২৯ মার্চ ২০২৩, বুধবার, ৩:২৩

সংকটের কবলে শিক্ষা ব্যবস্থা : সাধারণ শিক্ষা

-ড. মো. নূরুল আমিন

॥ গতকালের পর ॥
একটি মুসলিম দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা বোর্ড, টেক্সটবুক বোর্ড, এমন কি মাদরাসা বোর্ডেও অমুসলিম কর্মকর্তার মাত্রাতিরিক্ত আধিক্য শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইসলামকে নির্মূল করার ইঙ্গিতবহ নয় তো? শিক্ষা মন্ত্রালয়ের এক তথ্যানুযায়ী আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের শিক্ষক শিক্ষিকাদের শতকরা ৬৫ ভাগের ও বেশি অমুসলিম, মুসলমানদের মধ্যে আমাদের দেশে কি শিক্ষক হবার উপযোগী বেকার যুবক যুবতি নেই? প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বত্রই এখন এই প্রবণতা লক্ষণীয়? এর সাথে প্রতিবেশী হিন্দু ভারতের অবস্থা তুলনা করার জন্য সাচার কমিটির রির্পোট আমাদের হয়ত কিছু সজাগ করতে পারে।

আগেই বলেছি অধুনা আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের সাথে দেশব্যাপী ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপনের বিশাল কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করছি। এ ব্যাপারে ফেরআউনের আমলের একটি গল্প আমার মনে পড়লো। পাঠকরা এর প্রাসঙ্গিকতা কতটুকু আছে বিবেচনা করে দেখতে পারেন, গল্পটি হচ্ছে:

হামান নামে এক ব্যক্তি মিশরের জালেম শাসক ফেরআউনের বন্ধু ছিল। একদিন হামান ফেরআউনকে পরামর্শ দিল যে তুমি নিজকে খোদা দাবি কর। ফেরআউনের উত্তর ছিল, বন্ধু এদেশের মানুষ এটা কখনো মানবে না। হামান বললো আমাকে সময় দাও, আমি তোমাকে খোদা বানিয়ে ছাড়বো, প্রথমে ১০ বছরে আস্তে আস্তে এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে আসমানী কিতাবের শিক্ষা তুলে নিতে হবে। তারপর ১০ বছরে যারা এই আসমানী কিতাবের শিক্ষা দেয় তাদের উপর এমন কিছু মিথ্যা জঘন্য দোষ চাপিয়ে দিয়ে মেরে ফেলতে হবে, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম আসমানি কিতাবের শিক্ষকদের নাম শুনলেই ঘৃণা করে। বাংলাদেশের অবস্থার সাথে গল্পটি মিলিয়ে দেখতে পারেন।

এ প্রসংগে আরেকটি ঘটনা অনেকে পছন্দ করতে পারেন তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান খেলনা কবুতর হাতে নিয়ে জনসভায় সমাগত জনসমুদ্রের উদ্দেশে বললেন, আপনারা আমার হাতের এই সাদা কবুতরটি দেখতে পাচ্ছেন? জনতা সমস্বরে জবাব দিল জি দেখতে পাচ্ছি। এই কবুতরের কি হাত পা চোখ আছে? এই কবুতরের কি ডানা আছে, তারা বললেন আছে। এই কবুতর কি উড়তে পারবে? তারা বললেন না। তিনি বললেন কেন? সবাই একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করল, বলল, এর তো প্রাণ নেই, উড়বে কিভাবে? প্রফেসার আরবাকান বললেন পশ্চিমারা এরকম ইসলাম পালনকারী মুসলিম চায়, তারা চায় খেলনা কবুতরের মতো আপনারা নামায পড়বেন, কুরআন তিলাওয়াত করবেন, বিশাল ওয়াজ মাহফিল করবেন কিন্তু প্রাণহীন কবুতরের মত, ভেতরে কুরআনের শিক্ষা থাকবে না, দ্বীনের পথে লড়াই এর প্রেরণা থাকবে না। তিনি বললেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করা ঈমানের প্রাণ। এই প্রাণ না থাকলে মানবতার মুক্তির জন্য কোন কাজ করাই সম্ভব নয়, এই প্রাণ নাই বলেই আজকে আমাদের ঈমান আকিদা বিশ্বাস ও শিক্ষা ব্যবস্থার উপর এই হামলা আসছে।
পাঠ্যপুস্তকে মানুষের অস্তিত্ব ও পরিচয় নিয়ে ডারউইনের বিবর্তনবাদকে নিয়ে যেহেতু বেশি বাড়াবাড়ি করা হয়েছে সেহেতু তাকে নিয়েই আমি প্রথম আলোচনা করতে চাই, তার সময়কাল ছিল ১৮০৯ থেকে ১৮৮২ সাল।

