হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ তীর্থ মহাষ্টমী স্নান উৎসবকে কেন্দ্রে করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে কুমিল্লার গৌরীপুর পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অফিসগামীরা বলছেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে। কখনোই সময়মতো কোথাও যেতে পারি না। রোজা রেখে দীর্ঘ যানজটে গাড়িতে বসে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় অফিসগামী মানুষকে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে যানজট আরো তীব্র হতে থাকে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় গাড়ি আটকে থাকে।
জানা গেছে, লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের যাত্রাকে ঘিরে লাখ লাখ মানুষের আগমনের কারণে এ যানজট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে কর্মব্যস্ত মানুষের সংখ্যাও। তীব্র যানজটে গন্তব্যে যেতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ ও কর্মস্থলে আসা যাত্রীরা। একই জায়গায় দীর্ঘ সময় আটকে থেকে সময় পার করতে হচ্ছে।
ব্যস্ততম ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে গত মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই যানজট দেখা দেয় তবে বুধবার ভোর থেকেই মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনে এই যানজট তীব্র হতে শুরু করে বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশ। হাইওয়ে পুলিশের শিমরাইল ক্যাম্পের পরিদর্শক মো. শরফুদ্দিন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসবকে কেন্দ্র করে এ যানজট দেখা দিয়েছে। গতকাল বুধবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সরেজমিন গিয়ে মহাসড়কে একই জায়গায় যানবাহনগুলোকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুরসহ কয়েকটি পয়েন্টে হিন্দু সম্প্রদায়ের লাঙ্গলবন্দ স্নানকে কেন্দ্র করে পূণ্যার্থীরা যানবাহন থেকে নেমে রাস্তা পারাপারের কারণে এ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। লাখ লাখ পূণ্যার্থীদের আগমনের কারণে মহাসড়কে ভোর থেকেই যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, তীব্র যানজটের কারণে অধিকাংশক চাকুরীজীবি পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে। অনেকেই আবার তীব্র যানজটের কারণে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন জরুরি কাজে বের হওয়া নারী ও বৃদ্ধরা। এদিকে বিভিন্ন যানবাহন মালিকরা এ সুযোগে বেশি ভাড়া আদায় করলেও তাতেও যাত্রীদের কোনো লাভ হচ্ছে না। যানজট এতই তীব্র আকার ধারণ করেছে যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এক পয়েন্ট থেকে আরেক পয়েন্টে যেতে ঘণ্টাখানেক সময় লেগে যায়। অনেক যাত্রীদেরকে বাসের জন্য দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া বাড়তি ভাড়া আদায় করার অভিযোগ রয়েছে যাত্রীদের।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মদনপুর থেকে সায়েদাবাদের ৩৫ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা করে নিচ্ছে। এছাড়া চিটাগাংরোড থেকে মোগরাপাড়ার ভাড়া ২৫ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকা করে নিচ্ছে।
বিভিন্ন বাসের হেলপার বেশি ভাড়া নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও এর নানা কারণ দেখাচ্ছে। তারা জানান, তীব্র যানজটের কারণে তাদের গাড়ি সময়মতো গন্তব্যস্থলে পৌঁছাচ্ছে না। যার ফলে তারা ভাড়া অল্প বেশি নিতে বাধ্য হচ্ছেন। মনির খন নামে এক যাত্রী জানান, শিমরাইল মোড় থেকে সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া চৌরাস্তার উদ্দেশ্যে তিনি সকাল ১০ টায় রওনা হয়েছেন। দেড় ঘন্টায় তিনি মাত্র মদনপুর পর্যন্ত আসতে পেরেছেন। যেখানে তার শিমরাইল মোড় থেকে মদনপুরে মাত্র ২০ মিনিটে পৌঁছে যাওয়ার কথা। আব্দুল করিম নামের এক যাত্রী জানান, অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে তীব্র যানজটের কারনে বাসায় ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
আল্লাহর দান পরিবহনের বাস চালক রুসুল মিয়া জানান, লাঙ্গলবন্দের স্নানের কারনে সড়কে বাড়তি গাড়ির চাপ। ফলে যানজটে আটকা পড়েছেন। টোল প্লাজা থেকে তিনি দুই ঘন্টায় কেওঢালা পাড় হয়েছেন। কামরুল ইসলাম নামে এক চাকরিজীবী দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, কুমিল্লা যাওয়ার উদ্দেশে ঘণ্টা খানেক আগে মদনপুর থেকে বাসে উঠলেও এখনো বাস একই স্থানে আছি। সাধারণ দিনগুলোতে কুমিল্লা যেতে সর্বোচ্চ ১ ঘন্টা সময় লাগত।
বেসরকারী একটি কোম্পানীতে চাকরি করেন মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে মহাসড়কের রায়পুর থেকে গাড়িতে ওঠেছি। এখন ঘড়িতে ৫০ মিনিট অতিবাহিত হলেও এখন আগের জায়গায় বসে আছি। মাত্র ৫ কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করে এখনও গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডে। এভাবে চললে অফিস যাওয়া সম্ভব হবে না। নূরজাহান বেগম নামে এক গার্মেন্টকর্মী জানান, দীর্ঘক্ষণ বাসে বসে আছি। কতক্ষণ রাস্তার এ অবস্থা থাকবে জানা নেই। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি পায়ে হেঁটেই গার্মেন্টসে যাব। আব্দুল কুদ্দুস নামে এক ব্যবসায়ী জানান, ব্যবসায়ের জরুরি কাজে রাস্তায় বের হয়েছিলাম। মহাসড়কে যে ভয়াবহ যানজট দেখছি তাতে করে আজ আর গন্তব্যস্থলে যাওয়া যাবে না। টিপুরদী থেকে শিমরাইল যাওয়ার জন্য নাফ বাসে উঠেছেন আলম নামের একজন ব্যবসায়ী। তিনি জানান, যানজটের কারণে সময় মতো গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। আমজাদ হোসেন নামের এক কাপড় ব্যবসায়ী জানান, রমজান মাস দোকানে কেনাকাটা বেশ ভালো। কাপড় কেনার জন্য ঢাকায় যাচ্ছি। মহাসড়কে তীব্র যানজট।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন জেলা থেকে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে প্রচুর মানুষ আসছেন। তাদের রাস্তা পারাপারের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য যানবাহন সিগন্যালে রাখতে হচ্ছে। এতে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ যানজট সন্ধ্যার মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন হাইওয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করছে।