১৮ মার্চ ২০২৩, শনিবার, ৫:৫৭

বৈচিত্র্য রক্ষায় দরকার ওয়াকওয়ে আধুনিক রাস্তা ও পানির প্লান্ট

নীল সমুদ্রের জলের ঢেউ, জলের ছোঁয়ায় নিজেকে ভেজাতে ও ভাসতে আর দ্বীপে চাঁদনি রাতের আলো-বাতাসে নিজেকে হারাতে দেশী-বিদেশী হাজার হাজার পর্যটক ও প্রকৃতিপ্রেমীরা ভিড় করেন সেন্টমার্টিনে। চাঁদনি রাতে দ্বীপের রূপ অবলীলায় দেখার মতো। চার দিকে নীল জল, সাগরের ডাকের শব্দ, পর্যটককে ঘরে থাকতে দেয় না। এই প্রবাল দ্বীপের এ প্রাপ্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যাতায়াতের পথগুলো চলাচলের উপযোগী না। বালুর রাস্তাগুলোর কারণে অটোরিকশাতে করে সাত-আট কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ছেঁড়া দ্বীপের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দরকার ওয়াকওয়ে, চার কিলোমিটারের মধ্যে কোনো স্কুল নাই, জেটিটাকে আরো বেশি উন্নত করা দরকার, রাস্তাগুলোকে উন্নত করা দরকার, তাহলে জীববৈচিত্র্য ও প্রবাল দ্বীপ, সাগর কন্যার রূপকে দেখতে পারে।

স্থানীয় পর্যটকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, অসম্ভব প্রিয় সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য দেখতে তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে। অনেকে বিদেশ থেকে দেশে এলে দু’দিনের জন্য সময় বের করে এই দ্বীপের রূপবৈচিত্র্যকে দেখার জন্য। তাদের অভিমত ও অভিযোগ, এই দ্বীপ ও আশপাশের দ্বীপগুলোও এখনো পর্যটকবান্ধব হয়ে উঠেনি। প্রশাসিক সমন্বয়ের অভাবে পর্যটকবান্ধব করে তোলা যায়নি দ্বীপকে। সম্প্রতি ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘ব্লু ইকোনমি অ্যান্ড ব্লু ট্যুরিজম’ বিষয়ে সফর ও কর্মশালায় অংশ নিতে সেন্টমার্টিনে গিয়ে এমনই অভিমত তাদের নিকট থেকে পাওয়া যায়।

প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন প্রায় আট বর্গ কিলোমিটার ও উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। এ দ্বীপের তিন দিকের ভিত শিলা, যা জোয়ারের সময় তলিয়ে যায় এবং ভাটার সময় জেগে ওঠে। এগুলোকে ধরলে এর আয়তন হবে ১০-১৫ বর্গ কিলোমিটার। এ দ্বীপটি উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় ৫.৬৩ কিলোমিটার লম্বা। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন টেকনাফ উপজেলার আওতাধীন ৬ নং ইউনিয়ন পরিষদ। এ ইউনিয়নের প্রশাসনিক কার্যক্রম টেকনাফ মডেল থানার আওতাধীন। এ ইউনিয়ন জাতীয় সংসদের ২৯৭ নং নির্বাচনী এলাকা কক্সবাজার-৪ এর অংশ। এ ইউনিয়নের গ্রামগুলো হলো- পূর্বপাড়া, পশ্চিমপাড়া, দক্ষিণপাড়া, উত্তরপাড়া, নজরুলপাড়া, মাঝেরপাড়া, ডেইলপাড়া, কোনারপাড়া, গলাচিপাপাড়া, আশ্রয়ণ কলোনি পাড়া। এই ইউনিয়নে বতর্মানে মোট জনসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। আর ভোটার প্রায় সাড়ে চার হাজার।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উপ-পরিচালক (উপসচিব) রাহনুমা সালাম খান বলেন, পাথর ও সমুদ্র দেখতেই পর্যটকরা সেন্টমার্টিনে আসে। কারণ এখানকার প্রধান আর্কষণ পাথর, সাথে সমুদ্র ভ্রমণ। এখানে সব জিনিসের দাম বেশি। তারপরও তারা আসে এখানে। পর্যটকদের একমাত্র চাওয়া হচ্ছে চমৎকার পরিবেশ ও উন্নত সেবা। তিনি বলেন, গ্রিন গার্মেন্ট করা সম্ভব হলে সমুদ্রের ক্ষতি কমিয়ে নিতে গ্রিন ট্যুরিজম দরকার। সমুদ্রের নিচে বিরাট সম্পদ রয়েছে, যা আমাদের অনেকের কাছে অজানা। ব্যাংকক, মালদ্বীপ শুধু ট্যুরিজমের ওপর ভিত্তি করে এগিয়ে গেছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, এই পর্যটন দ্বীপের জন্য দরকার ওয়াকওয়ে। তাহলে পর্যটকরা মনের মতো করে ঘুরে দ্বীপের রূপ সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে পারবেন। তিনি বলেন, এই দ্বীপের চার কিলোমিটারের মধ্যে কোনো স্কুল নাই। শিশুদের শিক্ষার আলো দিতে হলে তাদের আগামী দিনের যোগ্য নাগরিক করতে হলে অব্যশই এখানে একটি স্কুল দরকার। এখানে জাহাজ নোঙর করার যে জেটিটা আছে তাকে আরো আধুনিক করা উচিত। জেটির পন্টুনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এটা একবার মেরামত করা হয়েছে। তারপরও এটা ঝুঁকিপূর্ণ।

তিনি জানান, রাস্তাগুলোকে উন্নত করা দরকার, তাহলে পর্যটকরা জীববৈচিত্র্য ও প্রবাল দ্বীপ, সাগরকন্যার রূপ দেখতে পারে। এখানে খাবার পানির সমস্যা। লবণাক্ত পানি খাওয়ার উপযোগী না। তাই এখানে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করা হলে খাবার পানির সমস্যা মিটবে। তিনি জানান, এখানে ২১ জন ইউপির পরিচ্ছন্নতা কর্মী আছে। তাদের কাজের জন্য অর্থায়ন দিচ্ছে ইউএনডিপি।

সিনবাদ ইকো-রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট না করে সেন্টমার্টিন দ্বীপের চার দিকে ওয়াকওয়ে করলে ভালো হয়। পর্যটকরা ভালোভাবে হাঁটতে পারবেন। পুরো দ্বীপ ঘুরে দিনেই চলে যেতে পারবেন। তিনি বলেন, আমি পর্যটককে ভালোবাসি। তাই কাঠ-বাঁশ দিয়ে ইকো রিসোর্ট করার সিদ্ধান্ত নিই। তিনি বলেন, বিদেশী পর্যটকরা এ ধরনের ইকো রিসোর্ট পছন্দ করেন। তাই সরকারের সহযোগিতা পেলে আমরা অবশ্যই বিদেশী পর্যটকদেরও আনতে পারব। এখানে রাস্তা দরকার। পুরো দ্বীপটা পাথরের। তাই একটা গাছও কাটা হবে না। কারণ এখানকার গাছ কাটা মানে এই দ্বীপকে কাটা। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে। যেসব ব্যবসায়ী পরিবেশবান্ধব কাজ করতে চান। বিনিয়োগ করতে চান তাদের উৎসাহিত করা উচিত বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়ে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/735074