২৯ মার্চ ২০২৩, বুধবার, ৩:৩৮

দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব ব্যাংকিং খাতে

দেশের ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক মন্দার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ব্যাংকিং খাতে সামগ্রিক আমানতের পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। আর শহরের চেয়ে গ্রামে এ আমানত কমার হার বেশি। গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে শহরে আমানত বাড়ার হার যেখানে ২ দশমিক ২৮ শতাংশ হয়েছে, সেখানে গ্রামে না বেড়ে বরং কমেছে ১ দশমিক ২৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যাংকিং আমানত ও ঋণের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে প্রতি তিন মাস পর পর এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এবার গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
একই সময়ের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে তৈরি বাংলাদেশ ব্যাংকের অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের অর্থনীতি প্রধান তিনটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, বড় অর্থনীতির দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে এখনো সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ ও প্রতিকূল বৈশ্বিক পরিস্থিতি। বিশেষ করে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিদ্যমান পরিস্থিতি যেকোনো সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে। এ ছাড়া আগে নেয়া বাণিজ্য ঋণ বা ট্রেড ক্রেডিট ও স্বল্পমেয়াদি অন্যান্য ঋণ পরিশোধের কারণে এখন বৈদেশিক মুদ্রায় চাপ সৃষ্টি করেছে। বৈদেশিক মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল রাখতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। যে কারণে রিজার্ভ কমছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২১ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরে ব্যাংকিং খাতে সার্বিকভাবে আমানত বেড়েছিল ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে বেড়েছে শূন্য দশমিক ৭৪ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে আমানত বাড়ার হার কমেছে ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

২০২১ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরে শহরে আমানত বেড়েছিল ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে বেড়েছে ১ দশমিক ২৯ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে আমানত বাড়ার হার কমেছে ২ দশমিক ২৮ শতাংশ।

২০২১ সালের অক্টোবর ডিসেম্বরে গ্রামে আমানত বেড়েছিল ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে গ্রামের ব্যাংকের শাখাগুলোতে আমানত বাড়েনি। উল্টো আগের আমানত থেকে কমেছে ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। গত বছরের জানুয়ারি মার্চ প্রান্তিকেও গ্রামে আমানত প্রবাহ নেতিবাচক পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। গত এপ্রিল জুন ও জুলাই সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বাড়লেও গত অক্টোবর ডিসেম্বর প্রান্তিকে তা নেতিবাচক পর্যায়ে চলে গেছে। অর্থাৎ আগের চেয়ে কমে গেছে।

সূত্র জানায়, মোট আমানতের মধ্যে শহরের অবদানই বেশি, গ্রামের অবদান কম। মোট আমানতে গ্রামের অবদান কমেছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মোট আমানতের ২১ দশমিক ৫১ শতাংশ ছিল গ্রামের। গত ডিসেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ২৫ শতাংশে। একই সময়ে বেড়েছে শহরের অবদান। মোট আমানতের শহরের অবদান ৭৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি ব্যাংকে আমানত বেড়েছে প্রায় ১ শতাংশ, বিশেষায়িত ব্যাংকে কমেছে দশমিক ৮০ শতাংশ। বিদেশী ব্যাংকে বেড়েছে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোতে কমেছে ২ দশমিক ৯০ শতাংশ। এর আগে সব সময়ই ইসলামী ব্যাংকগুলোতে আমানত বাড়ত।

তবে ঋণের চাহিদা শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি বেড়েছে। বিশেষ করে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় কম সুদে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর কারণে গ্রামে এর চাহিদা বেশি। ফলে বিতরণও বেশি হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে ঋণ শহরে বেশি। মোট ঋণের ৮৮ শতাংশের বেশি শহরে ও গ্রামে ১২ শতাংশের কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, করোনার ধকল কাটিয়ে ওঠার আগেই গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। এর প্রভাবে দেখা দেয় বৈশ্বিক মন্দা। যা এখনও চলমান রয়েছে। এসব মন্দায় বিশেষ করে গ্রামে কর্মসংস্থান সংকোচিত হয়ে পড়েছে। মানুষের আয় কমে গেছে। একই সাথে বেড়ে গেছে নিত্যপণ্যের দাম। যে কারণে মানুষ এখন আয় দিয়ে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করে সঞ্চয় করতে পারছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অপর এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, অর্থনীতি প্রধান তিনটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার পাশাপাশি সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। চ্যালেঞ্জগুলো হলো বৈশ্বিক পরিস্থিতি, বড় অর্থনীতির দেশগুলোতে পুনরুদ্ধারের গতি মন্থর হওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্যের মিশ্র প্রবণতা, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো।

সম্ভাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে, বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনায় চড়া মূল্যস্ফীতিতে লাগাম পড়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ অনেক পণ্যের দাম কমছে, অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্ভাব্য যেকোনো সঙ্কটে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার তাৎক্ষণিক নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখা হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির গতি অব্যাহত থাকবে বলে এতে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/737691