১৮ মার্চ ২০২৩, শনিবার, ৬:০৯

কার গুদামে কত পণ্য

রমজান সামনে রেখে প্রচুর পণ্য আমদানির পরও নিয়ন্ত্রণে নেই বাজার। ছোলা ছাড়া প্রায় সব পণ্যই দু’মাস ধরে বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। তেল, চিনি, খেজুর ও ডাল আমদানি মূল্যের চেয়ে বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। শতাধিক ব্যবসায়ী এসব পণ্য আমদানি করলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মাত্র ৪০ ব্যাবসায়ীর গুদামেই আছে সর্বোচ্চ পণ্য। পাইকারি মোকাম চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে এখন যে পণ্য বিক্রি হচ্ছে, তা আমদানিকারকদের কাছ থেকে হাতবদল হয়ে এসেছে। এখান থেকে রমজানের পণ্য যাচ্ছে সারাদেশে। যেসব ব্যবসায়ীর কাছে সর্বোচ্চ পণ্যের মজুত আছে তাঁরা ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনার বাসিন্দা। আমদানি করা পণ্যের ৭০ শতাংশই মজুত আছে এসব প্রতিষ্ঠানের গুদামে।

এদিকে রমজানে পর্যাপ্ত পণ্য আমদানির পরও যারা দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে, তাদের শক্ত হাতে দমন করতে দেশের সব জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে পণ্য মজুত করে কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে কিনা, সে বিষয়টিও তাদের নজরদারিতে আনতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এবার চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রমজানের পণ্য এসেছে ছয় মাস আগে থেকে। সর্বশেষ ছয় মাসের আমদানি চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রোজায় গড়ে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টন ছোলার চাহিদা আছে। ছয় মাসে ছোলা এসেছে চাহিদার চেয়ে বেশি। এ কারণে ছোলার দাম কিছুটা সহনীয় রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে শতাধিক ব্যবসায়ী ছোলা আনলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে মাত্র ছয়টি প্রতিষ্ঠান। এরা ২ হাজার ৩০০ টন থেকে সর্বোচ্চ ২৩ হাজার ৩০০ টন ছোলা এককভাবে আমদানি করেছে। এদের কাছে আমদানি করা ছোলার প্রায় অর্ধেক রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে– রবি ফুড প্রডাক্টস লিমিটেড, টোয়ো ফিড লিমিটেড, একে করপোরেশন, হোসেন অটোম্যাটিক ডাল মিল, মাসুদ ট্রেডিং কোম্পানি ও লাভলী স্টোর।

মটর ডাল আমদানি করা অর্ধশত ব্যবসায়ী থাকলেও বাজারের নিয়ন্ত্রণ সাত ব্যবসায়ীর হাতে। রবি ফুড প্রডাক্টস এককভাবে এবার সর্বোচ্চ মটর ডাল আমদানি করেছে। এ তালিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে মেসার্স শেখ ব্রাদার্স ও বসুন্ধরা ট্রেডিং কোম্পানি। এ ছাড়া কমোডেটিস ট্রেডিং কোম্পানি, মাসুদ ট্রেডিং কোম্পানি, মেসার্স আর এস ট্রেডিং, অর্পিতা ট্রেডার্স পর্যাপ্ত ছোলা আমদানি করেছে। মসুর ডাল আমদানি করা ৮০ প্রতিষ্ঠান থাকলেও সর্বোচ্চ পণ্য আমদানি করেছে আটটি। বাজার নিয়ন্ত্রণ করা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে– রবি ফুড প্রডাক্টস, মেসার্স এন আর ট্রেডিং, মেসার্স শেখ ব্রাদার্স, মেসার্স চিটাগং ফিশ প্রডাক্টস, লাভলী স্টোর, চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ, লাকী ট্রেডিং ও এক্সপোর্ট ট্রেডিং বিডি।

এবার খেজুরও এসেছে চাহিদার চেয়ে বেশি। শুকনো ও ভেজা খেজুর আমদানিকারক শতাধিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে সাত প্রতিষ্ঠান। সর্বোচ্চ খেজুর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে– অ্যারাবিয়ান ডেটস ফ্যাক্টরি, রয়েল ফ্রেশ ফুডস, সাপোয়ানা ফুড ট্রেডিং করপোরেশন, মদিনা ফুডস লিমিটেড, রামিসা বিডি লিমিটেড, এডি ফ্রুটস লিমিটেড ও আল্লাহর রহমত স্টোর।

আমদানি করা চিনির ৯০ শতাংশ মজুত আছে সিটি, আবদুল মোনেম, দেশবন্ধু, এস আলম ও মেঘনা গ্রুপের কাছে। ক্রুড অয়েল আমদানি করা শীর্ষ সাত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে– দীপা ফুড প্রডাক্ট, মেঘনা এডিবয়েল, শবনম ভেজিটেবল অয়েল, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল, বাংলাদেশ এডিবয়েল, সুপার অয়েল রিফাইনারি, মোস্তফা অয়েল প্রডাক্ট। ছয়টি শিল্প গ্রুপের প্রতিষ্ঠান দেশে আসা ক্রুড অয়েলের ৯০ শতাংশই আমদানি করেছে।

চিটাগং চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘যে পরিমাণ পণ্য এসেছে, তাতে বাজার স্থিতিশীল থাকার কথা। অসাধু ব্যবসায়ীর সংখ্যা হাতেগোনা। তারা যাতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে প্রশাসনকে। ’
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘ডলারসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা থাকলেও রমজান ঘিরে এবারও পর্যাপ্ত পণ্য আমদানি হয়েছে। পণ্য মজুত রেখে কেউ যাতে একচ্ছত্র ব্যবসা করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। এরই মধ্যে ব্যবসায়ীদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করা হয়েছে। বাজার তদারক করতে গঠন করা হয়েছে ৪০টি তদারক দল।’
জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘রমজানের আগে নানা সমস্যা থাকলেও শেষ পর্যন্ত পর্যাপ্ত পণ্য আমদানি হয়েছে। বাজার নিয়ে যাতে কেউ কারসাজি করতে না পারে সে জন্য জেলা প্রশাসকদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কার কাছে কী পরিমাণ পণ্য মজুত আছে, সে তথ্যও আছে আমাদের কাছে।’

 

https://samakal.com/whole-country/article/2303162823