১৭ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার, ১১:৫৬

হজের খরচ কমছে না

হজযাত্রী নিবন্ধনের সময় আর বাড়ানো হবে না ঘোষণা দিয়েও কোটা পূরণ না হওয়ায় আরো পাঁচ দিন সময় বাড়াল ধর্ম মন্ত্রণালয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক ঘোষণায় আগামী ২১ মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হয়েছে। এ দিকে বিভিন্ন দিক থেকে হজের খরচ কমানোর দাবি জানানো হলেও এ ব্যাপারে কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে হজের নিবন্ধন শুরু হওয়ার পর তিন দফা সময় বাড়ানোর পরও এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটা পূরণ হয়নি। গত বুধবার এক বিবৃতিতে ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছিলো শেষবারের মতো সময় দেয়া হয়েছে। আর সময় বাড়বে না। কিন্তু গতকাল শেষ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোট পুরণ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত আরো পাঁচ দিন সময় বাড়াতে বাধ্য হয়েছে মন্ত্রণালয়।

গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এক লাখ সাত হাজার ৯২৫ জন নিবন্ধন করেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯ হাজার ৬৮২ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেন ৯৮ হাজার ২৪৩ জন। গতকালের বিজ্ঞপ্তিতে আবারো শেষবারের মতো বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে বলা হয়, এখন কোনো সিরিয়াল নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। সবার জন্যই উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে নিবন্ধনের সুযোগ। এমনকি যারা এখনো পাসপোর্ট করতে দিয়েছেন কিন্তু হাতে পাননি তারাও নিবন্ধন করতে পারবেন।

খরচ কমছে না : খরচ কমাতে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও এবার হজের প্যাকেজ মূল্য কমানো হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। গতকাল ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, হজ প্যাকেজের খরচ কমানোর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আপাতত কোনো সম্ভাবনাও নেই। তিনি আরো বলেন, আমরা এখনো আদালতের আদেশের অনুলিপি পাইনি। যদি নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয়, আমরা পরে আপনাদেরকে জানাব।

খরচ না কমানোর কারণ হিসেবে ডলারের দাম ও বিমান ভাড়া, বাসা ভাড়া ও মোয়াল্লেম ফি বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। এর আগে গত বুধবার (১৫ মার্চ) হাইকোর্টকেও এমনই তথ্য জানিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। যদিও বর্তমান প্যাকেজ মূল্যকে অমানবিক বলেছে হাইকোর্ট। গত মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) চলতি মৌসুমে ধর্ম মন্ত্রণালয় ঘোষিত হজ প্যাকেজকে অমানবিক মন্তব্য করে আদালত বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশে হজের জন্য সরকার আলাদা বাজেট রাখে; কিন্তু বাংলাদেশে তা নেই। হজের প্যাকেজ মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় আমরাই হজে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আর সেখানে সাধারণ মানুষ কিভাবে যাবে।’

এ দিকে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। তারা বিমান ভাড়া এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা থেকে কমিয়ে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা করার আহ্বান জানান। তবে কোনো কিছুতেই মন গলেনি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের।

এ ছাড়া হজের বিমান ভাড়া এক লাখ ৯৮ হাজার থেকে কমানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিউল আজিম। গতকাল তিনি বলেন, হজের ১৬টি খরচের খাত রয়েছে। তার মধ্যে বিমান ভাড়া মাত্র একটি খাত। এ ছাড়াও বিমান হজের দুই লাখ ১০ হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছিল। পরে সবার সাথে বৈঠক করে এক লাখ ৯৮ হাজারে নামানো হয়। সে সময় আমরা ডলারের এক্সচেঞ্জ রেট ১০৬ টাকা ধরে ভাড়া নির্ধারণ করেছি। এর মধ্যে যদি ডলারের দাম বাড়ে আমাদের ভাড়া আরো বেড়ে যাওয়ার কথা। তবে আমাদের এক লাখ ৯৮ হাজার টাকাই নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, হজ ফ্লাইটের পুরো ভাড়া বিমান নিচ্ছে না। এর মধ্যে ১২ হাজার টাকা ট্যাক্স রয়েছে। এগুলো বাদ দিয়ে টিকিটপ্রতি বিমান এক লাখ ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ৮২ হাজার টাকা পাবে। বিমানের হজ ভাড়া আদৌ কমানোর সুযোগ আছে কি না? জানতে চাইলে এমডি বলেন, আমরা যেই ভাড়া ধরেছি এটি সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেশনের মাধ্যমে করা হয়েছে। তা ছাড়া দুই লাখ ১০ হাজার টাকার ভাড়া কমিয়ে এক লাখ ৯৮ হাজার করা হয়েছে। আর কমানো যায় না। তবে একটা কথা, হজের ক্ষেত্রে যাত্রীদের জন্য সর্বোচ্চ কনসিডার করে বিমান। এটিই আমাদের নীতি। হজে আমরা মানুষকে সর্বোচ্চ সার্ভিস দেয়ার চেষ্টা করি।

এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্ধারণ করা হয়েছে কমপক্ষে ছয় লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। গত বছরের চেয়ে এবার উভয় প্যাকেজেই বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। এর সাথে পশু কোরবানির জন্য আরো ২৮ হাজার টাকা লাগবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/734840