৩১ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার, ১২:১০

কাপড়ের পাইকারি বাজারে ক্রেতা কম

রোজা শুরু হয়েছে সপ্তাহ হলো। তবে এখনো পাইকারি কাপড়ের বাজার জমেনি। বিক্রেতারা কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। মিলছে না ক্রেতার দেখা। প্রতি বছর রমজানে ইসলামপুর কাপড়ের পাইকারি বাজারে ক্রেতার চাপে ঢোকা যায় না। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে খুচরা ক্রেতারা এখানে ভিড় জমান। তবে এবার ভরা মৌসুমেও ক্রেতার দেখা নেই। বেচাবিক্রিও কম। পাইকারি বাজারে এখন খুচরাও বিক্রি করতে হচ্ছে। এদিকে বিক্রি কম থাকায় অলস সময় পার করছেন দোকানিরা।

কেউ কেউ মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত। রোজার প্রথম সপ্তাহ যেতে চলেছে, আশানুরুপ ক্রেতা না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন দোকানিরা। অনেকে ব্যবসার পুঁজি হারানোর আশঙ্কা করছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়েও সমস্যা হবে বলে জানান তারা। বেচাবিক্রি কম কেন, জানতে চাইলে পাইকারি ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন বলেন, দেশের খুচরা ব্যবসায়ীদের হাল খারাপ। তারা জানিয়েছেন, এবার খুচরা বাজারে বিক্রি কম। কেউই বিপণি বিতানে আসছে না। শবেবরাতের পরে যেসব কাপড় নিয়েছিল, সেগুলো এখনও বিক্রি হয়নি। এরমধ্যে নতুন কাপড় নিয়ে তারা কি করবে। এজন্য নতুন করে কাপড় নিতে আসছে না। আবার কাপড়ের দামও অনেক বেড়ে গেছে। দাম বেশি বলে এবার ক্রেতাদের আগ্রহ কম। আর ১৫ রমজানের পরে পাইকারদের আর বেচাকেনা থাকে না। কর্মচারীদের বেতন দিবো কীভাবে- চিন্তায় আছি।

সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন দোকানের কর্মীরা টুলে বসে আছেন। ক্রেতা না থাকায় দোকানের মালামাল ঠিকঠাক করছেন। কেউ কেউ আবার পাশের দোকানের বিক্রয়কর্মীর সঙ্গে গল্প করছেন। যেখানে ক্রেতাদের একের পর এক মালামাল দেখানো আর দরদাম নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা, সেখানে মোবাইল ফোনে সময় পার করছেন কর্মীরা। ক্রেতা দেখলেই করছেন ডাকাডাকি। এমন চিত্র ইসলামপুরের এ এলাকার প্রায় সব মার্কেটেই।

কাপড়ের দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে ইসলামপুর পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, এলসি জটিলতা ও ডলার সংকটের কারণে এ বছর রঙ, সুতা আমদানি করা যাচ্ছে না। কাপড়ের উৎপাদন খরচ অস্বাভাবিক বেড়েছে। প্রতি কেজি থান কাপড়ের দাম ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। আবার দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির কারণে মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের বেশির ভাগই তাদের ঈদের বাজারের লিস্ট ছোট করে ফেলায় ব্যবসা হচ্ছে না। খুচরা বিক্রেতাদের বিক্রি না থাকায়, তাদেরও বিক্রি নেই। তবে কেউ কেউ বলছেন, ঈদের এক সপ্তাহ বাকি থাকতে ক্রেতারা খুচরা বাজারে ভিড় করবে, তখন পাইকারি বাজারেও বিক্রি বেড়ে যেতে পারে।

ইসলামপুরের টেক্স ওয়ান সিটির ব্যবস্থাপক মো. আবু রায়হান বলেন, ১৫ রমজানের পরে আর ক্রেতা নেই। ব্যবসা জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছি। পাইকারি বাজারে এখন খুচরাও বিক্রি করতে হচ্ছে। সারাদিন দোকানে বসে থেকে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। এটা কি পাইকারি মার্কেট? কর্মচারী, দোকান ভাড়াসহ সব খরচ দিয়ে এখন চলাই মুশকিল হয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে বিক্রি হবে কি না তাও বোঝা যাচ্ছে না।

