৩০ মার্চ ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৪:০৭

সংশোধনে বড় ধরনের শুভংকরের ফাঁকি

ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের খসড়ায় দেশের প্রভাবশালী ঋণখেলাপি ও ব্যাংকের পরিচালকদের বড় ছাড় দেওয়া হয়েছে।

ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির একটি সংজ্ঞা দেওয়া হলেও এটি বাস্তবায়ন করতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে ব্যাংকগুলোকে।

এর মাধ্যমে ঋণ জালিয়াতির ক্ষেত্রে ফৌজদারি অপরাধ আড়ালে থাকার সুযোগ তৈরি হবে। সামনে চলে আসবে অর্থঋণ আদালতের মতো দুর্বল আইন।

ফলে জালজালিয়াতি করে ঋণখেলাপি হলে তারা আরও ছাড় পেয়ে যাবেন। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞায়ও কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
ব্যাংকের পর্ষদে পরিচালকদের সংখ্যা একজন কমলেও মেয়াদের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলে পরিচালকদের আগের আইনের সব সুবিধা সংশোধিত আইনেও বহাল রাখা হয়েছে। আইনটি সংশোধন করে আরও কঠোর করার পরিবর্তে বরং আগের আইনের সব সুবিধাই বহাল রাখা হয়েছে। এতে সংশোধনের নামে শুভংকরের বড় ধরনের ফাঁকি রয়েছে।

ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের খসড়া বিশ্লেষণ, অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকারদের মতামত থেকে পাওয়া গেছে উল্লিখিত সব তথ্য। মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এটি এখন অনুমোদনের জন্য বিল আকারে সংসদে উপস্থাপন করা হবে।

সূত্র জানায়, সময়ের প্রয়োজনে ও ব্যাংকিং খাতে তদারকি বাড়াতে এবং কিছু খাতে আইনের ধারা স্পষ্ট করতে এটি সংসদেও উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০২০ সালে। ২০২১ সালে আইনের একটি সংশোধনী প্রস্তাব কেন্দ্রীয় ব্যাংক তৈরি করে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।

এর মধ্যে গত বছর বিশ্বব্যাংক ও চলতি বছরে আইএমএফ ঋণের শর্ত হিসাবে আইনটি সংশোধনের চাপ দেয়। সরকার অঙ্গীকার করেছে এটি সংশোধন করতে হবে। আইএমএফ’র শর্ত অনুযায়ী সেপ্টেম্বরের মধ্যে এটি সংসদে উপস্থাপন করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের শর্ত মোতাবেক এটি আরও আগেই সংশোধনের কথা ছিল। তা না করায় সংস্থাটি ঋণের কিস্তি আটকে দিয়েছে।

এদিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা অনেক আগে থেকেই আইনটি সংশোধনের সুপারিশ করে আসছেন। কিন্তু সরকার থেকে জোরালো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এখন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ’র শর্তে সংশোধন করা হচ্ছে। কিন্তু সংস্থা দুটি ও অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশার ধারেকাছেও সরকার যায়নি।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা জানান, আইনটি সংশোধনের জন্য বড় একটি ধাপ অতিক্রম হলো। সামনে আরও অনেক ধাপ আছে। সরকার ইচ্ছে করলে একে আরও সংশোধন করতে পারে। নিয়ম অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে আইনের খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর বিল আকারে সংসদে উপস্থাপন করা হবে। সংসদীয় কমিটিতে পাঠিয়ে একে সংশোধন করার সুযোগ আছে। এছাড়া বিতর্কিত ধারাগুলোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দিয়ে আইনটি সংশোধন করার সুযোগ রয়েছে।

বর্তমান আইনে ঋণখেলাপির সংজ্ঞা প্রণয়নের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেওয়া আছে। সংশোধিত আইনেও তা রাখা হয়েছে। ২০২০ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সার্কুলার দিয়ে খেলাপি ঋণের নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে। এতে কোনো ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ৬ থেকে ৯ মাস পর খেলাপি হওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী কোনো ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ৩ থেকে ৬ মাস পর খেলাপি হয়। এক্ষেত্রে তিন মাস ছাড় দেওয়া হয়েছে। এতে খেলাপি ঋণ কম দেখানো সম্ভব হচ্ছে। এটি নিয়ে সংস্থা দুটির প্রবল আপত্তি। তারা একে আন্তর্জাতিকমানে করতে বলেছে। কিন্তু সংশোধিত খসড়ায় সুযোগ থাকলেও তা করা হয়নি। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিধি জারি করে এটি করতে পারে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। যে কারণে এ ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে দিয়ে সুবিধামতো পরিবর্তন করা হয়। আইনের খসড়ায় ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এখানে ঋণখেলাপিদের সংজ্ঞাও দেওয়া যেত। তাহলে পরে আইন সংশোধন ছাড়া বিধি জারি করে পরিবর্তন করা যেত না।

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটরে (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানের হওয়া উচিত। এটি হলে কোনো দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেখে ঝুঁকি বোঝা যাবে। নিজস্বভাবে এর সংজ্ঞা নিরূপণ করলে ঝুঁকি বোঝা যাবে না। এতে ব্যাংক খাত নিয়ে আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার সংকট দেখা দেবে।

