২৪ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার, ৫:১১

রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা

-ইবনে নূরুল হুদা

রূপসী নগরী ঢাকার রূপ-লাবণ্য আর আগের মত নেই বরং কালের বিবর্তনে এই মেগাসিটি অতীত ঐতিহ্য ও গৌরব হারাতে বসেছে। মূলত, বসবাস যোগ্যতায় ঢাকা মহানগরী বিশে^র একেবারে প্রান্তিক তালিকায় রয়েছে। এ জন্য প্রধানত অপরিকল্পিত নগরায়নকে দায়ি করা হয়। নগরায়নকে সর্বাধুনিক ও পরিকল্পিত করার জন্য ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ (রাজউক) নামের একটি প্রতিষ্ঠান থাকলেও এর পথচলা মোটেই পরিকল্পিত নয় বরং নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বৃত্তেই আটকা রয়েছে। ফলে পরিকল্পনাহীনভাবে চলছে তিলোত্তমা নগরী ঢাকার নগর ব্যবস্থাপনা।

নগরীতে ইমারত নির্মাণে প্রয়োজনীয় বিধিবিধান মানা হচ্ছে না। ক্ষেত্র বিশেষে ইমারত নির্মিত হচ্ছে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই। আবার অনেক ক্ষেত্রে ছোট পরিসরের বিল্ডিং নির্মাণের অনুমতি নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বৃহত পরিসরের প্রাসাদ নির্মাণ করা হচ্ছে। একই সাথে রাখা হচ্ছে না অত্যাবশ্যকীয় নিরাপত্তা সুবিধা; পর্যাপ্ত পয়োঃনিষ্কাষণ ব্যবস্থা। রাখা হচ্ছে না বহির্গমন সহ অগ্নি নির্বাপনের সর্বাধুনিক সরঞ্জাম সহ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা। ফল নিরাপত্তাহীনতা ও দুর্ঘটনা নগরজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে।

এছাড়াও ঢাকা নগরীতে রয়েছে অসংখ্য মেয়াদ উত্তীর্ণ ইমারত। এসব ইমারত অনেক আগেই ব্যবহার অযোগ্য ঘোষিত হলেও ব্যবহার করা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণভাবেই। অনেক ইমারত গণপূর্ত বিভাগ ব্যবহার অযোগ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পরও ব্যবহার করা হচ্ছে অবলীলায়। ফলে রাজধানীতে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন ভবনে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। কোনোটি ধসে পড়ছে, কোনোটিতে ঘটছে ভয়াবহ অগ্নিকা-, কোনোটি আবার হেলে পড়ছে। কোন দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হলেও পরবর্তীতে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় না। আসলে রাজধানীতে কত সংখ্যক ভবন ঝুঁকিপূর্ণ এর প্রকৃত হিসাব কারও কাছে নেই। তবে রাজউক বলছে, রাজধানীতে অন্তত ৯০ শতাংশ ভবন তৈরির ক্ষেত্রে নকশার ব্যত্যয় ঘটানো হচ্ছে। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুসরণ করা হচ্ছে না। এসব ভবন কোনো না কোনোভাবে ঝুঁকির মধ্যেই থাকছে। কিন্তু তারা এই অভিযোগ করেই নিজেদের দায়সারার চেষ্টা করছে। বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব যে তাদেরই সেকথা বেমালুম ভুলে বসছেন। ফলে ইমারত নির্মাণে অনিয়মই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

রাজধানী ঢাকার ব্যবহার অযোগ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সঠিক পরিসংখ্যান জানা যায় না। কারণ, এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের তেমন কোন নজরদারি নেই। তবে ২০১৮ সালে তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন রাজধানীতে ৩২১ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ বলে জাতীয় সংসদকে অবহিত করেছিলেন। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজউক জানিয়েছিল, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ১৫৫। ২০১৬ সালের ১৭ মে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানায়, নগরীতে ১১০ ভবন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এর আগে ২০০৯ সালে এক জরিপের বরাত দিয়ে রাজউক জানিয়েছিল, রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন প্রায় ৭২ হাজার।

