২৩ মার্চ ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১২:৪১

ক্রেতার কপালে চিন্তার ভাঁজ এবার খেজুরের বাজারেও সিন্ডিকেট

খেজুর দিয়ে ইফতারি করা সুন্নত। তাই রমযান এলেই মুসলিম বিশ্বে খেজুরের কদর বাড়ে। এবার খেজুরের বাজারেও সিন্ডিকেট করা হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর রমযানে খেজুরের দাম পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায় পর্যন্ত বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। এমন পরিস্থিতিতে রোজাদারের কপালে চিন্তার ভাঁজ। আগে যেসব ক্রেতা পাঁচ কেজি খেজুর কিনতেন তারা এখন কিনছেন ১ থেকে ২ কেজি।

জানা গেছে, বাজারে যে হারে নিত্য পণ্যের দাম বেড়েছে এখন নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য খেজুরসহ অন্যান্য ফল খাওয়া বিলাসিতা। নি¤œ ও মধ্য আয়ের মানুষরা কোনভাবেই ফল দিয়ে ইফতার করার করা চিন্তাও করতে পারে না। এতে করে আসছে রোজায় ইফতার নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় নি¤œ আয়ের মানুষ।

তবে আমদানিকারকরা বলছেন, খেজুরের দাম বাড়েনি। তিন-চার বছর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে খেজুরের দাম যা ছিলো এখন আবারও সে অবস্থায় ফিরেছে। মাঝের বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে সৌদিতে হাজীদের যাওয়া সীমিত থাকায় মধ্যপ্রাচ্যে খেজুরের চাহিদা কম ছিলো। যার কারণে দাম পড়ে গিয়েছিলো। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় খেজুরের আন্তর্জাতিক বাজার দর আগের অবস্থানে ফিরেছে।

দেশের বাজারে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন। আগে ১ ডলার বাণিজ্যিক ঋণপত্রের (এলসি) বিপরীতে টাকার বিনিময় মূল্য ছিলো ৮৫ থেকে ৮৬ টাকা। এখন সেখানে আমদানিকারকদের পরিশোধ করতে হচ্ছে ১০৮ থেকে ১০৯ টাকা পর্যন্ত। এখানেই খেজুরের বেড়ে গেছে শতকরা ১৮ থেকে ২০ শতাংশ। আবার আমদানি পণ্যের ওপর সরকারি ডিউটি-ট্যাক্সও ডলার রেট বেড়ে যাওয়ার কারণে বেড়ে গেছে। যেখানে আগে একটা ক্যারেটের জন্য খরচ হতে ৩০০ টাকা এখন সেটা ৫০০ টাকা।

আমদানিকারকরা বলছেন, সব মিলিয়ে আমদানি ব্যয় বেড়েছে শতকরা ২২ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। এ কারণেই আন্তর্জাতিক বাজারে খেজুরের দাম কয়েক বছর আগের দাম থাকলেও দেশের বাজার বাড়তি।

এ প্রসঙ্গে রাজধানীর সবচেয়ে বড় আমদানি ফলের পাইকারী বাজার বাদামতলীর ফল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স এ. মজিদ এন্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী এমডি. ইউসুফ খান বলেন, ফলের বাজার বর্তমানে অস্থিতিশীল। অনেক ব্যাংক এলসি খুলছে না, যার কারণে আমরা অনেক ভোগান্তিতে পড়েছি। ব্যাংক থেকে ব্যাংকে দৌড়েও আমরা সময় মতো এলসি করতে পারিনি। তারপর সরকার যখন রমযানের বাজার সহনশীল করার জন্য এলসির অনুমতি দিলো তখন আমরা ব্যাংকে গিয়ে যেখানে দশটা এলসি করতে পারতাম, সেখানে একটা এলসি করতে পেরেছি।

ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় মূল্য বেড়ে যাওয়াও মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ডলার রেট নিয়মিত উঠানামা করার কারণে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। দেখা যাচ্ছে খেজুর আমদানি করতে ২ হাজার ৭০০ থেকে ৮০০ ডলারে কন্টেইনার বুক করা যেত, এখন সেখানে ৪ হাজার ৭০০ থেকে ৫ হাজার ২০০ ডলার পর্যন্ত পড়ছে। এর ফলে সরকারের ডিউটি-ট্যাক্স সব কিছুই বেড়েছে।

খেজুরের দাম বাড়াতে আমদানিকারকদের তেমন একটা কিছু করার নেই বলে দাবি ইউসুফ খান বলেন, আমরা হয়তো আগে ১০ শতাংশ লাভ ধরে বিক্রি করতাম এখন আর সেটা সম্ভব হচ্ছে না ২০ থেকে ৫০টাকা লাভে ৫ কেজির প্যাকেট গুলো ছেড়ে দিচ্ছি। আমরা হয়তো লাভ কম করছি কিন্তু বাড়তির চাপটা ভোক্তাকেই বহন করতে হবে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে রমযানকে সামনে রেখে পরিবারের জন্য খেজুর কিনতে এসেছেন একটি বেসরকরি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আরিফ চৌধুরী। রমযানের বাজারে খেজুরের দাম কেমন দেখছেন?

এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, তিন-চার মাস আগে যে খেজুরটার দাম ছিলো ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এখন সেটা হাঁকা হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৩০০টাকা কেজি। এমন যদি হয় তাহলে খেজুর কিনবো কী করে। এবার রোজায় হয় খেজুর খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে, না হলে যেখানে পাঁচ কেজি খেজুর লাগতো এখন সেখানে এক-দুই কেজি দিয়ে কাজ চালাতে হবে।

দাম একটু কম পাওয়ার আশায় খেজুরের ৫ কেজির কার্টুন কিনতে কারওয়ান বাজারে এসেছেন আজাদ বিশ্বাস। কিন্তু দাম শুনে হতাশ হতে হয়েছে তাকেও। তিউনিশিয়ান ফিট খেজুর আগে ১০০০-১২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেলেও এখন সেটা ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি হলে খেজুর কিনবেন কিভাবে, সে প্রশ্নে খুঁজছেন তিনি। তিনি বলেন, সরকার অন্তত রোজার এ সময়টাতে বাজারটা ঠিকঠাক মতো মনিটরিং করতো তাহলে অন্তত খেজুরের দাম এমন পর্যায়ে পৌঁছাতো না।
ভোক্তা পর্যায় থেকে দাবি করা হচ্ছে, কোন কোন ক্ষেত্রে খেজুরের দাম গত বছর এমনকি ৬ মাস আগের বাজার থেকেও ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি দাবি করা হচ্ছে বিক্রেতাদের পক্ষ থেকে। এমন পরিস্থিতিতে আশা তাদের, রমযান মাস শুরু হলে কিছুটা কমবে খেজুরের দাম।

দেশের ফলের বাজারে নিয়ন্ত্রণ করে গুটি কয়েক আমদানিকারক। খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ তারাই সিন্ডিকেট করে দেশে বিদেশি ফলের বাজারে ইচ্ছেমতো দামে তাদের পণ্য দর নির্ধারণ করে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঢাকা মহানগর ফল আমদানি ও রপ্তানিকারক আড়তদার ও ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল করিম।

তিনি বলেন, আমার হিসাবে ৩০ শতাংশ দাম বাড়ছে। করোনার কারণে হাজীরা সৌদি আরবে না যাওয়ায় গতবছর দাম কম ছিল। এখন সে পরিস্থিতি নেই। ডলারের দাম বেড়েছে। কন্টেইনারেই আমাদের বেশি পড়ছে দেড় থেকে দু’হাজার ডলার। এ পরিস্থিতিতে আমদানিকারকদের শুধু শুধু দোষ দিয়ে লাভ নেই।

https://dailysangram.com/post/520083