ইবির ছাত্রলীগ নেতা সজিবের অস্ত্র নিয়ে প্রশিক্ষণে শিক্ষক মতিয়ার রহমান -যুগান্তর
২০ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:১৮

ইবির সেই অস্ত্রধারীই এখন ঢাবির সহকারী অধ্যাপক

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে সংবাদের শিরোনাম হওয়া সেই শিক্ষককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রভাষক পদ থেকে সম্প্রতি তাকে পদোন্নতি দিয়ে সহকারী অধ্যাপক করা হয়েছে। বিষয়টি নজরে আনলে এ নিয়ে ক্যাম্পাসে সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একজন সমালোচিত ও বিতর্কিত ব্যক্তিকে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।


অস্ত্রধারী ওই ব্যক্তি হলেন মো. মতিয়ার রহমান। তিনি একসময় ইবির পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। পরে নিয়োগ পান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। জগন্নাথের প্রভাষক থাকাবস্থায় তিনি সাবেক কর্মস্থল ইবিতে গিয়ে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই মতিয়ার ঢাবিতে প্রভাষক পদে নিয়োগ পান। সম্প্রতি তাকে পদোন্নতি দিয়ে সহকারী অধ্যাপক করা হয়েছে বলে যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শেখ জামিরুল ইসলাম।

২০১৪ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) সংলগ্ন নির্জন স্থান মফিজ লেকে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেন মতিয়ার রহমান এবং ইবির গণিত বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও বর্তমান বিসিএস ক্যাডার (অর্থনীতি) আজিজুল হক মামুন। এ দু’জনের মধ্যে মামুন ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি। মতিয়ার ছিলেন মামুনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা একই সঙ্গে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছিলেন। তাদের প্রশিক্ষণ দেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজিবুল ইসলাম সজিব। ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ‘ছাত্রলীগ নেতার কাছে অস্ত্র চালানো শিখছেন শিক্ষক’ শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে একটি সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়। যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশের পর এ নিয়ে দেশব্যাপী বিশেষ করে শিক্ষাঙ্গনগুলোতে তোলপাড় শুরু হয়। পরদিন ইবির প্রক্টর ড. মাহবুবর রহমানকে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়া অস্ত্রের প্রশিক্ষক ছাত্রলীগ নেতা সজিবুল ইসলাম সজিবকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। দুই শিক্ষকের বিচারের দাবি উঠেছিল বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে। পরে বিষয়টি আড়ালে চলে যায়।

যা ছিল যুগান্তরের সেই প্রতিবেদনে : যুগান্তরের কাছে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ গ্রহণের ৪টি ছবি এসেছিল। প্রকাশিত সেই সংবাদের সঙ্গে একটি ছবি ছাপা হয়। যেখানে দেখা যায়, শিক্ষক মতিয়ার রহমান গুলি করছেন। হাসিমুখে সেটি পর্যবেক্ষণ করছেন কালো রঙের প্যান্ট ও হালকা সবুজের স্ট্রাইপ শার্ট পরা সজিব। পাশে হাস্যোজ্জ্বল সজিবের সহযোগী ইবির আইন বিভাগের ছাত্র সালাহ উদ্দিন। সে খয়েরি রঙের টি-শার্ট, লাল ক্যাপ পরা ছিল। অপর ছবিতে দেখা যায়, নানা আঙ্গিকে গুলি ছুড়ছেন মতিয়ারের সহকর্মী আজিজুল হক মামুন। একটিতে গুলি ছোড়ার পর পিস্তলের নল দিয়ে ধোঁয়া বের হতেও দেখা গেছে। সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট আর সোয়েটার পরা ছিলেন তিনি।

বিতর্কিত ব্যক্তিকে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ায় ঢাবিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সমালোচিত ব্যক্তিকে শিক্ষক নিয়োগ এবং পদোন্নতির বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবির পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এমএ জলিল যুগান্তরকে বলেন, ‘সে (মতিয়ার) নিয়োগ পেয়েছে ৯-১০ মাস হতে যাচ্ছে। এতদিন কিছুই জানতে পারিনি। আর আসলে এটা আমার ব্যাপার না। প্রশাসন আছে তারা নিয়োগ দেয়। আমরা ডিপার্টমেন্টে চাকরি করি মাত্র।’ তিনি জানান, বিভাগের বাছাই কমিটি থেকে যখন মতিয়ারের নাম যায় তখন তিনি বিষয়টি জানতে পারেননি। জানার পরে কী ব্যবস্থা নেবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক এমএ জলিল বলেন, ‘এটা আগে থেকে কিছুই বলতে পারব না। কারণ আমি কিছুই জানি না। আর জানলেও আমার কিছু করার আছে কিনা, সেটি নিয়েও আমি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছি না।’

বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আজিজ এ বিষয়ে বলেন, ‘এটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে। এ ধরনের জটিল প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারব না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী ক্ষমতা উপাচার্য মহোদয়ের। তিনিই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। আপনি উপাচার্য মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলুন।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’

http://www.jugantor.com/last-page/2017/04/20/118713/