আধুনিক যুগের প্রথম দিকে উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ যখন দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তরে বিস্তার লাভ করছিল তখন ইউরোপের বোটানিক্যাল গার্ডেন ও জাতীয় জাদুঘরসমূহে কর্মরত প্রকৃতিবাদী বিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেকেই অতীত ইতিহাসের বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তু ও গাছপালার নমুনার উপর অভূতপূর্ব কিছু গবেষণা কর্ম শুরু করেন। ১৮ শতকের দিকে এসে তারা ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন জীবজন্তু ও গাছপালার জীবাশ্ম নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং তাদের সাথে জীবন্ত প্রাণী ও গাছপালা তুলনায় ব্রতী হন। উনিশ শতকের প্রথমার্ধে এসে তাদের এ ধারণা পরিষ্কার হয় যে একসময় সমগ্র গাছপালা ও প্রাণিজগতের সম্পর্কের মধ্যে একটি সামঞ্জস্য ছিল যা এখন আর নেই। তারা তখন ব্যাপকভাবে জীববিজ্ঞানের পরিবর্তনের তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করেন। এটা করতে গিয়ে তাদের মধ্যে ঐক্যের পরিবর্তে অনেক মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়। ডারউইনের আমলে অধিকাংশ প্রকৃতি বিজ্ঞানী স্বীকার করতেন যে কিছু জীব প্রজাতির মধ্যেও পরিবর্তন ঘটেছে। যা হোক এই পরিবর্তনের কথা স্বীকার করে নিলেও এর সম্পর্কে কিছু অনুমান বা ধারনার কথা উঠে আসে যা এই পরিবর্তনের জন্য দায়ী। এগুলোর মধ্যে রয়েছে পরিবেশের প্রত্যক্ষ প্রভাব এবং প্রাণী বা উদ্ভিদের যান্ত্রিক গঠনের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া। ডারউইন এই পরিবর্তনের কারণগুলো থেকে ভিন্ন ধারণা পোষণ করে ক্রমবিকাশ বা বিবর্তনের একটি ধারণা প্রদানের চেষ্টা করেছেন এবং বলেছেন ‘Naturally occurring processes’ এর পরিবর্তনগুলোর ভিত্তি Naturally occurring processes গুলোই যা এখনো আমাদের চারপাশে ঘটে চলেছে। তার প্রণীত এই থিউরিটি অনেক প্রকৃতি বিজ্ঞানী গ্রহণ করেননি। তবে Alfred Russell Wales (1823-1913) নামক একজন বিজ্ঞানীকে তিনি তার সাথে পেয়েছিলেন, যিনি তাকে সমর্থন করে ছিলেন। তারা উভয়ে মিলে মূল থিউরি অফ ইভালুয়েশনটি তৈরি করেন।

এই থিওরি অনুযায়ী biological change takes place with two basic characteristics: 1) Variation: random variation occur in the traits of individual organisms and are passed on to their offspring.
2) Struggle for existence: there is an existential competition that insures advantageous traits are preserved and disadvantageous traits are eliminated.

থিওরি অফ ইভালিউশনের এই অংশটি প্রকাশিত হবার পর মানুষের উপর তার আদৌ কোন প্রভাব আছে কিনা অথবা তারা এর অন্তর্ভুক্ত কিনা তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রবল মতভেদ সৃষ্টি হয়। তারা প্রশ্ন তুলেন যে মানুষের মতো দেখতে এরকম অনেক প্রজাতির অস্তিত্ব এখন আর নেই। তারা এদের নাম দিয়েছেন Homo habilis, H.erctus, H.ergaster, H.heidelbergnsis, H neanderthalensis, H.floresiensis, etc.বলাবাহুল্য Homo habilis প্রাণীটি প্রায়ই ২.৩ মিলিয়ন বছর আগে বেঁচে ছিল। অন্যদিকে neanderthalensis নামক প্রাণীটি ২৪ হাজার বছর আগে মারা যায়। সামগ্রিকভাবে এই ক্ষুদ্র প্রাণীগুলোর বয়স ধরা হয় প্রায় ২.৫ মিলিয়ন বছর এবং এদেরকে বানর ও শিম্পাঞ্জির বংশধর হিসেবে গণ্য করা হয়। বানর শিম্পাঞ্জির বয়স তারা অনুমান করেছেন পঞ্চাশ লক্ষ বছর।

