২৪ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার, ৫:৩১

দামের অস্বস্তি নিয়ে রোজা শুরু

রোজার শুরুতেই অস্থির হয়ে উঠেছে ভোগ্য পণ্যের বাজার। এ সময়ের বাড়তি চাহিদার প্রায় সব পণ্যের দামই এখন বেশ চড়া। পুরো মাস এই বেসামাল বাজার পরিস্থিতি কিভাবে সামলাবে, সে আশঙ্কায় অস্বস্তিতে ভোক্তারা।

আজ শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। দেড়-দুই মাস আগ থেকে অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। বিশেষ করে মুরগি, মাংস, ডিম, সবজি, চিনি এবং বিভিন্ন মসলার দাম চড়ে গেছে। বাজারের এই অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা উদ্যোগ ও তোড়জোড় থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোগ্যপণ্যের বাজারে প্রায় সব কিছুর দাম ছিল আকাশ ছোঁয়া।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, রমজানে বিশেষ চাহিদার পণ্যগুলোর মজুদে কোনো ঘাটতি না থাকলেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় উৎপাদন, আমদানি ও মজুদ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বাণিজ্যমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী বলেছিলেন, রমজানে যেসব পণ্যের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়, সেগুলোর মজুদ পরিস্থিতিতে কোনো সংকট নেই। সরবরাহ চেইনও স্বাভাবিক রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এর পরও বেশির ভাগ ভোগ্য পণ্যের দাম সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী ও গুলশান উত্তর ডিএনসিসি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইফতারির মুখরোচক খাবার বেগুনির উপাদান বেগুনের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শসার দামও দ্বিগুণ বেড়ে দেশি শসা ৯০ থেকে ১০০ টাকা এবং হাইব্রিড শসা ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শরবত তৈরির প্রধান উপকরণ লেবুর দামও বেড়ে রেকর্ড ছুঁয়েছে। বড় লেবু ১০০ টাকা, মাঝারি ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং ছোট লেবু ৫০ থেকে ৬০ টাকা হালি। গাজর ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, টমেটো ৬০ টাকা ও কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা।

গত সপ্তাহে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি ছোলা বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি। খোলা চিনি ১২০ টাকা কেজি। চিনির দাম কমাতে আমদানি শুল্ক কমালেও এর কোনো প্রভাব পড়েনি খুচরা বাজারে।

রোজা শুরু হওয়ার দুই মাস আগ থেকে বাড়তে থাকে বিভিন্ন মুরগির দাম। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে দাম বেড়ে তিন দিন ধরে ব্রয়লার মুরগি ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজি করে বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস কেজিতে ৫০ থেকে ৮০ টাকা বেড়ে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজার ঘুরে আরো দেখা গেছে, নতুন করে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দামও বেড়ে গেছে। পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং দেশি আদা কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। চীন থেকে আমদানি করা আদা ২৮০ টাকা কেজি। বড় আলুর দামও কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে এখন ২৫ টাকা।

এ ব্যাপারে কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ-রসুনের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দু-তিন দিন ধরে পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। খুচরা বাজারে মানভেদে পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি, যা আগে বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। দেশি রসুন প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকা, যা আগে ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা। দেশি আদা ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি, যা দু-তিন দিন আগে বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকায়। চীনা আদা ২৮০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ২৫০ টাকা।’

গতকাল কারওয়ান বাজারের খুচরা সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই। রাজধানীর অন্যান্য বাজারের তুলনায় এই বাজারের খুচরা পর্যায়ে সবজির দাম তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম দেখা গেছে। প্রতিটি সবজি অন্যান্য বাজারের তুলনায় কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কম।

কারওয়ান বাজারের খুচরা সবজি ব্যবসায়ী মো. আরিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রোজার কারণে আজ (গতকাল) বাজারে বেগুন, শসা ও গাজরের প্রচুর চাহিদা। এতে আগের দিনের তুলনায় কেজি ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দামে পাইকারিতে কিনতে হয়েছে। যার কারণে আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’ তবে কয়েক দিন পর দাম কমে যাবে বলে আভাস দেন তিনি।

গুলশান উত্তর ডিএনসিসি কাঁচাবাজারের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পাইকারি বাজার থেকে আজ (গতকাল) আমাদের বেগুন ও শসা প্রতি কেজিতে ২০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। এ জন্য ভালো মানের বেগুন প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি করছি। দেশি শসা ১০০ টাকা ও হাইব্রিড শসা ৮০ টাকায় বিক্রি করছি। বড় সাইজের লেবুর হালি বিক্রি করছি ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। মাঝারি সাইজের লেবুর হালি ৮০ টাকা।’

ডিএনসিসি কাঁচাবাজারে কথা হয় নাদিরা খাতুনের সঙ্গে। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। নাদিরা খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারে এসে দেখি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। তাঁদের কাছে দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে একেক ব্যবসায়ী একেক রকমের অজুহাত দেখান। আমার কাছে মনে হচ্ছে, রমজান মাসকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।’

তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে বেগুনের কেজি কিনেছি ৬০ টাকা দিয়ে, সেই বেগুন আজ (গতকাল) ১১০ টাকা। এক সপ্তাহেই দ্বিগুণ দাম! এমন থাকলে আমাদের কেনাকাটা করা খুব মুশকিল হয়ে যাবে।’
কারওয়ান বাজারের জননী মুরগির দোকানে গতকালের তারিখ দিয়ে টানানো মূল্যতালিকায় দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগির কেজি ২৬০ টাকা ও সোনালি মুরগির কেজি ৩৮০ টাকা।

এ ব্যাপারে ওই দোকানের ব্যবসায়ী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নতুন করে মুরগির দাম বাড়েনি। তিন দিন ধরে একই দামে বিক্রি করছি।’ সামনে মুরগির দাম কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি জানান।

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সামর্থ্যবানরা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি করে পণ্য কেনার কারণেই স্বল্প আয়ের মানুষ কষ্টে আছে। তাই সামর্থ্যবানরা যদি অনুগ্রহ করে পণ্য কম কেনেন, তাহলে চাহিদার চাপ কমে যাবে। বিক্রেতারা তখন পণ্যের দাম বেশি রাখার সুযোগ পাবে না।’

তিনি বলেন, সরকার এক কোটি মানুষের কাছে টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি করছে। রমজান উপলক্ষে সেটার পরিমাণ যদি আরো বাড়ানো যায়, তাহলে স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট কিছুটা কমবে বলেও তিনি মনে করেন।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/03/24/1264176