তিনি মনে করেন, সরকার ইচ্ছা করলে আইনটি এখনো সংশোধন করার সুযোগ আছে। এসব আইন আন্তর্জাতিকমানের হওয়া উচিত। কেননা বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ব্যাংকের পর্ষদে একই সময়ে একই পরিবারের সর্বোচ্চ চারজন সদস্য থাকতে পারেন। খসড়ায় তা একজন কমিয়ে তিনজন করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো ব্যাংকের পর্ষদে একই সময়ে একই পরিবারের তিনজন সদস্য থাকতে পারবেন। এর আগে বিএনপি সরকারের সময়ে তা ২ জনে নামিয়ে আনা হয়েছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে প্রথমে তিনজন ও পরে তা চারজন করা হয়।

বিএনপি সরকারের আমলে পরিচালকদের মেয়াদ টানা ৩ বছর করে দুই দফায় সর্বোচ্চ ৬ বছর করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে মেয়াদ আরও এক দফা বাড়িয়ে ৯ বছর করা হয়। বর্তমানে একজন পরিচালক টানা ৯ বছর পর্ষদে থাকতে পারেন। আইনের খসড়ায়ও এ মেয়াদ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। অর্থাৎ টানা ৯ বছরই থাকতে পারবেন। এরপর ৩ বছর বিরতি দিয়ে আবার ৯ বছর থাকতে পারেন।

সূত্র জানায়, এর আগে আইন সংশোধনের সময় নতুন আইন কার্যকরের পর থেকে পরিচালকের পরবর্তী মেয়াদের শুরু থেকে এটি প্রয়োগ করা অর্থাৎ ৯ বছর গণনা শুরু হয়। আইন সংশোধনের কারণে দুই দফা এ সুযোগ পেয়েছেন পরিচালকরা। ফলে ২০১৩ সালের পর যারা পরিচালক হয়েছেন তারা এখনো ওই পদে বহাল রয়েছেন। এখন নতুন আইন কার্যকর হলেও একই ধারা বহাল থাকলে একই পরিচালক আরও ৯ বছর পরিচালক পদে থাকতে পারবেন। কেননা আইনটি যেদিন থেকে কার্যকর হবে তারপর থেকে পরিচালকদের যে মেয়াদ শুরু হবে সেদিন থেকে ৯ বছর গণনা করা হবে। এভাবে পরিচালকরা ৯ বছরের সুবিধা নিয়ে ব্যাংকে পরিচালক পদে থেকে যাচ্ছেন। এছাড়া কখনো মূল পরিচালক, কখনো বা বিকল্প বা আমানতকারীদের মধ্য থেকে পরিচালক নির্বাচিত হয়ে পর্ষদে থাকছেন। কারণ এক্ষেত্রে আইনের স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই। এবারও কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। পরিচালকদের যোগ্যতার বিষয়েও কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। ফলে পরিবারের সদস্যরা ব্যাংকিং বিষয়ে নীতি প্রণয়নে কোনো অভিজ্ঞ না হলেও তারা পর্ষদে স্থান পাচ্ছেন। এতে তারা কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না। উলটো ব্যাংকের অর্থ থেকে নানা সুবিধা ভোগ করছেন।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, একই পরিবার থেকে সর্বোচ্চ ২ জন ও একজন পরিচোলকের সর্বোচ্চ ৬ বছর পর্ষদে থাকার সুযোগ দেওয়া উচিত। এর বেশি কোনোক্রমেই নয়। মেয়াদ শুরুর ক্ষেত্রে শুভংকরের ফাঁকি বন্ধ করা উচিত। স্পষ্ট করে বলা উচিত, আইন যখনই কার্যকর হোক, কোনো পরিচালক টানা ৬ বছরের বেশি থাকতে পারবেন না। কারণ একটি ব্যাংকে পরিচালকদের অংশ মাত্র ৮ শতাংশ। বাকি ৯২ শতাংশই সাধারণ আমানতকারীদের। ফলে তাদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য দিতে হবে। আর পরিচালকরা ব্যাংকের মালিক নন। তারা এখন ব্যাংকের মালিক ভাবতে শুরু করেছেন। এটি সংশোধন করতে হবে।

পর্ষদে স্বতন্ত্র ও আমানতকারীদের মধ্যে থেকে পরিচালক রাখার বিষয়ে আইনে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। ফলে পরিচালকরা নিজেদের মতো করে স্বতন্ত্র ও আমানতকারীদের মধ্যে থেকে পরিচালক মনোনীত করেন। ফলে পর্ষদে স্বতন্ত্র ও আমানতকারীদের পক্ষের পরিচালকদের স্বতন্ত্র কোনো মতামত থাকে না। তারা মূল পরিচালকদের পক্ষেই অবস্থান নেন।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা রক্ষায় অডিট ফার্মগুলোর একটি তালিকা করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই তালিকা থেকে অডিটর নিয়োগ করতে হবে।