এখানে খ্যাতনামা বিজ্ঞানীরা যে প্রশ্নটি তুলেছেন সেটা হচ্ছে মানবজাতি এই ক্ষুদ্র পশু বানর ও শিম্পাঞ্জির বংশধর অথবা তাদের থেকে রূপান্তরিত কোন প্রাণী হতে পারে না, তাদের পূর্বপুরুষ এক নয়। ডারউইন অথবা তার সহযোগী কোন বিজ্ঞানী জীবাশ্মভিত্তিক গবেষণার পরিবর্তে জীবন্ত প্রাণীভিত্তিক কোন গবেষণার মাধ্যমে এ কথা প্রমাণ করতে পারেনি যে তাদের আমলে খ্রিস্টের জন্মের ১৮শ’ বছর পরে অথবা তারো হাজার হাজার বছর আগে বানর, হনুমান বা শিম্পাঞ্জি রূপান্তরিত হয়ে মানুষ হয়েছে। বরং প্রাকৃতিক বিজ্ঞানী ও দার্শনিকরা বিশ্বাস করতেন যে আল্লাহ স্বয়ং প্রজাতির সংখ্যা নির্দিষ্ট করে সৃষ্টি করেছেন। এরপর কোন কোন ক্ষেত্রে hybridization এবং mixing হয়েছে কিন্তু কোন মৌলিক পরিবর্তন হয়নি। ১৭৯০ সালে ডারউইনের দাদা Eramus কয়েকটি কবিতা প্রকাশ করেছিলেন যার মধ্যে বিবর্তনবাদের ধারণা ছিল। ১৮১০ সালে Jean-Baptise Lamark একটি পূর্ণাঙ্গ বিবর্তনবাদের ধারণা দিয়েছিলেন যার মূল কথা ছিল ব্যক্তিগতভাবে প্রাণীদের পরিবর্তন হয়, এই পরিবর্তন আবহাওয়া ও পরিবেশকে কেন্দ্র করে যা কালক্রমে তাদের অধস্তন পুরুষ ও বা সন্তান-সন্ততির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এই থিউরিকে Lamarkism বলে।

১৮৪৪ সালে Robert Chambers প্রাকৃতিক ইতিহাসকে ভিত্তি করে আরেকটি থিওরি প্রকাশ করেন যাতে বলা হয়েছে যে প্রাণী জগতের রূপান্তর ঘটে তবে তার পরবর্তী বা তার আসল নির্মাণ শৈলীর ভিত্তিতে।

ডারউইন যে থিউরিটির মাধ্যমে মানুষকে বানর হনুমান বা শিম্পাঞ্জির বংশধর বানানোর প্রস্তাবনা দিতে চেয়ে ছিলেন তা আসলেই ছিল একটি প্রস্তাবনা, এটি কোন প্রমাণিত সত্য নয়। তিনি নিজেও তা সত্য বলে স্বীকার করেননি এবং তার সমসাময়িক বিজ্ঞানীরা তা গ্রহণ করেননি। তারা বরং বলেছেন যে মানবজাতি সহ সব প্রজাতি আল্লাহর সৃষ্টি। তার এই থিওরি নিয়ে আমি আর এগুতে চাই না বরং পাঠকদের আমি’ ৪০ জন বিজ্ঞানীর দৃষ্টিতে আল্লাহর অস্তিত্ব’ শীর্ষক একটি বই পড়ার জন্য অনুরোধ করব। বইটির ভূমিকায় মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য রয়েছে।

