুলামের সব বই সংশোধন হচ্ছে

তিনটি নয় নতুন কারিকুলামের সব বই সংশোধন করা হচ্ছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ১৩টি করে মোট ২৬টি বইয়ের সংশোধনী দিতে যাচ্ছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। শিগগিরই সংশোধনীগুলো উপজেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে
স্কুলগুলোতে পাঠানো হবে। এনসিটিবি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এনসিটিবি কর্মকর্তা ও স্ব স্ব বইয়ের লেখকরা দেশের বিভিন্ন স্থানের স্কুল ভিজিট করেন। এ সময় তারা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বেশকিছু অসঙ্গতি পেয়েছেন। সেখানে দেখা গেছে ২৬টি বইয়েই তথ্য ও বানানগত কিছু কিছু ভুল রয়েছে। তাই সব বই-ই সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাঠ্যবই প্রণয়নের দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠানটি।

এর আগে পাঠ্যবইয়ে ভুল ও অসঙ্গতির বিষয়টি সামনে এলে বিতর্কের মুখে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দু’টি বই প্রত্যাহার করে নেয় এনসিটিবি। এছাড়াও তিনটি বইয়ে সংশোধন আনা হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু ‘ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার’ অংশ হিসেবে এবার সব বইয়েই সংশোধন আনা হচ্ছে বলে জানান পাঠ্যবই প্রণয়নের দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। জানা গেছে, এনসিটিবি কর্মকর্তারা গেল মার্চে দেশের ২৬টি জেলার ৫৩টি স্কুল ভিজিট করেছেন।

এ সময় তারা স্কুলগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের থেকে পাঠ্যবইয়ে অসঙ্গতির বিষয়ে মতামত নেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা নিজেদের বাসার পাশের কয়েকটি স্কুল ভিজিট করেন। এখানেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতামত নেয়া হয়। আর বইগুলো লেখার সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তারাও স্ব স্ব বই নিয়ে বিভিন্ন স্কুলে ভিজিট করে অসঙ্গতি তুলে আনেন। আবার বিশেষজ্ঞদের থেকেও পরামর্শ গ্রহণ করা হয়। সবার পর্যবেক্ষণে যেসব অসঙ্গতি ধরা পড়েছে সেসব সংশোধন করা হচ্ছে। শিগগিরই সংশোধনীগুলো স্কুলগুলোতে পাঠানো হবে। এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষককেও একটি নির্দেশনা দেয়া হবে এনসিটিবি থেকে।

এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, এটি আমাদের রেগুলার প্রসেস। আমরা শুরু থেকেই বলেছি নতুন কারিকুলামে বইগুলো এবার পরীক্ষামূলক দেয়া হয়েছে। সেখানে যেসব ভুল ধরা পড়বে তা আমরা আগামী ২০২৪ সালে সংশোধন করে দেবো। এছাড়া বড় ধরনের কিছু অসঙ্গতি থাকলে সেটির সফ্ট কপি আমরা স্কুলগুলোতে পাঠিয়ে দেবো। তিনি বলেন, আমাদের কর্মকর্তারা স্কুল ভিজিট করেছেন। এছাড়াও স্ব স্ব বইয়ের লেখক স্কুলে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিশেষজ্ঞরাও নিজেদের মতামত দিয়েছেন। সবার সব পরামর্শ ও পত্র-পত্রিকায় উঠে আসা বিভিন্ন অসঙ্গতি সব একসঙ্গে করেই আমরা সংশোধনী দিচ্ছি। এবার আমরা শুধু তথ্য ও বানানে ভুল থাকলে সেগুলোর সংশোধনী সফ্ট কপি আকারে উপজেলা শিক্ষা অফিসে পাঠিয়ে দেবো। আর যেখানে বাক্যটাকে আরও সহজ বা আরও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যায় সেগুলো আমরা আগামী শিক্ষাবর্ষে সংশোধন করে দেবো।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, গত ১৫ ও ১৬ই মার্চ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা দেশের ২৬টি জেলার ৫৩টা স্কুল ভিজিট করেছেন। এ সময় তারা স্কুলগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। নতুন কারিকুলামের বই নিয়ে অসঙ্গতির বিষয়ে জানতে চান। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের থেকে পাওয়া পর্যবেক্ষণগুলো পরবর্তীতে এনসিটিবিতে জমা দেন। এছাড়া এনসিটিবি নিজেদের কর্মকর্তাদের নিজ নিজ বাসার পাশের একটি করে স্কুল পরিদর্শনের নির্দেশ দেন। তারাও নতুন কারিকুলামের বই নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে পর্যবেক্ষণ এনসিটিবিতে জমা দেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০ থেকে ২২শে মার্চ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নিয়ে ৬ জন বিশেষজ্ঞ নতুন কারিকুলামের পাঠ্যবই নিয়ে নিজেদের মতামত দেন। আবার প্রত্যেক লেখক নিজের বই নিয়ে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অভিমত জানতে স্কুলগুলোতে ভিজিট করেন। তারা যেসব অসঙ্গতি পেয়েছেন সেগুলো আর এনসিটিবি কর্মকর্তাদের থেকে পাওয়া অসঙ্গতি সব এক সাথ করে সংশোধন আনা হচ্ছে ২৬টি বইয়ে। লেখকরা স্ব স্ব বই নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতামত নিলেও এনসিটিবি কর্মকর্তারা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ১৩টি করে ২৬টি বইয়ের বিষয়েই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তার ভিত্তিতে ২৭ থেকে ৩১শে মার্চ পরিমার্জনের কাজ করে এনসিটিবি। এক্ষেত্রে তথ্য ও বানানগত ভুল এবারই সংশোধন করে দেয়া হচ্ছে। আর যেখানে ভাষাগত অসঙ্গতি পাওয়া গেছে তা আগামী বছর সংশোধন করা হবে।

গত ১লা জানুয়ারি থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামে পাঠদান শুরু হয়। কিন্তু বছরের শুরুতে এসব বইয়ে অসঙ্গতির বিষয়টি সামনে আসে। পরবর্তীতে ১০ই ফেব্রুয়ারি এনসিটিবি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দু’টি প্রত্যাহার করে নেয়। এছাড়া তিনটি বইয়ে সংশোধন আনা হবে বলে জানানো হয়। সেগুলো হলো- ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলনী পাঠ’ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’। কিন্তু এখন সব ক’টি বইয়েই সংশোধনী আনছে প্রতিষ্ঠানটি। ভুলগুলোর সংশোধনী শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে স্কুলগুলোতে পাঠানো হবে। তার সঙ্গে প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরাবর একটি চিঠি দেয়া হচ্ছে এনসিটিবি থেকে। যেখানে প্রধান শিক্ষকদের জন্য কিছু নির্দেশনা থাকছে। সেখানে লেখা থাকবে, স্ব স্ব বিষয়ের শ্রেণি শিক্ষককে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার। শ্রেণি শিক্ষকরা নির্দেশনার আলোকে শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীদের বইগুলো ঠিক করে দেবেন। শিক্ষকরা বইয়ের পৃষ্ঠা ও লাইন ধরে ধরে ভুলগুলো সংশোধন করবেন।

https://mzamin.com/news.php?news=49696