সর্বশেষ বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা শহরে সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল-পুলিশ স্টেশনের ভবনগুলোর ওপর জরিপ চালানো হয়। এতে ৩ হাজার ২৫২ ভবনের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট করা হয়। এর মধ্যে ১৮৭ ভবন পাওয়া যায়, যেগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও রেট্রোফিটিংয়ের মাধ্যমে নিরাপদ করা সম্ভব। আর ৪২টি ভবন এতই ঝুঁকিপূর্ণ যে সেগুলোকে অপসারণ করার কথা বলা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে পরবর্তীতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি।

আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘ঢাকা শহরের সব ভবনেরই ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট করা দরকার। এটি করতে অনেক সময় ও অর্থের প্রয়োজন। আমরা কাজটা শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে সব ভবনেরই মূল্যায়ন করা হবে। তখন জানা যাবে প্রকৃত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন কত’। রাজউক কতৃপক্ষ বলছে, রাজউকের অ্যাসেসমেন্টে চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এগুলো যেহেতু সবই সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণাধীন, কাজেই তারা ব্যবস্থা নেবে বলে রাজউক মনে করে। ঢাকা শহরে ২১ লাখ স্থাপনা আছে। এর মধ্যে ৫ লাখ দালান। এগুলো তদারকি করার মতো জনবলের ঘাটতি রয়েছে। রাজউকের পক্ষে রাতারাতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করে ফেলা সম্ভব নয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নকশার বাইরে অনেক ভবনে অতিরিক্ত তলা বাড়ানো হয়েছে। তলা বাড়ালে কলামের ওপর লোড বেড়ে যায়। অনেকে ভবনের চারপাশ বাড়িয়ে নেয়। এমনকি ফায়ার এপিট সিঁড়ি নকশা অনুযায়ী না করে সরু করে ফেলে। অনেক ক্ষেত্রে সেই সিঁড়ির দরজা সব সময় বন্ধ করে রাখে। অনেকে ভবনে অগ্নিনির্বাপক সামগ্রী রাখে না। এ রকম অনেক কারণেই ভবনগুলো ঝুঁকিতে পড়ে। কিন্তু এসব কথা রাজউকের কথামালার ফুলঝুড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। সমস্যা সমাধানে প্রতিষ্ঠানটির উল্লেখযোগ্য কোন তৎপরতা নেই।

পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, বিভিন্ন কারণেই ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। হয়তো একটি ফ্ল্যাট নকশায় দেড় হাজার বর্গফুট হওয়ার কথা। সেখানে ১০০ বর্গফুট বাড়ানো হলে সেটাও এক ধরনের ঝুঁকি তৈরি করে। পয়েন্ট অব ভিউ থেকে হয়তো সেই ঝুঁকিটা কম। তবে এগুলোর সংশোধন করে নেওয়া দরকার। এ জন্য রাজউকের আঞ্চলিক কার্যালয় আছে। সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড আছে। এভাবে ভাগ করে প্রতিটি ভবন পরিদর্শন করা দরকার।