ইরানি বস্ত্র বিতানের কর্ণধার মো. মনির হোসেন বলেন, রোজার শুরু থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত পাইকারি ব্যবসা জমজমাট থাকে। সারা দেশ থেকে ছোট ছোট খুচরা ক্রেতারা ইসলামপুরে আসেন। তবে এই বছর ক্রেতাদের আনাগোনা নেই। কি কারনে ক্রেতারা আসছেনা তা বুঝতে পারছি না। আগে এই সময় কথা বলার সুযোগ থাকতো না। আর এবার সারা দিন ৪ থকে ৫ জন ক্রেতা পাওয়া যায়। তাও খুচরা ক্রেতা। তারা যাকাতের কাপড় নিতে এসেছেন। অরবিট লুঙ্গির মালিক আজিজুর রহমান বলেন, অন্যবারের তুলনায় এবার বিক্রি অর্ধেকেরও কম। গত বছর করোনার মধ্যেও দিনে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার বিক্রি হতো। এখন সেটা ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। পাইকারিতে সাধারণত ১৫ রোজার পর আর বেচাকেনা হয় না। এবার রোজার প্রথম সপ্তাহ পার হতে যাচ্ছে। আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। হতাশাজনক পরিস্থিতি। খুচরা বিক্রি না হলে তো পাইকারি কাপড় বিক্রি কমবে- এটাই স্বাভাবিক।

মাদারীপুর থেকে আসা খুচরা ক্রেতা বাবলু শেখ বলেন, এলাকায় আমাদের বেচাবিক্রির অবস্থা ভালো না। আমার বেচতে পারলেতো মাল নিতে আসবো। আগে রমজানের শুরু থেকেই বেচাকেনা শুরু হতো আর এখন রোজার একসপ্তাহ চলে গেল কাস্টমারের দেখা নেই। এবার মাল নিতে এসেছি আর মনে হয় আসতে হবে না। বেচাবিক্রির যে হাল।

ইসলামপুরের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, সেখানে দেশি প্যান্টের পিস ২০০-১৫০০ টাকা, শাড়ি ৫০০-১৪০০ টাকা, থ্রিপিস ৮০০-১৪০০ টাকা, গজ কাপড় ৭০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় থ্রি পিস প্রতি সেট ১৫০০-৩০০০ টাকা, পাকিস্তানি থ্রিপিস প্রতি সেট ১২০০-৬৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি পাঞ্জাবি ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা হলেও বিদেশি পাঞ্জাবি ১৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্যমতে, ইসলামপুরে প্রায় শতাধিক মার্কেটে ছোটবড় মিলে পাইকারি কাপড়ের দোকানের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। এসব পাইকারি কাপড়ের দোকানের পাশাপাশি ছোট ছোট গার্মেন্টস পণ্যের দোকানও রয়েছে। দেশি কাপড়ের পাশাপাশি ভারতীয়, চীনা, পাকিস্তানি বাহারি কাপড় বিক্রি হয়। যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকার কাপড় বিক্রি হতো, সেখানে এখন বিক্রি হয় ১০ থেকে ২০ কোটি টাকার। দোকানগুলোতে কাজ করেন কয়েক হাজার মানুষ। পাজামা-পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি, থ্রিপিস, প্যান্টপিস, লুঙ্গিসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড় উৎপাদন ও বিক্রি হয় ইসলামপুরে। তবে দেশি কিংবা বিদেশি সব কাপড়ের চাহিদা এখন তলানীতে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রোজা শুরুর আগে দিনে যেখানে দুই থেকে চার লাখ টাকা বিক্রি হতো প্রতিটি দোকানে, সেখানে এখন বিক্রি হয় ২০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা।

https://mzamin.com/news.php?news=49119