৪ এপ্রিল ২০২৩, মঙ্গলবার, ১:০১

তামাকের চেয়ে ই-সিগারেটে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ৫০০ শতাংশ বেশি

ই-সিগারেটে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তামাকের চেয়ে ৫০০ শতাংশ বেশি। এত স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকার পরও বিশ্বব্যাপী বেড়ে চলেছে ই-সিগারেটের ব্যবহার ও ব্যবসা। মুখ ভরে ধোয়া উড়ানো এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনের কারণে কিশোর-তরুণরা আরো বেশি ক্ষতিকর এই ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক সিগারেটের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ২০১১ সালে ৭০ লাখ মানুষ এটি ব্যবহার করত। কিন্তু ২০১৮ সালে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা চার কোটি ১০ লাখে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশে ২০১৭ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্টেটিসটিকস (বিবিএস) ই-সিগারেটের ওপর যে জরিপ পরিচালনা করে তাতে দেখা গেছে, বাংলাদেশের দুই লাখ মানুষ ই-সিগারেট ব্যবহার করত এবং তখন আরো চার লাখ মানুষ একবার করে হলেও তা ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছেন হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা: সোহেল আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ই-সিগারেটের ব্যবহার তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।’ যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেই ই-সিগারেটের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে সেখানে প্রতি পাঁচজনে একজন শিক্ষার্থী এতে আসক্ত। বাংলাদেশে এ সংক্রান্ত কোনো সুনির্দিষ্ট উপাত্ত না থাকলেও অভিজাত এলাকার চোখ ধাঁধানো শপিংমলের ভেপিং (ই-সিগারেটের সংক্ষিপ্ত নাম) শপগুলোরে ক্রেতাদের দেখলে বোঝা যায় আমাদের দেশের চিত্রও খুব বেশি ভিন্ন নয়।

নিকোটিনযুক্ত গ্লিসারল দ্রুবণ ই-লিকুইড বা ই-জুস নামে পরিচিতি। ব্যাটারিচালিত যন্ত্র দিয়ে এই ই-জুসকে শ্বাসের সাথে গ্রহণ করা হয়। এতে সরাসরি তামাকের পরিবর্তে তামাকের মূল উপাদান নিকোটিন থাকে। ব্যাটারিচালিত যন্ত্রের মাধ্যমে নিকোটিন ছাড়াও বিভিন্ন রাসায়নিক মিশ্রিত সুগন্ধির ধোঁয়া টানা হয়। এমনকি গাজার নির্যাসও থাকে এর মধ্যে। এটাকে হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট (এইচটিপি) বলা হয়ে থাকে। এটা তামাক থেকে তৈরি সিগারেটের ভিন্ন রূপ। এর মধ্যে তামাকের পুরো স্বাস্থ্য ঝুঁকিতো রয়েছেই, একই সাথে অন্যান্য কিছু সুগন্ধি থাকায় এর ব্যবহারকারীর ক্ষতির পরিমাণ আরো বেড়ে যায়।

অধ্যাপক সোহেল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ই-সিগারেটকে তামাক থেকে তৈরি সিগারেটের বিকল্প হিসেবে উপস্থাপনের একটি প্রবণতা তৈরি হলেও প্রকৃতপক্ষে এটা মোটেও নিরাপদ নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে ই-সিগারেটকে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করে একে নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ করেছে।’

ই-সিগারেটে ব্যবহৃত ই-জুসে থাকে গ্লিসারল ও প্রোপাইলিন। এই উপাদানটি খাদ্য দ্রুব্যের মধ্যে থাকলে বিষাক্ত হিসেবে না থাকলেও এর বাষ্প বা ধোঁয়া শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে থাকে। একই সাথে এর ধোঁয়া শ্বাসনালীর নিজস্ব সুরক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করে দেয়। ফলে বারবার শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ হয়ে থাকে।

ই-সিগারেটের নিকোটিন শিশু ও গর্ভবতি মায়েদের জন্য ভয়াবহ বিপজ্জনক। উচ্চমাত্রার এই নিকোটিন স্নায়ুতন্ত্রের স্টেমসেলকে ধ্বংস করে অকাল বার্ধক্যসহ স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ ডেকে আনে। নিকোটিনের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ে অনেক বেশি। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণালব্ধ তথ্যমতে, ই-সিগারেট ব্যবহারে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৭১ শতাংশ, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ৫৯ শতাংশ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

ই-জুসে যে ফ্লেভার বা সুগন্ধি ব্যবহার করা হয় এর কারণে শ্বাসতন্ত্র, লিভার, কিডনির দীর্ঘমেয়াদি রোগ ঘটানো ছাড়াও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ই-জুসে এছাড়াও আছে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের ক্ষুদ্র কণা, ভারী ধাতব কণা ও ফরমালডিহাইডের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক। এগুলো শরীরে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগ তৈরি করে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/739065