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনের (রিহ্যাব) জানাচ্ছে, ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনের চেয়ে রিহ্যাব সদস্যদের তৈরি করা ভবন অনেক মানসম্মত। এফআর টাওয়ারে অগ্নিকা- ছাড়া রিহ্যাবের কোনো ভবনে কখনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। তবে মার্কেটগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। গাউছিয়া মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, নিউ মার্কেট, মৌচাক মার্কেট এমনকি গুলশানের পিংক সিটি মার্কেটে গেলে দেখবেন ওপেন স্পেসে দোকান বসিয়েছে। কোথাও আবার ফুডকোর্ট বানানো হয়েছে। যেখানে রান্না হয়, সেখানেই গ্যাস ও আগুন থাকে। তাহলে তো ঝুঁকিও থাকে। রাজউকের তদারকির অভাবে এসব ঘটছে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ৪১ ভবন আর মার্কেটে ঝুঁকি নিয়ে চলছে বসবাস আর ব্যবসা-বাণিজ্য। দৃশ্যমান স্থানে টানানো লাল সাইনবোর্ডের নোটিশে ভবনের বাসিন্দা ও বসবাসরতদের সরে যেতে বলা হলেও কেউ কানে তুলছে না। বরং সিটি করপোরেশন প্রতিমাসে ভাড়াও আদায় করছে। এসব ভবন দিনে দিনে আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বলছে, ‘এসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সবাইকে নোটিশ ও মাইকিং করা হয়েছে, যাতে তারা ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থেকে সরে যায়। এর মধ্যে কিছু ভবন নিলামের প্রক্রিয়া চলছে, নিলাম শেষে ভেঙে ফেলা হবে। নোটিশ দেওয়ার পরও যেহেতু তারা বসবাস ও ব্যবসা পরিচালনা করছেন তাই তাদের রাজস্ব দিতে হবে। সচেতন মানুষ যদি জেনেশুনে বিপদে পড়তে চায় তাহলে তার দায়িত্ব বসবাসকারীদের ওপরই বর্তায়। কারণ, তাদের এসব ভবন ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে।’

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বলছে, ‘আমরা পর্যায়ক্রমে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার চেষ্টা করছি। কিছু মার্কেটে মামলা থাকায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।’ জানা যায়, ২০২০ সালে ডিএসসিসির ৯টি মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। আর ডিএসসিসির ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসংক্রান্ত আঞ্চলিক কমিটি ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে। এ কমিটি ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ৪৬টি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট, ভবন আর স্টাফ কোয়ার্টারের ভবন চিহ্নিত করে। এর মধ্যে ডিএসসিসি আটটি ভবন ও ব্যক্তি মালিকানাধীন দু’টি ভবন ভেঙে অপসারণ আর একটি ভবন সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী করা হয়। ১২টি ভবন মালিককে বুয়েট ও আইইবি রেজিস্টার্ড প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট করে প্রতিবেদন তৈরি করে সিটি করপোরেশনের কাছে জমা দেওয়ার জন্য বলা হলেও এখন পর্যন্ত শুধু মতিঝিলের মডার্ন ম্যানশন আর চকবাজারের ৬৪ হোল্ডিং নম্বর ভবন, নন্দ কুমার রোডের ওয়াহেদ ম্যানশন প্রতিবেদন দেয়। আর গজমহল শিশু পার্কসংলগ্ন দ্বিতল ভবন, ঝিগাতলার ২১/৩, ফেদায়ে মওলার ভবন, রায়েরবাজারের সুলতানগঞ্জের ১৫৯ মমতাজ মিয়ার বাড়ি, ১৫৯/২ মন্টু মন্ডলের ভবন, মুক্তি সিনেমা হলের পেছনের ১৫৬/১ হাজী হামিদুর রহমানের ভবন, কালু নগরের ২৪/৩ মো. রতন শেখের ভবন, লালবাগ রোডের খান মোহাম্মদ মসজিদসংলগ্ন ৩০৪ হোল্ডিং নং ভবন, চকবাজার নাজিম উদ্দিন রোডের ৯৯/১ মো. মফিজ উদ্দিনের ভবন, ৯৯ হোল্ডিং মো. সায়েম খানের ভবন ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট করে প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এছাড়া ২৩টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের দৃশ্যমান স্থানে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসংবলিত লাল সাইনবোর্ড’ স্থাপন করে জানমাল রক্ষায় ভেঙে অপসারণের জন্য ভবন মালিকসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

