১৭ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার, ১১:৫৭

চিনির ওপর শুল্ক কমানোর প্রভাব নেই বাজারে

শুল্ক হ্রাসের কোনো প্রভাব নেই চিনির বাজারে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি আমদানির ওপর থেকে তিন হাজার টাকা এবং প্রতি টন পরিশোধিত চিনির ওপর থেকে ছয় হাজার টাকা শুল্ক প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করে। একই সাথে চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। আসন্ন রমজান মাসে চিনির মূল্য যাতে ভোক্তাদের কাছে সহনীয় থাকে তার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে এনবিআর এই পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

শুল্ক কমানোর পর আমদানি পর্যায়ে অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনির সামগ্রিক আমদানি ব্যয় যথাক্রমে প্রতি টনে সাড়ে ছয় হাজার টাকা ও ৯ হাজার টাকা কমে যাওয়ার কথা; কিন্তু এর কোনো প্রভাব নেই বাজারে। এখনো খোলা চিনি কেজি-প্রতি ১১২ থেকে ১১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। অন্য দিকে বাজারে প্যাকেটজাত চিনিরও ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। সুপার শপে প্যাকেটজাত যে চিনি বিক্রি হচ্ছে সেটির দামও কেজি প্রতি ১১২ টাকা করে রাখা হচ্ছে। বাজারে প্যাকেটজাত চিনি চাহিদামাফিক পাওয়া যাচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রতি কেজি খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম যথাক্রমে ১০৭ ও ১১২ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। উল্লেখ্য, উপমহাদেশে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশের চিনির দাম বেশি।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, চিনির খুচরা মূল্য এক মাস আগের তুলনায় ২ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং এক বছর আগের তুলনায় ৪৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেড়েছে।

বাংলাদেশে চিনি আমদানি করে সিটি, মেঘনা, এস আলম, ইগলু ও দেশবন্ধু গ্রুপ। আমদানিকারকরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে চিনি আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেয়া হলেও এর প্রভাব এখনই বাজারে পড়ছে না। আগে যে চিনি আমদানি করা হয়েছে, সেগুলো এখনো বিক্রি শেষ হয়নি। শুল্ক ছাড়ে এখন এলসি খুলে চিনি আমদানি করলে সেগুলো বাজারে আসতে আরো দুই মাস লাগতে পারে। তারপর খুচরা বাজারে দাম কমতে পারে। তারা বলেন, এনবিআর’র পক্ষ থেকে যে শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে তার প্রভাব রমজানের পরে পড়তে পারে।

এ দিকে বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী জানুয়ারিতে চিনির দাম ছিল প্রতি কেজি শূন্য দশমিক ৪২ ডলার, যা ফেব্রুয়ারিতে হয়েছে শূন্য দশমিক ৪৫ ডলার।

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ৩ দশমিক ২৮ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি এবং ১৩ হাজার ৯২৫ টন পরিশোধিত চিনি আমদানি করেছে।

উল্লেখ্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে তৈরি হওয়া ডলার ও জ্বালানি সঙ্কটের কারণে গত বছরের জুলাই-অগাস্ট থেকে চিনির বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। এ অবস্থায় গত সেপ্টেম্বরে সরকার প্রথমবারের মতো চিনির দাম বেঁধে দেয়। এরপর আরো তিন দফায় চিনির দাম বাড়ানো হয়। সঙ্কট কাটাতে বাজারে অভিযান চালানো হয়। এত কিছুর পরও বাজারে চিনির সঙ্কট কাটেনি। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বাড়তি দামেই ক্রেতাদের চিনি কিনতে হয়েছে। এই সময়ে প্যাকেটজাত সাদা চিনি কয়েকবার বাজার থেকে অনেকটা উধাও হয়ে যায়। এখন চিনির সেই সঙ্কট বাজারে রয়েই গেছে। আর এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন চিনির ক্রেতারা।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/734812