একইভাবে স্বতন্ত্র ও আমানতকারীদের মধ্যে থেকে পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০০ জনের একটি তালিকা করে দিতে পারে। এই তালিকা থেকে স্বতন্ত্র ও আমানতকারী পরিচালক নিয়োগ করতে হবে। ব্যাংক ওই তালিকার বাইরে যেতে পারবে না। ওই তালিকায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা থাকতে পারেন।

খসড়ায় ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপির সংজ্ঞা সম্পর্কে বলা হয়েছে, সামর্থ্য থাকার পরও ঋণ পরিশোধ না করলে, জালিয়াতি, প্রতারণা বা মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে ঋণ নিলে, যে উদ্দেশ্যে ঋণ নিয়েছিলেন-সেই উদ্দেশ্যে তা ব্যয় না করে অন্য খাতে স্থানান্তর করলে তাকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি বলা হবে।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এটি আসলে ঋণখেলাপির সংখ্যা। এসব কারণেই ঋণ খেলাপি হয়। বৈশ্বিক বা অভ্যন্তরীণ নেতিবাচক পরিস্থিতির কারণে যারা খেলাপি হয় তাদের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া যেতে পারে। এদের শনাক্ত করা সহজ। কিন্তু ইচ্ছাকৃত খেলাপি বলে কিছু থাকা উচিত নয়। দেশে বা বিদেশে নেতিবাচক পরিস্থিতির কারণে খেলাপি ছাড়া সব খেলাপিকে একই আইনের আওতায় আনা উচিত। নতুন আইনে ইচ্ছাকৃত খেলাপি শনাক্ত করা কঠিন হবে। কেননা জালজালিয়াতি বা মিথ্যা তথ্য নিয়ে ঋণ নেওয়ার পর তা খেলাপি হলে সে তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনেই বের হয়ে আসে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের নিজস্ব পরিদর্শনে এ ধরনের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে এমন নজির নেই বললেই চলে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির তালিকা প্রথমে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকে দেবে। কোনো ব্যাংক যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ইচ্ছাকৃত খেলাপির তালিকা না পাঠায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তখন ওই ব্যাংককে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা জরিমানা করতে পারবে।

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, এটি নতুন বিধান। কিন্তু এর প্রয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনার সুযোগ পাবে ব্যাংক। কেননা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তদন্তে খেলাপি করার নির্দেশনা ভূরি ভূরি। ফলে এ ধরনের ব্যাংককে জরিমানা করতে হবে। এতে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিশেষ ছাড় পেয়ে যাবে। কারণ বর্তমানে প্রচলিত আইনই প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। এর মধ্যে নতুন আইন কিভাবে প্রয়োগ হবে?

খসড়া অনুযায়ী পর্ষদের সদস্য বা আত্মীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে জামানত দিতে হবে। বর্তমানেও এ ধরনের বিধান চালু আছে। পরিচালকরা নিজ ব্যাংক থেকে তার মোট শেয়ারের ৫০ শতাংশ ঋণ নিতে পারেন। এ আইনে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
নতুন আইন অনুযায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিদেশ যাওয়া আটকে দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো সম্মাননা

পাবেন না। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে দাওয়াতও পাবেন না। কোনো পেশাজীবী, ব্যবসায়িক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক সংগঠনের কোনো পদেও থাকতে পারবেন না। একই সঙ্গে ঋণখেলাপিদের গাড়ি-বাড়ি নিবন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্স এবং যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের পরিদপ্তরে (আরজেএসসি) নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিঠি পাঠাতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ব্যাপারে প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দুটি করে কমিটি থাকবে। একটি কমিটি তাদের চিহ্নিত করবে, আরেকটি কমিটি তা চূড়ান্ত করবে। পরে প্রতিটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তালিকা পাঠাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে। তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে আপিল করতে পারবেন। তবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসাবে তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ওই তালিকা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার ৫ বছর পার না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ইচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত করাই বড় চ্যালেঞ্জিং। যে প্রক্রিয়ায় তাদের শনাক্ত করা হবে। এতে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ থাকবে। নেতিবাচক পরিস্থিতি ছাড়া খেলাপি হচ্ছে তারা সবাই ইচ্ছাকৃত খেলাপি। ফলে এর প্রয়োগ হবে প্রশ্নবিদ্ধ। ইচ্ছাকৃত খেলাপির নামে ছোট খেলাপিদের ক্ষেত্রে এ আইন প্রয়োগ হবে, বড় ও প্রভাবশালী খেলাপিরা পার পেয়ে যাবেন বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

খসড়ায় বলা হয়েছে, ঋণ পরিশোধে খেলাপি গ্রাহকদের নোটিশ দেওয়ার দুই মাসের মধ্যে অর্থ পরিশোধ করতে হবে। না করলে অর্থঋণ আদালতের মাধ্যমে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থঋণ আদালত কার্যকর নয়। এই আইনের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায় হচ্ছে না।

ফলে নতুন আইনের সুফল মিলবে না ব্যাংক খাতে। জানা গেছে, ১৯৯১ সালে প্রথম ব্যাংক কোম্পানি আইন প্রণয়ন করা হয়। এরপর থেকে গত ৩২ বছরে আইনটি সংশোধন হয়েছে ৭ দফা।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/659953