২৫ মার্চ ২০২৩, শনিবার, ১০:৪৭

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের গোশত নিয়ে ক্রেতাদের প্রশ্ন

রাজধানীর খামারবাড়ি মোড়ে একটি ফ্রিজিং ভ্যান গাড়িকে ঘিরে সকাল থেকে মানুষের জটলা। রমজানকে ঘিরে সরকার ডিম, দুধ, গোশত নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে বিক্রি করছে। আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা এসে নিয়ে যাচ্ছেন এসব নিত্যপণ্য। তবে গোশতের মান নিয়ে অনেকের মনে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। বাংলা ট্রিবিউন।

ফ্রিজিং গোশতের মান নিয়ে ক্রেতাদের অনেকের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। দুধ প্রতি লিটার মূল্য ছাড়ে পাওয়া গেলেও ডিমের দামে খুব একটা পার্থক্য দেখছেন না তারা। শুক্রবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, খামারবাড়ি মোড়ের ভ্যানে ১০০ কেজি গরুর গোশত, ৭ কেজি খাসির গোশত, ৭০ কেজি মুরগির গোশত, দুধ ১৭০ লিটার ও ২ হাজার ২০০টি ডিম আনা হয়েছে। ক্রেতাদের ভিড় সামলাচ্ছেন বিক্রেতারা। আগে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করে টোকেন হাতে নিয়ে তবেই বুঝে নিতে হচ্ছে ডিম, দুধ ও গোশত।
গরু, খাসি ও মুরগি আধা কেজি করেও কেনা যাচ্ছে। আধা কেজি গরুর গোশত ৩২০ টাকা, আধা কেজি খাসির গোশত ৪৭০ টাকা, আধা কেজি ড্রেসড (চামড়া ছাড়া) ব্রয়লার ১৭০ টাকা, ১ লিটার দুধ ৮০ টাকা ও এক ডজন ডিম ১২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

সরকারি তৃতীয় শ্রেণীর এক কর্মচারী ওমর ফারুক (৪৫) পরিবারের সাত সদস্যকে নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় প্রতি মাসেই হিসাব করে চলতে হয় তাকে। বাজার খরচ ছাড়াও মাসের শুরুতে বাসা ভাড়া গুনতে হয় ১৫ হাজার টাকা। তিন সন্তানের প্রতি মাসে স্কুল খরচ, বাবা-মায়ের চিকিৎসা- সব মিলিয়ে সংসারে টানাপড়েন লেগেই থাকে। এরই মধ্যে গেল কয়েক মাসে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়েনি এমন পণ্য খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাই সংসারের খরচ কমাতে ওমর চলে আসেন খামারবাড়ির সরকার ঘোষিত ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়িতে।

ওমর ফারুক বলেন, সরকারি চাকরি করি ঠিকই, অল্প বেতন পাই। পরিবারের সব খরচ এ অল্প টাকায় মেটানো হয়। বাসা ভাড়া দিয়ে হাতে আর কত টাকা থাকে। বাজারের যে অবস্থা, বর্তমানে খেয়ে বেঁচে থাকা আমাদের মতো মধ্যবিত্তের জন্য কঠিন। তাই বাজারের কিছু খরচ কমাতে এখানে আসা। এক কেজি গোশত ও এক ডজন ডিম নিয়েছি। রমজানে প্রতি সপ্তাহে এখানে একবার করে বাজার করতে আসব। আমরা চাই ২০টি স্থান ছাড়াও আর কিছু স্থানেও এভাবে বিক্রি করা হোক। আগারগাঁওয়ে হলে আমাদের জন্য ভালো হয়।

তিনি আরো বলেন, গরুর গোশত বাজারে ৭৫০ টাকা কেজি। এখানে ভ্যান থেকে নিয়েছি ৬৪০ টাকা দিয়ে। এখন গোশতটা ফ্রেশ হলেই হলো। আগে খেয়ে দেখি।

ওমর ফারুকের মতো আগারগাঁও থেকে আরো কয়েকজন সরকারি চাকরিজীবী মোশাররফ, কামরুল, রফিকসহ অনেকে এসেছেন খামারবাড়ির এই ভ্রাম্যমাণ বাজারে। তারাও ২০টি পয়েন্ট ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় এভাবে বিক্রি করার দাবি জানান।
রাজধানীর ইন্দিরা রোড থেকে ভ্রাম্যমাণ এই বাজারে এসেছেন ষাটোর্ধ্ব রওশনারা বেগম। একমাত্র ছেলে তানভীর একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। ছেলের বেতনের সিংহভাগই চলে যায় বাসা ভাড়ায়। পাঁচজনের সংসারের খরচ নিয়ে প্রতি মাসে চিন্তা করতে হয় তাকে। স্বামীহারা এই বৃদ্ধ প্রতিদিনই নিত্যপণ্য কিনতে বাজারে যান। নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে পাবেন জেনে এসেছেন খামারবাড়ি মোড়ে। ডিম, দুধ ও গোশত কিনে তিনি বলেন, বাজার থেকে কম দামে নিয়েছি। গোশতও নিয়েছি, ভালো হলে আবার আসবো এখানে।

খামারবাড়িতে বাজার করতে আসা রাজধানীর রাজাবাজার এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী তাপস সরকার একটু ভিন্ন সুরে বলেন, গোশতটা ছাড়া স্বাভাবিক বাজার থেকে খুব একটা পার্থক্য দেখছি না অন্য দুটির। দুধ, ডিম বাজার দরের কাছাকাছি। বাজারে যারা ব্যবসা করে, তাদের দোকান ভাড়া অনেক। তারা তো ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি নেবেই। ডিমটা বাজারেও ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় পাওয়া যায়। এ ছাড়া গোশতটা ফ্রেশ দেখে নেয়া যায়। তারা যে গোশতটা দিচ্ছে, এটি কখনকার, তা তো আমরা জানি না। এটি হয়তো ফ্রিজিং করা। এখানে এসে আমি কোনো লাভ দেখছি না। দ্রব্যমূল্যর এ ঊর্ধ্বগতির বাজারে কিছুটা স্বস্তিতে ভ্রাম্যমাণ এ বাজারে পণ্য নিতে এলেও গোশতের মান ও দর নিয়ে শঙ্কা থাকছে এসব ক্রেতার মাঝে। এ ছাড়া গোশত কেনার পর প্যাকেট থেকে খুলে যাচাই-বাছাই করতেও দেখা গেছে অনেককে।

খামারবাড়ি ভ্যানের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মোকাদ্দেস ইসলাম বলেন, সকাল ৯টা থেকে বসার কথা থাকলেও মাল লোড করতে দেরি হয়েছে। তাই সাড়ে ৯টায় বিক্রি শুরু করি। আগামীকাল থেকে নির্ধারিত সময়ে আমরা থাকব। যে পরিমাণ মালামাল রয়েছে, সেগুলো সব বিক্রি হলেই আমরা যাব।

এর আগে রমজান মাসে জনসাধারণের প্রাণিজ আমিষ ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে কম দামে দুধ, ডিম ও গোশত বিক্রি শুরু করছে সরকার। রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে দুধ, ডিম ও গোশত বিক্রির এই উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের এই কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। সেখানে বলা হয়েছে, রাজধানীর ২০টি স্থানে প্রথম রমজান থেকে ২৮ রমজান পর্যন্ত চলবে বিক্রির কার্যক্রম। প্রতি কেজি গরুর গোশত ৬৪০ টাকা, খাসি ৯৪০ টাকা, ড্রেসড ব্রয়লার মুরগি ৩৪০ টাকা, তরল দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা এবং ডিম প্রতিটি ১০ টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/736774