২৬ মার্চ ২০২৩, রবিবার, ২:০৭

পাঁচ বছরে অগ্রগতি ১৫ শতাংশ

লক্ষ্য ছিল তিন বছর ৯ মাসের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার। কিন্তু তা করতে পারেনি প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর। গত পাঁচ বছরে এই প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ

দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পাঁচ বছর আগে দেশের ২৩টি জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। লক্ষ্য ছিল তিন বছর ৯ মাসের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার। কিন্তু তা করতে পারেনি প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর। গত পাঁচ বছরে এই প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে আর্থিক অগ্রগতি ৭ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে এই প্রকল্প শেষ করতে আরও তিন বছর সময় পেয়েছে সংস্থাটি। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প শেষ করার কথা ছিল ২০২১ সালের জুন মাসে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় ব্যয় বৃদ্ধি না করে প্রকল্পটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত করা হয়।

কিন্তু তাতেও প্রকল্পটি শেষ হয়নি। কারণ হিসেবে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কার্যক্রম বিলম্বে শুরু হওয়া এবং কোভিড-১৯ মহামারির উদ্ভূত পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর। এদিকে শুরু হওয়ার কয়েক বছর পর প্রকল্পটিতে নতুন করে সংশোধন আনা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাটি বলছে, কারিগরি শিক্ষাক্রমে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০২১ সালের ১৩ই জুন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাক্রমের মূল টেকনোলজি এবং মূল টেকনোলজির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ইমার্জিং টেকনোলজিসমূহ পুনর্বিন্যাস করে ডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের ডিপিপিতে অনুমোদিত ২৯টি টেকনোলজি পুনর্বিন্যাস করে মোট ৯টি টেকনোলজি অন্তর্ভুক্তি পূর্বক ডিপিপি সংশোধন করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র মতে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ও বৈশ্বিক অর্থনীতি বিবেচনায় প্রকল্পটি থেকে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বাদ দিতে বলা হয়েছিল। তারা এটি বাদ দিয়েছে। এছাড়া, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এক্সপোজার ভিজিটও বাদ দিয়েছে তারা। শুধুমাত্র প্রকল্পের টেকনোলজি ভিত্তিক বিদ্যমান পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট-সমূহের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদারের জন্য ন্যূনতম চাহিদা ও প্রয়োজনের নিরীখে ব্যাচের সংখ্যা কিছুটা হ্রাস করেছে। এছাড়া প্রকল্প শুরু হওয়ার প্রায় পাঁচ বছর পরে নতুন করে কনসালটেন্ট (প্রকিউরমেন্ট স্পেশালিস্ট) নিয়োগ করেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা। যার কার্যকাল ধরা হয়েছে তিন বছর। এটি নিয়ে আপত্তি জানায় পরিকল্পনা কমিশন। তারা কনসালটেন্টের মেয়াদ তিন বছরের পরিবর্তে ৩০ মাস করার পরামর্শ দেয়। পাশাপাশি প্রকল্প কার্যক্রমের সার্বিক তদারকি ও কার্যক্রম ঠিক রাখতে একজন পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

সার্বিক বিষয়ে প্রকল্পটির পরিচালক সামসুর রহমান খান মানবজমিনকে বলেন, প্রকল্পটি পাস হওয়ার পর পরই কোভিড-১৯ শুরু হয়। এজন্য প্রায় ২ বছর প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। এতে করে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য তিন বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী অনেক আগেই এটা অ্যাপ্রুভ করেছেন। তিনি জানান, প্রকল্পের কার্যক্রম দেরি হওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো জমি অধিগ্রহণে ধীরগতি। আমরা যখন প্রকল্প প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করি তখন সংশ্লিষ্ট ডিসি অফিস থেকে কোথায় জমি পাওয়া যাবে, কত দামে পাওয়া যাবে এমন একটি প্রত্যয়নপত্র নিয়েছিলাম। কিন্তু প্রকল্প পাস হতে অনেক সময় চলে যায়। ফলে তখন আর নির্ধারিত সেই জমি পাওয়া যায় না। অন্য কোথাও বিক্রি হয়ে যায়। আমাদের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছে। এছাড়া সরকার তিন গুন দাম দিয়ে জমি ক্রয় করে। এতে বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এটাও একটা সমস্যার কারণ। তবে প্রকল্পের কাজ নতুন উদ্যমে শুরু হয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।

https://mzamin.com/news.php?news=48411