ডারউইনের পর আমি জর্জ বার্নার্ডশ’ (১৮৫৬-১৯৫০) সর্ম্পকে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করতে চাই। তিনি একজন আইরিশ নাট্যকার, বিতার্কিক এবং রাজনৈতিক এক্টিভিস্ট ছিলেন। ১৮৫৬ সালের ২৬ জুলাই তার জন্ম এবং ১৯৫০ সালের ২রা নভেম্বর তিনি মৃত্যু বরণ করেন। ১৮৮০ সাল থেকে তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত পাশ্চাত্য থিয়েটার, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। মৃত্যুর পরও তার এই প্রভাব বহুদিন অব্যাহত ছিল। ১৯২৫ সালে তিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। জাতে তিনি ছিলেন প্রটেষ্টান খৃষ্টান। তিনি স্কুল এবং স্কুল শিক্ষকদের ঘৃনা করতেন। ১৮৬৫ সাল থেকে ১৮৭১ সাল পর্যন্ত তিনি চারটি স্কুলে পড়েছেন, তার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তার মন্তব্য ছিল; School and School Masters were prisons and turnkeys in which children are kept to prevent them disturbing and chaperoning their parents’’ ১৮৭১ সালে তিনি স্কুল পরিত্যাগ করে ডাবলিনের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কেরানীর চাকরি গ্রহণ করেন এবং নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের পুরস্কার হিসাবে হেড ক্যাশিয়ারের পদে পদোন্নতি পান। ১৮৭৬ সাল পর্যন্ত জর্জ শ’ নামে পরিচিত ছিলেন। এর পর তিনি জর্জ শব্দটি পরিত্যাগ করে বার্নার্ড শ’ নাম গ্রহণ করেন। তিনি রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন, তার বিখ্যাত উক্তি “বর্তমান বিক্ষুব্ধ বিশ্বে মোহাম্মদ (দ:) কে ডিক্টেটার বানিয়ে দিলে তিনি অনায়াসে মানুষের মধ্যে শৃঙ্খলা শান্তি ও ইনসাফ ভ্রাতৃত্ব ফিরিয়ে আনতে পারবেন।” এই উক্তিটি তার সমসাময়িক রাজনীতিকদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি, তিনি নাটক লেখায় মনোনিবেশ করেন। তার নাটক প্রথমত: কেউ কিনতো না, বন্ধুরা তার বাজার সংগ্রহে ও বিস্তারে সহায়তা করেন এবং তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জনে সক্ষম হন।

তিনি বিশ্বাস দর্শনে কোথাও স্থিতিশীল হননি প্রথমত: লিবারেল ডেমোক্র্যাসি, পরে মার্কসবাদ ও সমাজবাদ, ফেবিয়ান মুভমেন্ট, লেবার পাটি সর্বত্র তার বিচরণ ছিল। জীবদ্দশায় তিনি বহু ধারণা বিশ্বাস প্রচার করেছেন। স্পেনীশ পণ্ডিত ও রাজনীতিবিদ সালভাদার ডি মাদারিকা তাকে A pole of negative electricity set in the people of positive electricity বলে অভিহিত করতেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তিনি শেষ জীবনে স্রষ্টার কার্যকারিতা ও সৃষ্টি, বিশেষ করে মানুষের লক্ষ্য উদ্দেশ্য খুঁজে পাননি, খৃষ্টান হয়ে তার ধর্ম বিশ্বাসেও টিকে থাকেন নি, তিনি মার্কস, এঞ্জেল প্রমুখের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নাস্তিক্যবাদে ঝুঁকে পড়ে ছিলেন, এবং মানুষের একটি সংজ্ঞা দিয়েছিলেন, তা হচ্ছে Man is a puny speci on tiny planet revolving round a tenth rate star drifting aimlessly in an endless cosmic Ocean.

মার্কস, হেগেল, এঞ্জেল, ডারউইনসহ অনেক তথাকথিত দার্শনিক চিন্তাবিদ নাট্যকার যারা নাস্তিকতার দিকে ঝুঁকে পড়ে ছিলেন, স্রষ্টায় বিশ্বাস করলেও তার কার্যকারিতা উপলব্ধি করেন নি তারাই মানুষকে প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে আল্লাহর সৃষ্টি হিসাবে অস্বীকার করেছেন এবং অন্যদের তা করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

https://dailysangram.com/post/520578