১৯ মার্চ ২০২৩, রবিবার, ১১:৪৯

সিপিডিএস’র সেমিনারে অভিমত

সংবিধানের ওপর আস্থার জন্য দরকার সুষ্ঠু নির্বাচন

সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (সিপিডিএস) আয়োজিত এক সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, সংবিধানের ওপর আস্থার জন্য দরকার সুষ্ঠু নির্বাচন। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, এ দেশের জনগণের ভোটাধিকার মানা হয়নি দেখে পাকিস্তান ভেঙে এই দেশ গঠন করা হয়েছে। ’৭২-এর সংবিধানের প্রকৃত আকাক্সক্ষা হচ্ছে প্রকৃত জনপ্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা থাকবে। অবাধ নির্বাচন হবে। দেশের কল্যাণের জন্য সাচ্চা জনপ্রতিনিধিরা দেশ শাসন করবে। কোনো দুর্নীতিবাজকে প্রশ্রয় দেয়ার জন্য, বৈষম্য করার জন্য, ব্যাংকের টাকা লুটপাট করা বা সম্পদ পাচার করার জন্য অথবা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য এ দেশ স্বাধীন হয়নি।

গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সিপিডিএস-এর উদ্যোগে ‘সংবিধানে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা’ শীর্ষক সেমিনারে অধ্যাপক আসিফ নজরুল মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডিএসের সভাপতি ও সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার আর সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির নির্বাহী সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত সাকিব আলী, সাবেক বিচারক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ইতকতিদার আহমেদ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম। অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি বাছাই এবং দুর্নীতির প্রতিকারের মাধ্যমে সংবিধানের ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। সংবিধানের মূল নীতিগুলোর পরিপন্থী সব কাজ পরিহার করাই হবে সত্যিকারের এই দলিলের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন।

অধ্যাপক আসিফ বলেন, আমাদের বুঝতে হবে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র হয় না, অপরাধীদের বিচারের আওতায় না আনা এবং দুর্নীতির বিস্তার সমাজতন্ত্রের মূল নীতির সাথে যায় না। একইভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার আচরণ সব ধর্মগোষ্ঠীর সাথে একই রকম হওয়া উচিত।

ঢাকায় পুলিশ হত্যার আসামি রবিউল ইসলাম দুবাইয়ে আরাভ খান নামে সোনার বড় ব্যবসায়ী বনে যাবার আলোচিত ঘটনা প্রসঙ্গে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, এই ঘটনায় পুলিশের সাবেক একজন বড় কর্মকর্তার নাম শোনা যাচ্ছে। কিন্তু ভয়ে সেই নাম তারা মুখে আনতে পারছেন না। এতেই বোঝা যায় দেশে বাকস্বাধীনতার কী অবস্থা।

আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘দেশে দিনের পর দিন ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়ছে। আর দিনমজুরের ছেলে সোনা দিয়ে লোগো বানায়। তাও মাত্র চার-পাঁচ বছরে। কী পরিমাণ টাকা লুটপাট। এটা কি তার টাকা?

ড. আসিফ বলেন, ‘আমরা কি এরশাদ সরকারের সময় স্লোগান দিইনি যে এরশাদের চামড়া তুলে নেবো আমরা? খালেদা জিয়ার আমলে স্লোগান হয় নাই যে খালেদা জিয়ার চামড়া তুলে নেবো আমরা? এখন প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, পুলিশ কমিশনারের চামড়া তুলে নেবো আমরা বলে দেখেন না, কী অবস্থা হয়।’

সেমিনারে আলোচনায় সাবেক রাষ্ট্রদূত সাকিব আলী বলেন, দেশের জনগণ যেন ক্ষমতায়িত না হয়, সেই প্রবণতা আমাদের শাসনব্যবস্থায় সব সময় রয়েছে।

আইনজ্ঞ ইকতেদার আহমেদ বলেন, এ দেশে শাসকরা সব সময় সংবিধানকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। সংবিধানে প্রত্যক্ষ ভোটের কথা বলা হয়েছে। আমাদের দশম সংসদ নির্বাচনে সবাই কি প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন?
অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, আমাদের দেশে কাগজের লেখা আর বাস্তবতার মধ্যে অনেক ফারাক আছে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য জনগণকে আন্দোলনের সাথে আরো সম্পৃক্ত করতে হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/735314