২ এপ্রিল ২০২৩, রবিবার, ১১:৩৫

ঈদের বিক্রিতে মন্দা চিন্তায় ব্যবসায়ীরা

ঈদের আর বেশিদিন নেই। এমন পরিস্থিতিতেও ক্রেতা নেই কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টসপল্লিখ্যাত এই মার্কেটে - সমকাল
দেশের অভ্যন্তরে মানুষের পোশাকের চাহিদা মেটাতে আশির দশকে বুড়িগঙ্গার ওপাড়ে পুরোনো কাপড়ে জোড়াতালি দিতে যে কারখানা শুরু হয়েছিল, তা এখন দেশের অন্যতম বড় গার্মেন্টসপল্লি। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে খেঁজুরবাগ পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটারজুড়ে এখন গড়ে উঠেছে ছোট-বড় পাঁচ সহস্রাধিক পোশাক তৈরির কারখানা। এসব পোশাক বেচাকেনায় তিন শতাধিক ছোট-বড় মার্কেটে আছে প্রায় ১০ হাজারের বেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে মালিক সমিতির নিবন্ধিত সদস্য ছয় হাজার। বর্তমানে আসন্ন ঈদ ঘিরে এসব পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা দিনরাত কাজ করে চলেছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, সর্ববৃহৎ এ গার্মেন্টসপল্লি থেকে দেশের মানুষের ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ তৈরি পোশাকের চাহিদা মেটে। সম্প্রতি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ডলারের দাম বৃদ্ধি আর এলসি সংকটে বিদেশি পোশাক আমদানি কমে গেছে। এতে তাঁদের তৈরি দেশীয় পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। ফলে করোনা মহামারির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গার্মেন্টস মালিক ও ব্যবসায়ীরা নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন। তবে এখনও আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।

কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মুসলিম ঢালী বলেন, রোজার ঈদ এখানকার ব্যবসায়ীদের জন্য সবচেয়ে বড় মৌসুম। সারাবছর পোশাক তৈরি করে ঈদের এ মৌসুমে বিক্রি করা হয়। অন্যান্য বছর শবেবরাতের পর থেকে ২০ রমজান পর্যন্ত সব পোশাক বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর এখনও তেমন বিক্রি হয়নি। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলারের দাম বৃদ্ধি ও এলসি সংকটে বিদেশি পোশাক আমদানি হয়নি। ফলে দেশীয় বাজারে গুণগত মানের জন্য আমাদের পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। আশা করছি, এ বছর দেশের ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ পোশাকের চাহিদা আমরা মেটাতে পারব। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও মানুষ ঈদে নতুন পোশাক পরবেন। গত তিন বছরের করোনাকালীন লোকসান পুষিয়ে নিতে আমরাও এ বছর প্রস্তুতি নিয়েছি। কোনো ধরনের সংকট তৈরি না হলে ব্যবসায়ীরা সব পোশাক বিক্রি করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।

মফস্বল পর্যায়ে খুচরা বিক্রেতারা আর্থিক সংকটে আছেন উল্লেখ করে ব্যবসায়ীরা বলেন, অনেকেই পুঁজি গুছিয়ে মাল কিনতে পারছেন না। এ বছর অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ঋণ পাননি। ফলে তাঁরা অনেকেই করতে পারছেন ঈদের কেনাকাটা।

তবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঋণ না পাওয়ার অভিযোগ নাকচ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক। তিনি বলেন, এ ধরনের তথ্য আমাদের কাছে নেই। তার পরও আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

গত শুক্রবার সরেজমিন কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, গার্মেন্টসপল্লির দোকানে তেমন ভিড় নেই।
অন্যান্য বছরে এ সময়ে ব্যবসায়ীরা ভিড় সামলাতে না পারলেও এদিন দুপুর পর্যন্ত অনেকে অলস সময় কাটিয়েছেন। তাঁদের দাবি, শবেবরাত থেকে যে পাইকারি বিক্রি শুরু হয়েছিল, তাতে তাঁরা লাভ করে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু রমজান শুরুর পর বাজারে ধস নামে। হঠাৎ করে মফস্বল থেকে ব্যবসায়ীদের আসা কমে যায়। রমজানের বাকি দিনগুলোতে মফস্বল থেকে ক্রেতারা না এলে আবারও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

ব্রা‏‏হ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার ইয়াং কালেকশনের মালিক ইমরান হোসাইন ১১ বছর ধরে কাপড়ের খুচরা ব্যবসা করছেন। তিনি বলেন, করোনার দুই বছর বাদ দিয়ে এবার খুচরা বিক্রি অন্যান্য বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কম। শবেবরাতের পর আজকে নিয়ে দু’বার এলাম। সব মাল স্টকে থাকবে। সামনের সপ্তাহে সবার বেতন হলে যদি বিক্রি হয়, তাহলে আরেকবার আসব। ভোলা সদর থেকে আসা নয়নমণি ফ্যাশনের মোহাম্মদ সোহাগ জানান, এ বছর প্রথমবার যে কাপড় নিয়ে গেছেন, তা এখনও বিক্রি হয়নি। প্রতিবছর মানুষ যেভাবে রমজানের শুরু থেকে কেনাকাটা করেন, এ বছর সেভাবে করছেন না। মানুষের হাতে টাকাপয়সা নেই। সংসার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

যশোরের খুচরা বিক্রেতা লিটু বলেন, এক যুগ ধরে ব্যবসা করি। এ বছর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। এমন সময় কখনও আসেনি। পাইকারি বিক্রেতার কাছে সব সময় মাল থাকে না। টাকা না থাকায় তেমন মাল নিতে পারিনি। গত বছর আরেকজনের ঋণে গ্যারান্টার ছিলাম, তিনি ঋণ শোধ করতে পারেননি। তাই আবেদন করেও ঋণ পাইনি।

কেরানীগঞ্জের পাইকারি পাঞ্জাবি আর পায়জামার বড় প্রস্তুতকারক শেখ সাদী গার্মেন্টস। এই গার্মেন্টসের কয়েকটি শোরুম আছে বিভিন্ন মার্কেটে। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার রেজাউল হক জানান, গত বছরের তুলনায় পাঞ্জাবির কাপড়ের দাম গজে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা বেড়েছে। ফলে পাঞ্জাবির দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা। মফস্বল থেকে অনেকে ১০০ পিস পাঞ্জাবি কেনার জন্য এসেছেন। কিন্তু দাম বাড়ায় ৫০ পিস নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টসপল্লিতে দেশি পোশাকের সঙ্গে আছে বিদেশি পোশাক। কিন্তু ডলার সংকটে এ বছর ঈদের আগে নতুন মাল আমদানি করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, পোশাক বিক্রির মূলত দুটি মৌসুম। এক শীতের পোশাক, আরেকটা ঈদের পোশাক। এবার দুই মৌসুমেই বিক্রি ভালো হয়নি।

https://samakal.com/whole-country/article/2304165495