গত বছরের ২১ এপ্রিল সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার, ১৪ নম্বর আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার, ১৪ নম্বর আউটফল সুইপার বস্তির ভেতর, দয়াগঞ্জ কানপুর ক্লিনার কলোনি এবং দয়াগঞ্জ ট্রাক স্ট্যান্ড রোডসাইড মার্কেটের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় বসবাসকারীদের ভবন খালি করতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এ গণবিজ্ঞপ্তির বিষয়ে বসবাসকারীদের অনেকেই জানেন না। পাকিস্তান আমলের এসব ভবন বেশ নাজুক। বছরখানেক আগে ১০ নম্বর আউটফল স্টাফ কোয়ার্টারের কয়েকটি ভবনের ছাদ সংস্কারের সময় নতুন করে রড দিয়ে ঢালাই করা হয়। দয়াগঞ্জের কানপুর ক্লিনার কলোনি আর ট্রাকস্ট্যান্ড রোডসাইড মার্কেটটি মেয়র সাঈদ খোকন তার আমলে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত দেন।

৭৩০টি দোকান থাকা নওয়াব ইউসুফ মার্কেটের নিচতলায় হার্ডওয়্যার, পলিথিন, লোহালক্কড়ের দোকান, দ্বিতীয় তলায় ব্যাগ, কার্টনের কারখানা, গার্মেন্টস আর মাঝখানে কাঁচাবাজার। সরেজমিনে দেখা যায়, দোতলা এ মার্কেটের ছাদের পলেস্তারা খসে রড বের হয়ে আছে, রেলিং ধসে পড়েছে। ব্যবহার অনুপযোগী কয়েকটি দোকানে গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করছেন ব্যবসায়ীরা। ঝুঁকিপূর্ণ এ মার্কেটটিতে কোথাও লাল সাইনবোর্ড দেখা যায়নি। বরং ছয় ভবনের মাঝখানের কাঁচাবাজারটি ইজারা দিতে গত ১২ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ডিএসসিসি। আজিমপুর এতিমখানা মার্কেট, আজিমপুর কবরস্থান মার্কেট, ঠাটারিবাজার মার্কেট, খিলগাঁও রেলওয়ে কাঁচাবাজার মার্কেট, বংশাল কমিউনিটি সেন্টার, রোকনপুর কমিউনিটি সেন্টার আর ভূতের গলি কমিউনিটি সেন্টারটি ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় আছে। এসব কমিউনিটি সেন্টারে নিয়মিত বিয়ে, জন্মদিনসহ নানা অনুষ্ঠানও চলছে।

২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ৯টি মার্কেট ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ঝুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে দেয় ডিএনসিসি। মার্কেটগুলো হলো মোহাম্মদপুর টাউন হল পাকা মার্কেট, মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজার, গুলশান উত্তর কাঁচা মার্কেট, গুলশান দক্ষিণ পাকা মার্কেট, রায়েরবাজার মার্কেট, কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেট, কারওয়ান বাজার ১ নং ভবন মার্কেট, কারওয়ান বাজার ২ নং ভবন মার্কেট ও কারওয়ান বাজার কাঁচামালের আড়ত মার্কেট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্কেটের ছাদের পলেস্তারা খসে রড বের হয়ে আছে। জায়গায় জায়গায় লোহার পাইপ দিয়ে ছাদ ঠেকা দিয়ে রাখা হয়েছে।

মূলত, কর্তৃপক্ষের নানাবিধ অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও দায়িত্ব পালনে উদাসীনতার কারণে ঢাকা নগরীর বসবাসযোগ্যতা একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে নেমে এসেছে। ঢাকা এখন বিশে^র শীর্ষস্থানীয় বায়ুদূষণের নগরী। আর নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা নগর জীবনকে আরো বড় ধরনের অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে নগর জীবনকে। ফলে নিয়মিত বিরতিতে অগ্নিদুর্ঘটনা সহ নানাবিধ দুর্ঘটনা এখন নগরবাসীদের নিত্যসঙ্গী। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারো কোন মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না।

এমতাবস্থায় নগরজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ করতে রাজউক সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। একই সাথে আগামীতে যাতে কেউ বিধি লঙ্ঘন করে কেউ ইমারত নির্মাণ করতে না পারে সে জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যথায় তিলোত্তমা নগরী বসবাসযোগ্যতার আগামী দিনে আরো অবনতি হবে! নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে নগর জীবন।

 

 

https://dailysangram.com/post/520131