৩১ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার, ১২:১১

ফের বাড়ছে মুরগির দাম

কয়েক দিন নিম্নমুখী থাকার পর আবার বাড়তে শুরু করেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। দুই দিনের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোয় ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে মাছ ও ডিমের দামও বেড়েছে। তবে ইফতারি তৈরির উপকরণ লেবু, শসা ও বেগুনের দাম কমেছে। খুচরা মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারিতে আবার দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরায়ও তাঁরা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রোজা শুরুর দেড়-দুই মাস আগে থেকে অস্থির হয়ে ওঠে মুরগির বাজার। রোজার দুই দিন আগে রেকর্ড দাম বেড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় ২৭০ টাকায়, আর সোনালি মুরগির কেজি হয় ৩৮০ টাকা। গত ২৩ মার্চ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে পোলট্রি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈঠক এবং এফবিসিসিআই সরকারকে মুরগি আমদানি উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরামর্শ দিলে বৃহৎ খামারিরা দাম কমিয়ে মুরগি বিক্রি শুরু করেন। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত কমে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় দাঁড়ায়। একই সঙ্গে সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমে ৩৪০ টাকায় নেমে আসে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, সেগুনবাগিচা ও রামপুরা কাঁচাবাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন করে দাম বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি দরে, সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি দরে। দু-তিন দিন আগে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা এবং সোনালি মুরগির দাম ছিল প্রতি কেজি ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনে ১০ টাকা বেড়ে ডিম ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, এক সপ্তাহ মুরগির দাম কমার পর দুই দিন ধরে আবার বাড়তে শুরু করেছে। পাইকারিতে বাড়ার কারণে খুচরায় কেজিতে ব্রয়লার মুরগি ২০ থেকে ৩০ টাকা এবং সোনালি মুরগি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে।

রামপুরা কাঁচাবাজারের জিহাদ ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী মো. বায়েজিদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার মুরগির কেজি ২২০ টাকা এবং সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মুরগির বাজার কিছুটা ওঠানামা করবেই। তবে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকার মধ্যে থাকাটা ভালো। আমরা বাজার পর্যবেক্ষণ করছি, যাতে ২২০ টাকার বেশি না উঠতে পারে।’

বাড়ছে মাছের দাম : সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোয় কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে মাছ বিক্রি হচ্ছে। বড় রুই মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা, মাঝারি রুই ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাতল মাছ প্রতি কেজি ৩৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। বড় আকারের শিং মাছ প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, আইড় মাছ প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা, কই মাছ প্রতি কেজি ২৬০ টাকা, টেংরা মাছ প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, পাবদা মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা, মাঝারি সাইজের চিংড়ি প্রতি কেজি ৭৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

রামপুরা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সুজন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন মাছের আড়ত থেকেই আমাদের বাড়তি দামে কিনে আনতে হচ্ছে, যার কারণে দাম কমিয়ে বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই।’

অপরিবর্তিত রয়েছে নিত্যপণ্যের বাজার : সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে চাল, ডাল, চিনি, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দামে পরিবর্তন আসেনি। তবে ছোলার দাম কেজিতে কিছুটা কমেছে। পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪০ টাকা, দেশি রসুন প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকা, আমদানি করা রসুন প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, দেশি আদা প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, ছোলা প্রতি কেজি ৯০ টাকা, মসুর ডাল (ছোট) প্রতি কেজি ১৪০ টাকা, বড় মসুর ডাল প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ১২০ টাকা, পোলাওয়ের চাল (খোলা) প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা আর প্যাকেটজাত প্রতি কেজি ১৭০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

কমেছে ইফতারি তৈরির উপকরণের দাম : সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ইফতারি তৈরির উপকরণ লেবু, বেগুন, শসাসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম কমেছে। দাম কমে বড় আকারের লেবুর হালি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের লেবুর হালি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রথম রোজার দিন বড় আকারের লেবুর হালি ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। একইভাবে কমেছে শসা ও বেগুনের দাম। দেশি শসা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা, হাইব্রিড শসা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৫০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
বেশ কিছু সবজি আগের বাড়তি দামেই বিক্রি করা হচ্ছে। লাউ আকারভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৮০ টাকা, শিম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পটোল প্রতি কেজি ৮০ টাকা, শজনে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।


https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/03/31/1266440